‘রোহিঙ্গা শিশুরা রয়েছে খুব নাজুক অবস্থায়’

মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে শিশুরা বেশি ‘নাজুক অবস্থায়’ আছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2018, 10:32 AM
Updated : 10 July 2018, 10:32 AM

স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘শিশু ও সশস্ত্র সংঘাত: আজ শিশুদের সুরক্ষা দিন, বন্ধ হবে আগামীদিনের সংঘাত’ বিষয়ক এক মুক্ত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

নব্বইটিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণে এ সভায় রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে যার প্রায় ৫৮ ভাগ শিশু। এ পর্যন্ত এতিম শিশু পাওয়া গেছে ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন। মা-বাবা দুজনকেই হারিয়েছে এমন শিশু রয়েছে ৭ হাজার ৭৭১ জন। পিতা-মাতাহীন এসব শিশুরা আজ মানবপাচার, যৌন নির্যাতন ও বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে খুব নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

“আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ৬০ শিশু। এরমধ্যে কিছু জন্ম নিয়েছে যৌন সহিংসতার মতো পুরনো যুদ্ধাস্ত্রের শিকার হয়ে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় এসব শিশুদের কথা উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ।”

মানবিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আশ্রিত রোহিঙ্গা শিশুদের টিকা দেওয়া, পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, মনো-সামাজিক সহযোগিতা ও বিনোদনের সুবিধাসহ ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে জানান মাসুদ বিন মোমেন।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাদের শিশুদের উপর যে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে তা ‘কল্পনায় আনাও দুঃসাধ্য’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “হতবিহ্বল, অসহায় এক রোহিঙ্গা শিশুকে কোলে নিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাবয়বে যে বেদনাক্লিষ্ট ও ক্ষতবিক্ষত দৃশ্য ফুটে উঠেছিল সেই ছবি পরিণত হয়েছে বিশ্বে আইকনে। আমরা মিয়ানমারের নেতৃত্বের কাছে এটাই প্রত্যাশা করবো তারা যেন সেই কাজটিই করে যাতে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার এমন ভয়াবাহ চিত্র বিশ্ববাসীকে আর দেখতে না হয়।”

সহিংসতার শিকার হয়ে কক্সবাজারে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সম্প্রতি সরাসরি কথা বলার পর মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি সাংবাদিকদের কাছে যে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তা উল্লেখ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি।

ইয়াংহি লিকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে পড়লাম যখন একজন নারী আমাকে বললেন, তার ১২ বছরের ছেলেটি পারিবারিক মৎস্য হ্যাচারি দেখতে গেলে তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী। আর এ ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বলেছে ভেরিফিকেশন কার্ড ছাড়া তারা কোথাও যেতে পারবে না। শিশুদের এমন শোচনীয়, নৃশংস হত্যার নজির আর হতে পারে না।”

জাতিসংঘের শিশু ও সশস্ত্র-সংঘাত বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধিকে তার প্রতিবেদনে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে সুপারিশমালা তুলে ধরার আহ্বান জানান মাসুদ বিন মোমেন।

সভায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও লিশটেনস্টাইনসহ জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্র মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর সংঘটিত সহিংসতা বিশেষ করে নারী ও শিশুদের হত্যা, ধর্ষণসহ যৌন সহিংসতার কথা তুলে ধরেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!