সভামঞ্চে খালেদা

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে জনমত গড়তে নরসিংদীর জনসভাস্থলে পৌঁছেছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2013, 10:58 AM
Updated : 8 Sept 2013, 10:58 AM

এই সফরের মধ্য দিয়ে আট জেলায় বিরোধী দলীয় নেতার জনসভা কর্মসূচি শুরু হলো।

বিকাল পৌনে ৫টায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় ডিঙিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর নরসিংদী দোগরিয়ার বালুর মাঠে (প্রস্তাবিত বাসাইল পৌর শিশু পার্ক) ১৮ দলীয় জোটের জনসভাস্থলে পৌঁছায়। তিনি মঞ্চে ওঠার সময় মুহুর্মুহু করতালিতে ফেটে পড়ে পুরো জনসভা প্রাঙ্গণ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা সভামঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন।

প্রায় ২১ বছর পর নরসিংদীতে খালেদা জিয়ার এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে নরসিংদী ও আশপাশের জেলার শনিবার থেকেই ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে উৎসবের আমেজ।

রোববার সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যেই নেতা-কর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ হাতে ব্যান্ড বাজিয়ে বালুর মাঠে জড়ো হতে থাকেন।

বেলা ১২টায় জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবীর খোকনের  সভাপতিত্বে সভার কার্যক্রম শুরুর পর স্থানীয় নেতাকর্মীরা সভামঞ্চে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন।

খালেদা জিয়ার সফর উপলক্ষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। মহাসড়কের দু’পাশে লাগানো হয়েছে জিয়াউর রহমান,খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের ছবি সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুন।

আগামী নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট থেকে প্রার্থী হতে আগ্রহীরাও নিজেদের ছবি সংযুক্ত করে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ নির্মাণ করেছেন।

সড়কের দুই পাশে ব্যানার-ফেস্টুনের মধ্যে বিএনপির  সাবেক মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার প্রতিকৃতিও দেখা যায়। তার নেতৃত্বেই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত হয়েছিল নরসিংদীর মানুষ। ২০০৭ সালে দলের সংস্কার চেয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।

মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থকরাও খালেদা জিয়ার সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বলে মান্নান ভুঁইয়ার স্মৃতি পরিষদের নেতারা জানান।

নরসিংদী সদর, রায়পুরা, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদি, বেলাবো ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া, ভৈরবসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা জনসভায় যোগ দেয়ায় দুপুর নাগদ জনসভা জনসমুদ্রের রূপ পায়।

মানুষের ঢল মাঠ ছাড়িয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে  পৌঁছালে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিকল্প পথে যানবাহন ঘুরিয়ে দেন।

এর আগে বেলা ১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর গুলশানের কার্যালয় থেকে নরসিংদীর পথে রওনা হন খালেদা জিয়া।

রাজধানীর নয়া পল্টন, যাত্রাবাড়ী, নারায়াণগঞ্জের কাঁচপুর সেতু, সোনারগাঁও মোড়, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, ভুলতা, নরসিংদীর মাধদীসহ বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীরা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলীয় নেতাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে নরসিংদী জেলার পাঁচটি নির্বাচনী আসনের সবগুলোতেই জয়ী হন বিএনপির প্রার্থীরা। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সবগুলো আসনে জয় পায়।

বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি জানান, জনসভার পুরো কার্যক্রম ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। দুপুর ২টা থেকে জনসভার কার্যক্রম www.bnplive.com এ দেখা যাবে।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে জনমত গড়তে আট জেলায় খালেদা জিয়ার জনসভার কর্মসূচি শুরু হচ্ছে নরসিংদী সফরের মধ্য দিয়ে।

এর অংশ হিসেবে আগামী ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর ও রাজশাহীতে জনসভা করবেন তিনি। পরের জনসভা দুটি হবে ২২ ও ২৯ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে খুলনা ও  বরিশালে এবং সবশেষে ৫ অক্টোবর হবে সিলেটে।

একই রকম জনসভার পরিকল্পনা রয়েছে চট্টগ্রামেও। আর সর্বশেষ জনসভাটি হবে ঢাকায়। তবে দুই জনসভার দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি এখনও।

জনমত গঠনে এসব জনসভা হচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এটি বিরোধী দলীয় নেতার প্রাক-নির্বাচনী প্রস্তুতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতিমধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জনসভায় দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’র পক্ষে ভোট চাইছেন।

সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হতে হবে।