দেশে গণতন্ত্র কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “পৃথিবীতে গণতন্ত্র নিয়ে যে যত কথাই বলুক, গণতন্ত্র কোথাও পারফেক্ট নয়। গণতন্ত্রের ত্রুটি আছে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক বড় বড় শক্তিগুলো, যারা নিজেদেরকে গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রবক্তা ভাবেন, তাদের গণতন্ত্রেও অনেক ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়।
“আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে আমরা অনেকটা ত্রুটিমুক্ত করেছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
এর আগে শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও দলের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ফুল দিয়ে নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিষয়ক আব্দুস সবুর, সংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, উপ দপ্তর সায়েম খান, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা যেটা সবার সামনেই পরিষ্কার। দেশের গণতন্ত্র কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে। যে চ্যালেঞ্জটা এসেছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং জঙ্গিবাদী শক্তি, গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি, অতীতে যারা গণতন্ত্রে আঘাত এনেছে, তাদের কাছ থেকে।”
তিনি বলেন, “নূর হোসেনের রক্ত গণতন্ত্রকে শৃংখলমুক্ত করার লড়াইয়ে এক নতুন দিগন্ত। এটা ছিল অনেকটা টার্নিং পয়েন্টের মত। অনেক বাধাবিপত্তি চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা আমাদের দেশে অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্রকে শিকলমুক্ত করতে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে আপসহীন সংগ্রামের ভূমিকা পালন করেছিলেন আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।”
বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন চোরাগোপ্তা আন্দোলন চালিয়ে তারা বর্তমান সরকারকে, শেখ হাসিনাকে হটাতে চায়, নির্বাচন বানচাল করতে চায়, পণ্ড করতে চায়। এটাই হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধীদলের আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য।
“তারাই (বিএনপি) আজকে গণতন্ত্রের নামে আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনের ব্যর্থতায় এক পর্যায়ে অগ্নিসন্ত্রাস, সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন আগুন দিয়ে বাস পোড়ানো, পরিবহন পোড়ানো, আগুন সন্ত্রাস, সেই ২০১৩, ১৪, ১৫ এর মতো নির্বাচনকে সামনে রেখে পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আসলে এরা গণতন্ত্র চায় না। এরা নির্বাচন চায় না। আজকে তারা আন্দোলন করছে, আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততার অভাব।”
গণতান্ত্রিক বাম জোটের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স বলেন, “নূর হোসেন জীবন দিয়েছিল যে কারণে- গণতন্ত্র মুক্তি পাক স্বৈরাচার নিপাত যাক, ২০২৩ সালে এসে আমরা দেখছি এই স্লোগান অনেকটা বহমান। আমরা স্বৈরাচার উচ্ছেদ করলেও স্বৈরাচারের ভিত্তি উচ্ছেদ করতে পারি নাই। এই স্বৈরাচারের ভিত্তি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, আমাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বহমান।”
বাসদ মার্কবাদী, সাবেক সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য, নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন গণতন্ত্রকামী বিভিন্ন দলের নেতারা এদিন শ্রদ্ধা জানান শহীন নূর হোসেনের প্রতি।।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীর ‘জিরো পয়েন্টে’ পুলিশের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কর্মী নূর হোসেন।
তার বুকে-পিঠে সেদিন লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ ও ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। এরপর থেকে প্রতি বছরের ১০ নভেম্বর পালিত হচ্ছে ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’ হিসেবে। আর জিরো পয়েন্টের নাম হয়েছে ‘নূর হোসেন চত্বর’।
সেই আত্মত্যাগের পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকলে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এরশাদ সরকারের পতন হয়।