ফখরুলের কথা শুনে ‘মানুষও হাসে’: কাদের

“মা-বেটার মধ্যে সমস্যা তো আপনারাই তৈরি করেছেন। চেয়ারপারসনকে কি আওয়ামী লীগ বাদ দিয়েছে?,” মন্তব্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2023, 04:45 PM
Updated : 27 Feb 2023, 04:45 PM

বিএনপি ক্ষমতা ফিরে পেলে নারী অধিকার সীমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘরে বন্দি বানিয়ে আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সোমবার রাজধানীর ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে মহিলা আওয়ামী লীগের ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “বিএনপির হাতে ক্ষমতা গেলে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাবে। নারীদের হিজাব পড়িয়ে অন্ধকারে বসিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখবে। বিএনপি তাদের নিয়ে রাজনীতি করছে, যারা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাতে চায়।”

এসময় সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে মায়ের নাম রাখার যে সম্মান আওয়ামী লীগ সরকার দেখিয়েছে, তাতে দেশের নারী সমাজের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন ধন্যবাদ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করুক বা নির্বাচন করুক এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথাব্যাথা কেন’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, “ফখরুল সাহেব তাহলে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কেন? মা-বেটার মধ্যে সমস্যা তো আপনারাই তৈরি করেছেন। চেয়ারপারসনকে কি আওয়ামী লীগ বাদ দিয়েছে?

“খালেদা জিয়াকে তাদের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা অনুযায়ী তারা বাদ দিয়েছে। দণ্ডিত ব্যক্তি একজনকে বাদ দিয়েছেন। তারপর একজনকে দিলেন তিনিও দণ্ডিত। রাজনীতি থেকে মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে বসে আছেন। অর্থপাচারের মামলায় পলাতক। অর্থপাচার ধরা পড়েছে আমেরিকায়, সিঙ্গাপুরে। তিনি আপনাদের নেতা, মাথাব্যাথা আপনাদের। আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।”

বিএনপিই খালেদাকে ‘বিতাড়িত’ করেছে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন।

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া রাজনীতি করলে আমাদের কী? আদালত যদি তাকে রাজনীতি করতে দেয়, নির্বাচন করতে দেয় আমাদের কী? আমাদের কিছু যায় আসে না। আপনারাই তো খালেদা জিয়াকে নিষিদ্ধ করেছেন। রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করেছেন। তাহলে অন্য একজনকে দায়িত্ব দিলেন কেন? মা-বেটার গণ্ডগোল পাকানোর জন্য?”

‘সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত’ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুলের মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এ কথা শুনে মানুষও হাসে। এ কথা শুনে ঘোড়াও ডিম পেরেছে। নির্বাচন হলে কী হবে সেটা বোঝাতে হলে তো নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে কেমনভাবে প্রমাণ করবেন কার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে?

“বড় বড় কথা বলবেন না। এই দেশে একশ বছরেও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসতে পারবে না- এই দম্ভোক্তি করেছিলেন আপনার নেত্রী। এখন তিনি কোথায়? শেখ হাসিনা কোথায়। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মাসাৎ করে এখন দণ্ডিত।”

বিএনপি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করেছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, “খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কত রাজনীতি করত তারা। প্রতিদিনই মনে হত আর বুঝি খালেদা জিয়া নেই। এমনভাবে তারা অপপ্রচার চালাত যে, এই বুঝি খালেদা জিয়া মুত্যুমুখে পতিত হত। আসলে কি খালেদা জিয়াকে আপনারাই মারতে চেয়েছেন। তা না হলে এই কথা কেন বলেছেন। অসুস্থ খালেদা জিয়া মুমূর্ষ, তাকে বিদেশে যেতে হবে, সেটা কী এখন বলে?

“যে বলেছেন আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, ৩০ সিটও পাবে না। এটা ২০০৮ সালেও বলেছিল। উল্টো তারা ৩০ আসন পেয়েছিল। ফখরুল সাহেব দম্ভোক্তি করবেন না। নির্বাচনে আসেন দেখা যাবে কার বাজেয়াপ্ত হবে। দেখা যাবে আপনাদের জামানতই বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।”

এসময় ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়ির স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “পঁচাত্তরে মীরজাফরের মতো খন্দকার মোশতাক ছিলেন বিশ্বাসঘাতক আর জিয়া হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। সেদিন তারা যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করত তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যা করা সম্ভব ছিল না।”

বাংলাদেশের থেকে পাকিস্তান আমল ভালো ছিল বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যেরও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, সংগঠনটির সাবেক সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন কাদের।