নতুন কর্মসূচি দিল গণতন্ত্র মঞ্চ

আগামী ১১ মার্চ ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2023, 08:54 AM
Updated : 4 March 2023, 08:54 AM

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১১ মার্চ সব বিভাগীয় শহরে মানবন্ধন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “গণতন্ত্র মঞ্চের পরবর্তী কর্মসূচি হবে আগামী ১১ মার্চ ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগে মানবন্ধন। এই মঞ্চের সকল শরিক সংগঠনগুলোকে অনুরোধ করব, আপনারা বিভিন্ন বিভাগের নেতাদের জানিয়ে দিন ঢাকাসহ বিভাগীয় মানবন্ধন সফল করার জন্য।”

গণতন্ত্র মঞ্চকে ‘আরো শক্তিশালী’ করে মাঠে নামতে দলগুলোকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো জন মঞ্চের নেতাকর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় পর্যন্ত তারা পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো শনিবার সারাদেশে থানায় থানায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে।

কর্মসূচিতে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, “সরকার অনেক খেলাধুলা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরকার সংলাপ নিয়ে কথাবার্তা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা এর আগেও বলেছি, সংলাপ হতে পারে একটি মাত্র শর্তে, সেটা হল, আপনারা কীভাবে পদত্যাগ করবেন এবং অন্তঃবর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। আগে আপনাদের ঘোষণা করতে হবে নির্বাচনের পূর্বে আপনারা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন।

“কারণ আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা গণতন্ত্র মঞ্চ কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সরকার পদত্যাগের ঘোষণা আগে দিলে তখন আমরা বিবেচনা করে দেখব সংলাপে যাবে কি যাব না।”

‘যতক্ষণ না যাচ্ছেন, কোনো কথাই বিশ্বাস করছি না’

পদযাত্রার কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “তথাকথিত সংলাপের কথা-বার্তা বাজারে ছাড়ছেন। কার সাথে সংলাপ? যিনি আমাদের ডেকে নিয়ে সংলাপে (২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে) বললেন, তার স্বর্গীয় পিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, তার কসম খেয়ে বললেন- আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না। আমি বলছি আপনারা নির্বাচনে আসেন। আমরা এই নির্বাচন সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য, সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত করব।

“সেই নির্বাচনের ফলাফল আপনারা (জনগণ) দেখেছেন। অতএব যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি (প্রধানমন্ত্রী) না যাচ্ছেন, তার এই সমস্ত কোনো কথাই বিশ্বাস করছি না। যদি সংলাপ করতে চান আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। তারপরে আমাদের কথা আছে।”

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে আন্দোলনের কথা জানিয়ে মান্না বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলি, আমরা এখন পর্যন্ত গণতান্ত্রিকমূল্যবোধ মেনে আন্দোলন করছি। কিন্তু এই সময়েরও একটা সীমা আছে। সেই সীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা যদি থাকে, তাহলে দরকার লাগে, গলায় গামছা বেঁধে যাতে আমাদের দাবি আদায় করতে পারি, আমরা সেই চেষ্টা করব।”

বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে কর্মসূচিতে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “আমাদের কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নাম করে তারা দেশে একটা অশান্তি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। এই শান্তি সমাবেশ কার্যত একটা ‘নার্ভাস সমাবেশে’ পর্যবসিত হয়েছে। কখন কী হয়? শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে ওরা ভয় পাচ্ছে।

“আমাদের গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলোর ওপর হামলা করছে। আওয়ামী লীগ প্রমাণ করছে তারা গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল থেকে এখন পুরোপুরি একটা সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দলে তারা পর্যবসিত হয়েছে। সন্ত্রাস না করে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবৈধ ক্ষমতায় আজকে টিকে থাকা সম্ভব না।সেজন্য তারা প্রতিনিয়ত বিরোধীদলের ওপর হামলা করছে, মামলা করছে, গ্রেপ্তার করছে।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে…, কীভাবে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যায় তার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং এই দ্রব্যমূল্য যারা বাড়াচ্ছে কীভাবে আরো সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো যায়, আরো টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায়, হাজার হাজার টাকা লুট করা যায়, আর সেখান থেকে কীভাবে ভাগ বসানো যায় সেটাতে ব্যস্ত এই মন্ত্রী-আমলাসহ সরকারের সমস্ত লোকেরা।

“এভাবে তারা জনগণকে জীবনকে আরো দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে তাদের জীবনের নাভিশ্বাস তুলে কীভাবে টাকা কামিয়ে নেওয়া যায় আর বিদেশে পাচার করা যায় তার ব্যবস্থা করছে। কারণ এদের কোনো চিন্তা নাই। এরা মনে করছে দ্রব্যমূল্য যতই বাড়ুক আমাদের হাতে দুইটা অস্ত্র আছে সেই অস্ত্র দিয়ে আমরা ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখব।”

ভাসানী অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সামতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানসহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।