সরকারকে যেতে হবে, তারপর অন্তর্বতী সরকারের প্রশ্ন: মান্না

“আমাদের বক্তব্য, এই সরকারকেই (সরে) যেতে হবে। তারপরে নতুন করে একটা অন্তর্বতী সরকারের প্রশ্ন,” বলেন মান্না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 10:51 AM
Updated : 17 May 2023, 10:51 AM

নির্বাচনকালীন সরকারের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

ঢাকার তোপখানা রোডে বুধবার গণতন্ত্র মঞ্চের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য, এই সরকারকেই (সরে) যেতে হবে। তারপরে নতুন করে একটা অন্তর্বতী সরকারের প্রশ্ন। বাকি যেগুলো ওরা বলেছে, ওইগুলো তো মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, জাল বিছানোর জন্য। ওইগুলো আমরা খুব কেয়ার করছি না।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, “উনি (শেখ হাসিনা) কোনো অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব দেননি। উনি নিজে ক্ষমতায় থাকবেন… প্রথম দিকে বলেছিলেন, তার সেক্রেটারিসহ অন্যান্যদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জায়গা দেবেন। পরে যখন বিএনপি মূল অপজিশন বলল যে, আমরা এটাতে যাবই না। তখন বললেন যে, ওদের কেন নেব?

“তখন তারা (সরকার) বলছে, ওদের (বিএনপি) নেব না, যারা সংসদে আছে তাদেরকে দিয়ে...। সংসদে যারা আছে, তারা তো তাদের সাথে আছেই। তারা কী করতে পারে সেটা তারা জানেন।”

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ের সংহতি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে মান্না ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ ও পদযাত্রার পাঁচ দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।

মান্না বলেন, “আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি, এটা সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে সরকার পতনের লক্ষ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ। চূড়ান্ত যে কর্মসূচি, সেটা চূড়ান্ত সময় আসবে।”

সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে নির্বাচনকালীন সরকার এবং বিএনপির প্রসঙ্গে কথা বলেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা পোষণ করে নির্বাচনকালীন সময়ে তারা সরকারে আসতে চায়, সেটা আমাদের মধ্যে আছে।

“এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমরা আহ্বান করেছিলাম, তারা তো আসেনি। এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে, কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই।”

প্রধানমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের প্রসঙ্গে বুধবার গণতন্ত্র মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তার নেতৃত্বে সংসদে থাকা তার রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের সরকার বর্তমান কর্তৃত্ববাদী নিপীড়নমূলক সরকারের সম্প্রসারণ।

“২০১৪ ও ২০১৮ সালের তামাশাপূর্ণ জালিয়াতির নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যূনতম কোনো অবকাশ নেই। সেই কারণে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্তি ও অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি সরকার ও শাসন্যবস্থা পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট ১৪ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ ধারায় বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের সাথে গণসংগ্রাম জোরদার ও বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি।”

ঢাকায় অবস্থানরত ছয় দেশের কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই ঘটনা কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অবিশ্বাস ও অস্থিরতা যে তৈরি করবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। সরকারের এসব আচরণ থেকে বোঝা যায় যে, বিশাল বহর নিয়ে তিন দেশে প্রধানমন্ত্রীর ১৫ দিনের সফর দেশ ও সরকারের জন্য তেমন কিছু অর্জিত হয়নি, অর্থাৎ ক্ষমতায় থেকে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে কথিত এসব উন্নয়ন অংশীদারদেরকে তিনি ম্যানেজ করতে পারেননি।

“গত ১৫ মে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ও বিবিসিতে দেওয়া তার সাক্ষাৎকার এবং সরকারের পদক্ষেপই তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এসব তৎপরতায় সরকারের রাগ ও ক্ষোভেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। হতাশা ও ক্ষোভ থেকে নেওয়া এসব বক্তব্য ও পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিসন্দেহে বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করবে, যার সম্ভাব্য মাশুল দিতে হবে দেশ ও দেশের জনগণকে।”

সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার নানা কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছি। এই সরকার পতনের লক্ষ্যে জনগণের যে একটা অভ্যুত্থান সেটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঘটবে। দিনক্ষণ ঠিক-ঠাক করে আন্দোলনের বিষয়টি আমরা এভাবে বিশ্বাস করি না।”

বিরোধীদলের আন্দোলনের প্রস্তুতিতেই ইতোমধ্যে ‘সরকার ভয় পেয়েছে’ মন্তব্য করে সাকি বলেন, “তারা ইতোমধ্যে প্রস্তুাব দিয়েছে যে, নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে তারা নিতে চায়। তার মানে হচ্ছে যে, তারা আগে-ভাগে একটা আপসের দিকে এগোচ্ছে। আন্দোলনের গতি যত বাড়বে আমরা দেখবে যে, সুর বিভিন্নভাবে বদলাচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না। তাদেরকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে, জনগণ আর তাদেরকে ওই ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতে ভোট করতে দেবে না।”

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ইমরান ইমন, সাকী আনোয়ার, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, মোশাররফ হোসেন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিরুর রহমান রিজু, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নি শিখা জামালী, আকবর খান প্রমূখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।