সংসদ উপনেতা হয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা মতিয়া চৌধুরীর

এক সময়ের এই বাম নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2023, 01:34 PM
Updated : 13 Jan 2023, 01:34 PM

জাতীয় সংসদের উপনেতা মনোনীত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক মতিয়া চৌধুরী।

শুক্রবার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেছেন, “আমরা যখন রাজনীতিতে পা রেখেছি, তখন আমাদের সমস্ত ভুবন জুড়ে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সারা পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধুর নাম স্মরণীয়, বরণীয় এবং শ্রদ্ধার জায়গায় রাখে।

“সংসদীয় গণতন্ত্রের যে নর্মস আছে, সেগুলো বজায় রেখে…মূল তো হচ্ছে আমাদের নেত্রী সংসদের চিফ- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; আমি তার কাছে থাকব, পাশে থাকব।"

প্রবীণ এই রাজনীতিককে সংসদ উপনেতার পদে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত হয় বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায়। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদ উপনেতার পদটি শূন্য হয়েছিল। 

ক্ষমতাসীন দলের উপনেতা মনোনয়নের বিষয়টি এখন স্পিকারকে জানানো হবে। স্পিকার তখন মতিয়া চৌধুরীকে উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। পরে সংসদ সচিবালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সংসদ উপনেতা মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে থাকেন।

Also Read: সংসদ উপনেতা পদে মতিয়া চৌধুরী চূড়ান্ত

সংসদ থেকে গত মাসে পদত্যাগ করা বিএনপি নেতাদের বিষয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “সংসদে আরও কয়েকজন আছেন- যারা আওয়ামী লীগ করেন না; কিন্তু সংসদে আছেন। জাতীয় পার্টি- এমনকি দু-একজন স্বতন্ত্র এমপিও আছেন।

“যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের সংখ্যা খুব বেশি না। তারা সংসদীয় গণতন্ত্রের ওপরে খুব একটা আস্থাশীল বলে মনে হয় না।”

বিএনপির পদত্যাগী সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া বলেন, “একাত্তরের পরে যে পার্লামেন্ট কন্টিনিউ করেছে, সেখানে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত একা হয়েও যে ভূমিকা রেখেছেন এবং যতক্ষণ উনি কথা বলতে চাইতেন, বঙ্গবন্ধু কিন্তু তাকে সেই কথা বলতে দিয়েছেন। তাহলে উনারা (বিএনপির এমপিরা) পারতেন না জনগণের বক্তব্য পৌঁছে দিতে?

“জনগণের ভোট নিয়ে, জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে এভাবে পদত্যাগ করাটা কোনো সমুচিত কাজ নয়। উনারা চলে যাওয়ার আগে কি যার যার নির্বাচনী এলাকার ম্যান্ডেট নিয়েছেন যে- আমরা পদত্যাগ করছি?”

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে নারী হিসেবে প্রথম কোনো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে আসা মতিয়া গত শতকের ষাটের দশকে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি তখন ডাকসুর জিএসের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

এক সময়ের বাম এই নেতা পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজপথের লড়াইয়ে থাকেন সামনের কাতারে, হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।

জরুরি অবস্থার সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা যখন দলে ‘সংস্কারের’ দাবি তোলেন, তখন যে কয়েকজন নেতা শেখ হাসিনার পাশে শক্তভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের একজন মতিয়া।

‘সংস্কারপন্থি’দের দলের নীতি-নির্ধারণী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর মতিয়া চৌধুরীর উপর শেখ হাসিনার আস্থা দেখা গেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে।

সরকার গঠনের পরপরই ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের পরপরই যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসে গিয়েছিলেন, সহকর্মী হারিয়ে বিক্ষুব্ধ সেনাদের মাঝে যাওয়ার সেই পদক্ষেপে তার সঙ্গী হয়েছিলেন রাজপথের সাহসী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মতিয়া।

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দল ও সরকার আলাদা করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মতিয়া চৌধুরীকে সরকারে না রাখলেও তার প্রতি আস্থার কমিতি হয়নি শেখ হাসিনার। সম্প্রতি ঢাকার মেট্রোরেল উদ্বোধনে মতিয়াকে সঙ্গী করেছিলেন শেখ হাসিনা, মেট্রো ট্রেনের প্রথম যাত্রায় তাকে বসিয়েছিলেন নিজের ও বোন শেখ রেহানার মাঝে।

৮১ বছর বয়সী মতিয়া শেরপুর-২ (নালিতাবাড়ী-নকলা) আসন থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। তার স্বামী খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমান ২০০৮ সালে মারা যান।