ঈদযাত্রায় টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া মহাসড়কে ভোগান্তির শঙ্কা

গোপালগঞ্জ থেকে টেকেরহাট যেতে আগে ১ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন সেখানে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2023, 09:07 AM
Updated : 18 April 2023, 09:07 AM

নির্মাণকাজের ধীর গতিতে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া জাতীয় মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের। এর মধ্যে যানবাহন চলাচল করলেই উড়ছে ধূলা-বালি।

ফলে ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মহাসড়কে চলাচলকারী গোপালগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চলাচলকারী লাখ লাখ মানুষের এবারের ঈদযাত্রা মোটেও সুখকর হবে না বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় গ্রামের প্রণব বিশ্বাস (৫০) বলেন, “মহাসড়কটির কাজ শুরু হয়েছে গত বছর। কিন্তু সড়কের নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। কোথাও সড়কের পিচ উঠে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে চলাচল করতে গেলেই প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-খাট দুর্ঘটনা।”

তিনি অভিযোগ করেন, “আট জন ঠিকাদার বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় এই সড়কের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছেন বলে জানতে পেরেছি।অনেক ঠিকাদার রাস্তা খনন করে ফেলে রেখেছেন।”

সদর উপজেলার কংশুর গ্রামের একলাছ কাজী (৫৫) বলেন, “এই সড়কের যে কোনো যানবাহনে উঠলেই প্রচণ্ড ঝাঁকি লাগে। এতে কোমর ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া ধূলা-বালিতে নাক-চোখ বন্ধ হয়ে আসে।

“এই সড়কে চলাচল করতে দুর্ভোগের কোনো শেষ নেই। তাই দ্রুত সড়কটির কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।”

মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা রমজান মিয়া (৫৮) বলেন, “এই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন জেলার লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। সড়কে বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই সড়কে ঈদযাত্রায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়বেন। যাত্রীদের সুরক্ষায় এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।”

গোপালগঞ্জের বাস চালক ইস্রাফিল বিশ্বাস (৫৪) বলেন, “গোপালগঞ্জ থেকে টেকেরহাটের দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। এই পথ যেতে আগে ১ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন সেখানে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগছে। সড়কের গর্ত ও ধূলা-বালিতে গাড়ি চালাতেও কষ্ট হচ্ছে।”

যাত্রীরা ছাড়াও বেহাল সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরাও। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী গ্রামের কৃষক কালাম সরদার (৬০) বলেন, সড়কের বেহাল দশায় কৃষিপণ্য পরিবহন করতে সমস্যা হচ্ছে। দেরিতে বাজারে পণ্য পৌঁছাচ্ছে। তাই বাজার ধরতে পারছি না। দাম কম পাচ্ছি। এতে প্রত্যাশিত লাভ হচ্ছে না।”

করপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম মিয়া (৪৫) বলেন, “গোপালগঞ্জে উৎপাদিত মৎস্য, পোল্ট্রি ও কৃষি পণ্য কিনে বাজারজাত করি। এখান থেকে যা লাভ হয়, তাই দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু রাস্তার সমস্যার কারণে পণ্য বাজারজাত করতে সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত এ সড়কটির কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি। “

সদর উপজেলার উলপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বিশ্বাস (৫৬) বলেন, “যে গতিতে সড়কের কাজ চলছে, তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় আছে। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করা একান্ত প্রয়োজন।”

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন জানান, ২০২০ সালের জুনে ৬১২ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ জেলার এই সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণের অনুমোদন দেয় একনেক।

কিন্তু, দরপত্র আহ্বানসহ নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এরপরই গত বছর শুরু হয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ। সড়কটির প্রশস্থতা ধরা হয়েছে ৩৪ ফুট।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করার আশা ব্যক্ত করেওই কর্মকর্তা বলেন, “সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে। ”