আওয়ামী লীগ আজ ‘স্বাধীনতার বিরুদ্ধে’: ফখরুল

যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, “আমিও একই কথা বলি- কোনো মতেই স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2023, 10:58 AM
Updated : 4 May 2023, 10:58 AM

মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী দল’ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে বাংলদেশ ‘টিকবে না’। তাই তাদেরকে কোনোমতেই ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না।

ওয়াশিংটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক আলোচনায় এ কথা বলেন ফখরুল।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও পরে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল কুমার গুপ্তের পঞ্চদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলাদেশ ভাসানী অনুসারী পরিষদের আয়োজনে এই আলোচনা সভা হয় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে।

সুনীল কুমার গুপ্ত ২০০৯ সালে ৩০ এপ্রিল মারা যান।

গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসির রিজ কার্লটন হোটেলের হলরুমে প্রবাসীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনি, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীরা যাতে আর কখনও ক্ষমতায় ফিরতে না পারে, তা নিশ্চিত করুন।”

এর জবাব দিয়ে বৃহস্পতিবারের আলোচনাসভায় ফখরুল বলেন, “ওয়াশিংটনে বর্তমান ‘অবৈধ সরকার’, তার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, কোনোমতেই স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না।

“আমিও একই কথা বলি- কোনোমতেই স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। দুঃখজনকভাবে, অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে আওয়ামী লীগ আজকে ‘স্বাধীনতার বিরুদ্ধে’ অবস্থান নিয়েছে।”

আওয়ামী লীগকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলার কারণ ব্যাখ্যা করে ফখরুল বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, যে আশা ছিল, যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, একটা গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, একটা বহুদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেটাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেই পুরনো কায়দায়….।”

“এই কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, এই সরকার আজকে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এই সরকার আজকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এই সরকার আজকে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যে সরকার মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারে না, যে সরকার দেয়ালের লিখন দেখতে পারে না, যে সরকার মানুষের প্রয়োজন বুঝতে পারে না, তাকে তো আমরা গণশত্রু ছাড়া আর কী বলতে পারি?”

‘তারা ফিরলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না’

জাতির অস্তিত্ব ‘বিপন্ন হয়ে পড়েছে’ কথাটি সব মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।

তিনি বলেন, “আজকে আবার যদি ওই ‘গণতন্ত্রবিরোধী’, ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ শক্তিরা ক্ষমতায় আসে, তাহলে এই দেশের অস্তিত্ব থাকবে না।

“আমি বার বার করে বলছি যে, এই সরকার ‘স্বাধীনতার বিরুদ্ধে’ অবস্থান নিয়েছে, জাতির অস্তিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”

সরকার জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। বলেন, “সমগ্র জাতির মধ্যে হানাহানি এমন পর্যায় নিয়ে গেছে যে, এখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব।”

সরকার বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ফেলেছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “আজকের পত্রিকায় দেখলাম এর মধ্যে তারা নতুন করে ৫ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দিচ্ছে, দেখলাম প্রায় ১৮ শ সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ দিচ্ছে। নির্বাচনের ঠিক আগে আগে… এবং সেখানে উল্লেখও করা হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষের ব্যক্তিদের … আসলে সেখানে আওয়ামী পক্ষের লোকদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।”

স্কুলের শিক্ষক, নিম্ন শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগেও এখন ঘুষ দিতে হয় অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ঘুষ ছাড়া, টাকা ছাড়া কোথাও কোনো চাকরি হয় না এবং সেখানে দেখা হয় সেটা আওয়ামীপন্থি কি না।”

‘সরকারের কত বড় দাম্ভিকতা!’

দেশে বিদেশে সমালোচনা সত্ত্বেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না করে সংশোধনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “কত বড় দাম্ভিকতা আপনাদের! স্পষ্ট করে সব মানুষ যখন বলছে যে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করুন, তখন আপনারা বলছেন, এটা বাতিল হবে না।

“কেন হবে না? আপনাদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ওটা (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) একটা হাতিয়ার হিসেবে আপনারা ব্যবহার করছেন, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সুতরাং সেই অস্ত্রকে আপনারা বাদ দিতে চান না।”

এদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে– এ বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “মানুষ তারা আজকে সংগ্রাম শুরু করেছে, লড়াই শুরু করেছে। এই লড়াইয়ে অবশ্যই গণতন্ত্রের বিজয় হবে এবং এই ভয়াবহ ‘দানবীয় ফ্যাসিবাদ’ পরাজিত হবে।”

জনগণ ‘জেগে উঠেছে’

ফখরুল বলেন, “ইতিমধ্যে আমাদের ১৭ জন তরুণ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য…। হাজার হাজার মানুষ কারাগারে, সহস্রাধিক মানুষকে গুম করেছে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে…।”

সভার শ্রোতাদের একটি অংশ আসেন সুনীল গুপ্তের নির্বাচনী এলাকা বরিশালের গৌরনদী থেকে। তাদের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, “গৌরনদী থেকে যারা এসেছেন এখানে, এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই।

“ওখানে প্রবল প্রতাপশালী দানবের সমস্ত লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। গেলে এই গাড়ি ভাঙে, মানুষজনকে মেরে মামলা দেয়। এটা কতদিন? কতদিন আমরা এই অত্যাচার সহ্য করব, কতদিন আর এই ভয়ঙ্কর একটা দানবের কাছে নতি স্বীকার করব।”

‘উঠে দাঁড়াবার’ সময় এসেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “আমরা সমস্ত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটা ঐক্য গড়েছি। তাদেরকে নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করছি। সারাদেশে ইতোমধ্যে আমরা একটা আশা সৃষ্টি করতে পেরেছি।”

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, স্মরণসভাটি জাতীয় প্রেস ক্লাবে হওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

আয়োজন সংগঠনের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় আলোচনায় জাতীয় পার্টির একাংশের (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, প্রয়াত নেতার ছোট ছেলে সঞ্জয় কুমার গুপ্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।