চলতি বছর শীত মৌসুমে কুয়েত সরকার খেমা বা তাঁবু তৈরির জন্য ১৮টি স্থানের অনুমোদন দিয়েছে।
Published : 18 Jan 2025, 02:13 PM
শহুরে পরিবেশ নেই, চারদিকে ধূধূ মরুভূমি। চলার পথে মরুর বুকে তাঁবু, খেমা বা ক্যাম্পের দিনের দৃশ্যপট দেখলে মনে হবে, সেখানে বোধহয় অসহায় মানুষেরা বসবাস করছে। আর রাতের দৃশ্যপট দেখলে মনে হবে যেনো ওখানে দূরবর্তী কোনো বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষদের বসতভিটে, তাদের বাড়িতে জ্বলছে বিদ্যুতের ছোট ছোট বাতি।
বলছিলাম, বিশ্বে মুদ্রার মানে শীর্ষে থাকা দেশের ধনী মানুষদের কথা। ১৭ হাজার ৮২০ বর্গকিলোমিটারের আয়তন, আরবের উত্তরাঞ্চলীয় পারস্য উপসাগরের প্রান্তে এর অবস্থান। বিশ্বে সবচেয়ে দামি মুদ্রায় প্রথম, মধ্যপ্রাচ্যে ধনী দেশ হিসেবে তৃতীয় ও বিশ্বে ধনী হিসেবে ৩১তম স্থান পাওয়া দেশের নাম কুয়েত।
পশ্চিম এশিয়ার পারস্য উপসাগরের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এদেশটির মোট জনসংখ্যা ১৫ লাখ ৩০ হাজার। কুয়েতি নাগরিকদের জীবনযাপন উন্নত বিশ্বের অন্য আট-দশটি দেশের মতোই। তবে ধনী আরব অঞ্চলের দেশগুলোর নাগরিকদের যেমন রয়েছে অঢেল ঐশ্বর্য, ঠিক তেমনই বিলাসবহুল জীবনযাত্রা। এক্ষেত্রে ‘দৌলতুল কুয়েত’ খ্যাত কুয়েতের নাগরিকদের জীবনযাপন অত্যাধুনিক আর উন্নতই শুধু নয়, অনেকটা বৈচিত্র্যময়ও বটে।
গ্রীষ্মকাল আরব অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো কুয়েতে বসবাসরত মানুষদের জন্য কষ্টের। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও বেশি তাপমাত্রার গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে জনজীবন। তবে অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে জনজীবনে প্রশান্তির বার্তা উঁকি দেয়। কারণ শীত তখন তার আগমনি বার্তা জানান দিয়ে থাকে।
কুয়েতি নাগরিকরা তাদের কষ্টের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুব মনে রাখার চেষ্টা করেন। প্রাচীন কুয়েতের নিদর্শন এখনো অনেক স্থানে দেখা যায়। অতীতে কুয়েতি নাগরিকরা মরুর বুকে তাঁবু বা সমুদ্রের কিনারে মাছ শিকারের সুবিধার্থে মোটামুটি জীবন চলে যাওয়ার মতো তাঁবুতে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। যদিও এখন তাদের সব শহরে আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা আর আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধায় ভরপুর বিলাসবহুল জীবনযাপন।
বাংলায় তাঁবু, ইংরেজিতে ক্যাম্প আরবিতে খেমা। কুয়েতের অতীত ইতিহাসের সঙ্গে এটি অঙ্গাঙ্গি জড়িত। মরুভূমিতে তাঁবু বা খেমা তৈরি করা স্থানীয় নাগরিকদের খুব পছন্দের। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই চর্চাটি বর্তমান কুয়েতিদের চাহিদা অনুসারে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।
কুয়েতে খেমা মৌসুম হচ্ছে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই মাসগুলোতে স্থানীয় নাগরিকদের পরিবারগুলো সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন তাঁবু গ্রাউন্ডে তাদের তাঁবু স্থাপন করে থাকেন। সেসব তাঁবু বা খেমাতে শীতকালে কুয়েতিদের পরিবারগুলো একত্রিত হওয়ার জন্য একটি অস্থায়ী জায়গা হিসেবে পরিচিত। সেখানে তারা রাত্রিযাপনের পাশাপাশি গ্রিলিং, কোয়াড বাইক, এটিভি চালানো এবং আরও অনেক কিছু করে থাকেন।
নান্দনিক সেসব তাঁবু বা খেমাতে ঠান্ডা হলে উষ্ণ, গরম হলে শীতল এবং বাতাসযুক্ত এই তাঁবুগুলো প্রচণ্ড রোদ থেকে সুরক্ষার পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টি থেকেও সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
চলতি বছর শীত মৌসুমে কুয়েত সরকার খেমা স্থাপনের জন্য ১৮টি স্থানের অনুমোদন দিয়েছে। যার মধ্যে ১০টি জাহরা গভর্নরেটে এবং ৮টি আহমাদি গভর্নরেটে। কুয়েতের সুলাইবিয়া সড়কের পাশ ঘেঁষে অগণিত তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় সেগুলো দেখা যায়।
বিশেষ করে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকে খেমা অধ্যুষিত সড়কগুলো।
কুয়েতি নাগরিক আব্দুল্লাহ আল-ওতাইবি বলেন, “এটি আমাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। অতীতে আমাদের পূর্বপুরুষ এমন পরিবেশে অভ্যস্ত ছিলেন। এছাড়াও কুয়েত এমন একটি দেশ যেখানে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চলে যায়। অন্যদিকে, শীতকাল দেরিতে আসে। অল্প কিছুদিন রাতে ঠান্ডা অনুভব হয়ে থাকে। এই কারণে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে মরুভূমিতে যাই ঠান্ডা অনুভব করতে।”
কুয়েতের জনসংখ্যা ৪.৮২ মিলিয়ন, যার মধ্যে ১.৫৩ মিলিয়ন কুয়েতি নাগরিক এবং বাকি ৩.২৯ মিলিয়ন ১০০টিরও বেশি দেশের বিদেশি নাগরিক। কুয়েতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিদেশি বংশোদ্ভূত জনসংখ্যা রয়েছে। দেশটিতে প্রায় তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। শীত মৌসুমে কুয়েতিদের তাঁবু স্থাপনে অনেক বাংলাদেশিও কাজ করেন।