দেশকে ‘এগিয়ে নেওয়ার’ প্রত্যয়ে স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকী এবং জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাস।
দিবসটি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার দিনব্যাপী তাদের আয়োজনের মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া, বাণী পাঠ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, কেক কাটা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এসব কর্মসূচি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের কাছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে দূতাবাসগুলো। তারই কিছু এখানে সংকলিত হলো-
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, নিউ ইয়র্ক
দিবসটি উপলক্ষ্যে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত। প্রধান অতিথি ছিলেন সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও রাষ্ট্রদূত ডেনিস ফ্রান্সিস।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে তার ভাষণে অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার ও পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকিমুক্ত বিশ্ব গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের গল্পটা অসাধারণ শক্তি, অধ্যবসায় ও দৃঢ়তার। একটি সুশিক্ষিত কর্মশক্তি এবং কর্মোদ্যম যুবকদের নিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।”
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউ ইয়র্ক
দিবসটি উপলক্ষ্যে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেল, কূটনীতিক, ব্রঙ্কস বরো প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের প্রতিনিধি, গ্রেটার নিউ ইয়র্ক চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মার্ক জেফ, নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্য অংশীদার। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে নতুন অধ্যায় শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সম্মাননাপ্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লিয়ার লেভিন, মেয়র অফিসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিশনার দিলীপ চৌহান ও বিচারপতি সোমা সাইদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম।
ব্রাজিল
দিবসটি উপলক্ষ্যে পালিত কর্মসূচির শুরুতে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দেন। রাষ্ট্রদূত নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৭১-এর গণহত্যা বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জোরালো জনমত তৈরি এবং ভবিষ্যতে এমন নির্মম গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
কানাডা
দিবসের শুরুতেই বাংলাদেশ হাউসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে টরন্টোতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল। কনসাল জেনারেল মো. ফারুক হোসেন তার বক্তব্যে জাতির পিতাকে স্মরণ করে উপস্থিত সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে আগামী ১৮ এপ্রিল টরন্টোর চেলসি হোটেনে সংবর্ধনা সভা আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি। এতে অংশ নেবেন বিদেশি কূটনীতিক, অন্টারিও সরকারের কর্মকর্তা, টরন্টোতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি, নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও ছাত্র-ছাত্রীরা।
ভিয়েতনাম
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাজধানী হ্যানয়ে এক হোটেলে কূটনৈতিক অভ্যর্থনার আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডু হাং ভিয়েত। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ লুৎফর রহমান।
মিয়ানমার
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ উপজীব্য করে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস। আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত মো. মনোয়ার হোসেন ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান।
অস্ট্রিয়া
দেশটির রাজধানী ভিয়েনায় রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়ামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস। বক্তারা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার বিভিন্ন পর্যায়ের আন্দোলন-সংগ্রাম, পরবর্তীতে ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব, স্বাধীনতাত্তোর দেশ পুনর্গঠন, জনসেবায় বঙ্গবন্ধুর অবদান ও তার আত্মত্যাগ সম্পর্কে আলোচনা করেন।
ডেনমার্ক
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে রাষ্ট্রদূত এ. কে. এম. শহীদুল করিম জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত বলেন, “প্রবাসীরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম অংশীদার। তাদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম বাড়ছে।”
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমাদের প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি জানান, আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে। দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ মিযানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং লেবার কাউন্সেলর (লোকাল) লৎফুন নাহার নাজিমের পরিচালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ আবুধাবি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল, বাংলাদেশ সমিতি ইউএই সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, জায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুল হক খন্দকার, নাছির উদ্দিন তালুকদার, শওকত আকবর, ইজাজ কলিম, আশীষ বডুয়া, কামরুজ্জমান, মঈন উদ্দিন, জাকের হোসেন জসিম, মাহাবুব খন্দকার ও আক্তার হোসেন রাজু। এদিকে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া থেকে আমাদের প্রতিনিধি রফিক আহমদ খান জানান, কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন হাই কমিশনার মো. শামীম আহসান।
আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণের স্বপ্নকে অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সমৃদ্ধ ও জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। এজন্য তিনি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। তার কার্যকর পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ একটি গতিশীল অর্থনীতি ও সম্ভাবনার দেশে পরিণত হয়েছে।”
গ্রিস
গ্রিস থেকে থেকে মতিউর রহমান মুন্না জানান, সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা করেন রাষ্ট্রদূত আসুদ আহ্মদ। স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এথেন্সের একটি হোটেলে কূটনৈতিক অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়।
দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব রাবেয়া বেগমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্রিক সাংসদ ও বাংলাদেশ-গ্রিস পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়োরগস স্ট্যামাটিস, দূতাবাসের মিনিস্টার মোহাম্মদ খালেদ ও কাউন্সেলর (শ্রম) বিশ্বজিৎ কুমার পাল।