সরকার তারেক রহমানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করতে চায়: ফখরুল

প্রতিহিংসার মামলায় তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, বলছেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2022, 01:23 PM
Updated : 1 Nov 2022, 01:23 PM

তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে আদালত যে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, সেই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে বিএনপি।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আমাদের দলের নেতা তারেক রহমান সাহেব ও তার সহধর্মিনী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ারা জারি করা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নাই।

“আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য এসব মামলা করেছে। উদ্দেশ্য একটাই, এই সমস্ত মামলা করে তাদেরকে মূলত বাংলাদেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার একটা প্রচেষ্টা মাত্র।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় ঢাকার আদালত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরপরই তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফখরুল।

পরোয়ানা জারির নিন্দা জানিয়ে তিনি মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অজর্নের অভিযোগে তারেক-জোবাইদার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।

আসামি পক্ষের আবেদনে হাই কোর্ট মামলাটি স্থগিত করে রুল দিয়েছিল। সেই রুল নিষ্পত্তি হরল ১৪ বছর পর মামলাটির বিচার আবার শুরু হয়েছে।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক স্ত্রী জোবাইদাকে নিয়ে ২০০৮ সাল থেকেই যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। এরমধ্যে দেশের আদালতে কয়েকটি মামলায় তার সাজা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। মিথ্যা মামলাগুলো দিয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।”

চিকিৎসক জোবাইদা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকলেও শুধু জিয়া পরিবারের সদস্য হওয়ার কারণে তাকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “১/১১ ঘটানো হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য। একইভাবে দেখেন গত ১৪ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিএনপিকে একেবারে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য যত রকমের নিপীড়নমূলক-নিবর্তনমূলক আইন, যত রকমের নির্যাতন-অত্যাচার, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, র‌্যাব, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা করেছে গুম, হত্যা, খুন, মামলা দিয়ে- এটা হচ্ছে তারই একটা অংশ।”

Also Read: তারেক ও জোবাইদার বিরুদ্ধে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সরকার মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপির আন্দোলন দমাতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এই সরকারের টার্গেট একটা, বিএনপিকে নির্মূল করা। সেইকারণে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করছে। কিন্তু করলে কী হবে? মানুষ তো বিএনপিকে চায়।

“জেলে দিয়ে কি এই আন্দোলন রোধ করা যায়? এটা সরকারি দলের বেশি জানা উচিৎ। তাদের নেতাদেরকে পাকিস্তান রোধ করতে পেরেছিল? পারেনি। আমি নিজে যেকথা প্রায় বলি যে, ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে বিএনপি। এটা কিন্তু রোধ করার কোনো উপায় নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে সোমবার অনুষ্ঠিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন মহাসচিব।

স্থায়ী কমিটির সভায় সদ্য প্রয়াত দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবিহ উদ্দিন আহমেদ এবং মশিউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।

‘খাদ্য মজুদে সরকার ব্যর্থ’

মির্জা ফখরুল বলেন, “সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ‘সামনের বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে’ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে এই উক্তিতে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সরকার আপদকালীন খাদ্য মজুদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্য-শস্য আমদানি গত চার মাসে প্রায় ৩৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এটা উদ্বেগজনক।

“সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তরের নজিরবিহীন দুর্নীতি, উদাসীনতা ও অযোগ্যতার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন।একই সঙ্গে দুর্নীতির কারণে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয়ের ফলে ডলার সংকটে আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় আমদানিকে ব্যাহত করছে। রিজার্ভ থেকে অনৈতিকভাবে ডলার সরিয়ে নেওয়া, প্রবাসীদের আয় বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ থেকে বিদেশে হুন্ডি করে প্রতিবছর ৭/৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করে এই পরিস্থিতিকে জচিল করে ফেলেছে।”

সার, বীজের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুত ও ডিজেলের অভাবে সারা দেশে সেচ কার্য্ক্রম ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যশস্য উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে সারা দেশে স্বাস্থ্য সেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।