কুড়িগ্রামে শিক্ষককে আওয়ামী লীগ নেতার পিটুনি: ১৪ জনের নামে মামলা

মামলায় আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা এবং সহকারী শিক্ষকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2023, 02:00 PM
Updated : 21 Jan 2023, 02:00 PM

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় প্রধান শিক্ষক মো. নুরুন্নবীকে তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা, সহকারী শিক্ষকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।   

ঘটনার দুদিন পর শনিবার দুপুরে ভুক্তভোগী উপজেলার ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রোকনুজ্জমামান রোকন এবং বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আসাদুল ইসলামের (৪৭) নাম ‍উল্লেখ করে মামলাটি করেন বলে রৌমারী থানার ওসি রূপ কুমার সরকার জানান।

তিনি বলেন, এর আগে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান শিক্ষক একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। আজকের মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করে ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।

রোকন উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের পাখিউড়া গ্রামের এবং আসাদুল একই ইউনিয়নর ফুলকারচর গ্রামের বাসিন্দা।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের কাজে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে যান প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুর রশিদ। কাজ শেষে উপজেলা চত্বর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রোকনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে যায়। প্রথম তাকে উপজেলা চত্বরের পাশেই পলি পরিবহনের বাস কাউটার নিয়ে আটক রাখা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে প্রধান শিক্ষককে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রার কার্যালয়ে। সেখানে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন শিক্ষক নুরুন্নবী।

এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা রোকন হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর চড়াও হন। তিনি শিক্ষকের মুখমণ্ডলে এলোপাথাড়ি চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।

এটা দেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা চেয়ার থেকে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় তিনি রোকেন তার কক্ষ থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।

পরে আহত প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষককে মারধরের সিসি টিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষক সমাজের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়; অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা নিজের কার্যালয়ে বসে আছেন। পাশে বসে আছেন প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও আওয়ামী লীগ নেতা রোকনসহ কয়েক ব্যক্তি। তারা আলোচনা করছেন।

১টা ৫৫ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে আওয়ামী লীগ নেতা রোকন হঠাৎ করেই চেয়ার থেকে উঠে প্রধান শিক্ষকের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। ১টা ৫৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড থেকে ১টা ৫৫ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড পর্যন্ত তিনি প্রধান শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।

এ সময় উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা চেয়ার থেকে উঠে এসে রোকনকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। 

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী বলেন, “নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। রোকন আমার সহকর্মী আসাদুল ইসলামের কাছ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে আমার ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার করে আসছে।“

ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ বলেন, “বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের কাজে শিক্ষা অফিসে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। তাকে অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।”   

রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা বলেন, “এটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে অবগত করা হয়েছে। তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। পরের সপ্তাহে এসে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকন বলেছিলেন, “নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে ওই প্রধান শিক্ষক আমাকে দালাল বলেছেন। এ সময় আমি নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে তাকে দুটা থাপ্পর মেরেছি।”

আরও পড়ুন:

Also Read: কুড়িগ্রামে শিক্ষককে পেটালেন আওয়ামী লীগ নেতা