দুই দিন ধরে টিসিবির পণ্যে পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি মশুরের ডাল পাওয়া গেলেও মিলছে না সয়াবিন তেল। তাই আগ্রহ হারিয়েছেন ক্রেতারাও।
Published : 10 Dec 2024, 11:54 PM
সাধারণত টিসিবির পণ্যর জন্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ক্রেতাদের। কিন্তু বগুড়ার ধুনট-কাহালুতে দুদিন ধরে দেখা গেল ভিন্নচিত্র। ক্রেতার অভাবে বিকাল পর্যন্ত বসে থেকেও অর্ধেক পণ্য বেঁচতে পারেননি টিসিবির ডিলাররা।
টিসিবির পণ্যের ক্রেতা শূন্য এমন পরিস্থিতি কারণ উঠে আসে ধুনটের ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বানিজান গ্রামের কল্পনার কথাতেই; এ নারী বলেন, “ত্যালের জন্যেই নেই, ত্যাল নাই, তাই নেই নাই। ত্যাল দিলে আবার নিবার জামু।”
অর্থাৎ দুই দিন ধরে টিসিবির পণ্যে পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি মশুরের ডাল পাওয়া গেলেও মিলছে না সয়াবিন তেল। তাই আগ্রহ হারিয়েছেন ক্রেতারাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, বগুড়ার ধুনটের ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য নিয়ে বসে আছেন চেয়ারম্যান, সচিব এবং ডিলারের লোকজন। ১৫-২০ মিনিট পরপর দু-একজন করে আসছেন। তেল নেই জেনে তাদের অনেকেও পণ্য না কিনে ফেরত যাচ্ছেন।
বিকাল ৪টা পর্যন্ত বসে থাকার পরও অর্ধেক পণ্য অবিক্রিত পড়েছিল। পরে আশেপাশের লোকদের ডেকে এনে তা বিতরণ করা হয়।
ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ইউনিয়নে ১৩ শত ১৭ জন টিসিবির কার্ডধারী। এর আগে দুই লিটার করে তেল দিত। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে লোকজন টিসিবির পণ্য নিত।
“এবারই টিসিবি তেল দেয়নি। তাই এবার লাইন নেই, গ্রামে গ্রামে খবর দেয়ার পরও লোক খুবই কম আসছে। দু-দিন যাবৎ দিলাম তারপরও লোক কম। পরে আশেপাশের লোকদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হলো।”
একই অবস্থা পাশের গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদেও, সেখানেও ভিড় ছিল না।
কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের জোগারপাড়ার বাসিন্দা আজগর আলী জানান, “ত্যাল নাই তাই টিসিবির মাল নিবার যাই না। ত্যালই দরকার। বাজারে অনেক দাম। কালাই চাউল ত্যালের সাথে নেই। বিদেশি কালই, বাজারের সাথে দামে খুব কম-বারা নাই।
তিনি অভিযোগ করেন, “চাউলতো খাওয়া যায় না। ব্যেচা দিই। এখন কেউ কিনেও না।”
একই অভিযোগ ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বানিজান গ্রামের কল্পনারও। তিনি বলেন, “পাচ কেজি চাল দ্যায় সেডা খায়া যায় না, গন্ধ করে। আগে ত্যালের সাথে চাউল দিলে ব্যেচা থুইয়া আচ্চি।”
এছাড়া বেঁচে যাওয়া চাল-ডাল পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজস্ব লোকদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ অনেকেরই।
কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তেল না দেয়ায় টিসিবির পণ্য নিতে খুব কম সংখ্যক লোক এসেছে। পরে বেঁচে যাওয়া মালামাল ভোটার আইডি কার্ড দেখে বিতরণ করা হয়েছে। আসলে তেলের জন্যই টিসিবির পণ্য নিতে আসে লোকজন। চাউলের মানও ভালো না।”
ধুনটের গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিজস্ব লোকদের মাঝে বেঁচে দেয়ার ঘটনা সঠিক নয়। পণ্য বিক্রির সময় ছিলাম পরিষদে, তবে আগে কি হয়েছে জানি না।
“মোট কার্ডধারী ১ হাজার ৫৩০ জন। তবে অধিকাংশই আসেনি তেল না থাকায়। পরে আশেপাশের লোকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে টিসিবির বগুড়া অফিসের উপ-পরিচালক সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তেল সংকট গোটা দেশ জুড়ে আমি কী করব। তবে কিছু উপজেলায় তেলসহ পণ্য দেওয়া হয়েছে। ”
‘সংকট কি আগামী মাসে কাটবে’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি নীতি-নির্ধারক নই, বলতে পারবো না।” এই বলে ফোন কেটে দিলেন তিনি।
আরও পড়ুন
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়ল ৮ টাকা