বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো আছে: তথ্যমন্ত্রী

হাছান মাহমুদ বলেন, “প্রায় সব দেশই রিজার্ভের সঞ্চয় ভেঙে চলছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ আছে।”

বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

বিভিন্ন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতির হার ও জ্বালানি তেল ব্যবহারের তথ্যের তুলনা টেনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ‘ভালো আছে’।

বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ডিআরইউ সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ ও সদস্য লেখক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিএনপি আমলের শেষে ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের কম, যা শেখ হাসিনার আমলে ১২ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পারচেজিং পাওয়ার প্যারাইটি বা পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

“করোনা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশই রিজার্ভের সঞ্চয় ভেঙে চলছে। একটি দেশে ৩ মাসের আমাদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকাই যথেষ্ট, সেখানে আমাদের ৫ মাসের রিজার্ভ রয়েছে। সুতরাং রিজার্ভ নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “যে যুক্তরাষ্ট্র রিজার্ভ জ্বালানি কখনো ব্যবহার করে না, সবসময় আমদানির জ্বালানি ব্যবহার করে, জ্বালানি কেনার পয়সা যথেষ্ট না থাকার কারণে সেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের রিজার্ভ জ্বালানি খরচ করছে। দিজ আর ডকুমেন্টেড অ্যান্ড পাবলিশড এভরিহোয়্যার, ইন্টারনেটে খুঁজলে আপনারাও এ তথ্যগুলো পাবেন।

“সুতরাং এই বিশ্ব প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন, তাতে অনেক দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “পৃথিবীর পঞ্চম অর্থনীতি ভারতে রিজার্ভের পরিমাণ গত দুই বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন। পাকিস্তান রিজার্ভ ভেঙে খাচ্ছে। মাত্র ৫ লাখ মানুষের দেশ ভুটানের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বলে আমরা জানতাম, সেই ভুটান এবং এমনকি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রিজার্ভ ভেঙে খাচ্ছে।”

অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনও তত বাড়েনি মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি তুরস্ক থেকে পরশু দিন এসেছি, সেখানে ৮০% মূল্যস্ফীতি, পাকিস্তানে ৩০% মূল্যস্ফীতি, যুক্তরাষ্ট্রে ১০% এর বেশি, যুক্তরাজ্যে খাদ্যের ক্ষেত্রে প্রায় ২০% মূল্যস্ফীতি, আমাদের দেশে সেই পরিস্থিতি হয়নি, কয়েক মাস আগের তুলনায় একটু বেড়েছে।

“যেভাবে অনেকে হৈ হৈ রৈ রৈ রব তুলে এই বিশ্ব পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তখন আমি সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ জানাব, মানুষের সামনে বিশ্ব পরিস্থিতিটা উপস্থাপনের জন্য। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে।”

গুজব ছড়ানোর প্রসঙ্গ ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, “পৃথিবীতে কোনো সংকট তৈরি হলে, দেশে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক তৈরি হলে একটি পক্ষ এই হবে, সেই হবে বলে মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের অপচেষ্টা চালায়। করোনার শুরুতে তারা বললো ‘লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, রাস্তায় মানুষের লাশ পড়ে থাকবে’। স্রষ্টার কৃপায় একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি।

“আবার যখন সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনার টিকা আনা হলো, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে গুজব রটানো হলো যে এই ভারতীয় টিকায় কাজ হবে না, এটি গ্রহণ করবেন না। এটি কি একটি দায়িত্বশীল বিরোধী দল বলতে পারে! সেটির সমালোচনা তো দেখি নাই। পরে তারাই আবার কেউ গোপনে, কেউ প্রকাশ্যে টিকা নিলেন।

“তারা লজ্জায় এখনো সেতুতে ওঠেননি, নাকি রাতের বেলায় গোপনে গেছেন সেটি খবর নিতে হবে। সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি দায়িত্বহীনতা, জনগণকে বিভ্রান্ত করা, গুজব রটনারও তো সমালোচনা হওয়া প্রয়োজন।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাছান মাহমুদ বলেন, “যারা সাংবাদিক, যারা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেন, যারা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করেন, সমাজের দর্পণকে সচল রাখার জন্য কাজ করেন, তাদের এই বিষয়গুলো জনগণের সামনে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। কারণ, আপনারা জাতির বিবেক হিসেবে কাজ করেন, সমাজকে সঠিক তথ্য দেন, সমাজকে সঠিকখাতে প্রবাহিত করেন।”

ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।