“একদল ব্যক্তি জেল গেটের তালা ভেঙে দশটি সেলে থাকা আসামিদের বের করে নিয়ে যায়।”
Published : 06 Aug 2024, 05:33 PM
সাতক্ষীরার জেলা কারাগারে হামলার পর পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের কিছু অংশ মঙ্গলবার সকাল থেকে ফিরে আসতে শুরু করেছে। তবে কতজন ফিরেছেন সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবরে সোমবার বিকালে সাতক্ষীরা শহরে আনন্দ মিছিল করে আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে কয়েক হাজার মানুষ জেলা কারাগারেও হামলা চালায়।
তারা জেলা কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকে। এ সময় কারারক্ষীরা কারাগারের গেট খুলে দিলে তারা ভেতরে ঢুকে হাজতি ও কয়েদিদের সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।
সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের জেলার হাসনা জাহান বিথী বলেন, “সোমবার সন্ধ্যা সাতটা সাড়ে ৭টার দিকে একদল ব্যক্তি জেলখানায় হামলা চালায়। তারা জেল গেটের তালা ভেঙে দশটি সেলে থাকা আসামিদের বের করে নিয়ে যায়। ওইসব সেলে ৫৯৬ জন কয়েদি ও হাজতি ছিল। অনেক কয়েদি ও আসামি মঙ্গলবার সকাল থেকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করে।”
প্রত্যক্ষদর্শী ফারুক হোসেন বলেন, “কারাগারে এখনও স্বল্প মেয়াদের সাজা আছে এমন কিছু সংখ্যক কয়েদি রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর চাউর হওয়ার পর সাতক্ষীরা শহরে আনন্দ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলকারীরা।
“এ সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও যোগ দেয়। প্রথমে তারা শহরের খুলনা রোড মোড়ে জড়ো হয়। পরে মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় পুলিশ সুপারের বাস ভবনের গেটের গ্লাস ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।”
মোস্তাফিজুর রহমান নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পর্যায়ক্রমে সাতক্ষীরা-আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ আহমেদের বাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদের বাড়ি ও বাস টার্মিনালের পাশে দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার অফিস, তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনত কুমার, খলিলনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলু, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নানের বাড়ি, শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়াও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে শ্যামনগর থানা, সদর থানা ভবনের দোতলা ও ট্রাফিক অফিসের দোতালার গ্লাস ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ২৫ থেকে ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
স্থানীয় একটি পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আব্দুস সামাদ জানান, “সঙ্গবদ্ধ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার অফিস। হামলাকারীরা পেট্রোল দিয়ে সম্পাদকের কার্যালয়সহ দুটি কক্ষ জ্বালিয়ে দেয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভিন সেজুতির নতুন মাইক্রোবাস পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে ভস্মিভূত করে।”
তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও তালা নিউজের সম্পাদক প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলুর বাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। কলারোয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকারুজ্জামান জিল্লু জানান, সোমবার দলবদ্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় কলারোয়া প্রেসক্লাবে হামলা চালায়। সেখানে এখন কোন আসবাবপত্র আর নেই।
সাতক্ষীরার উপ-শহর কদমতলায় হামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক পত্রদূতের প্রতিনিধি সেলিম হোসেন। সাতক্ষীরার আরেক স্থানীয় সাংবাদিক বলছিলেন, তিনিসহ অনেক সাংবাদিক এখন আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে আছে।