অর্থমন্ত্রী টাকা পাচারকে ‘ভালো কাজের স্বীকৃতি’ দিচ্ছেন: জিএম কাদের

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার বিধান রাখার বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, এর মাধ্যমে টাকা পাচারও ‘ভালো কাজের’ স্বীকৃতি পেয়ে যাবে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2022, 04:36 PM
Updated : 28 June 2022, 04:36 PM

জিএম কাদের বলেন, “অর্থমন্ত্রী সব সময় অর্থ পাচার অস্বীকার করতেন। কিন্তু (এর মাধ্যমে) পাচারকে কেবল স্বীকৃতি দেননি। ভালো কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।”

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মঙ্গলবার এ কথা বলেন সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা।

গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে।

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে বিদেশ থাকা সম্পদের ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে তা দেশে ফেরত আনার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেশে বৈধ আয়ের তালিকায় যুক্ত করা যাবে, সেই অর্থ দেশেও আনা যাবে। ওই আয়ের উৎসব জানতে চাওয়া হবে না।

এর সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, “কর দিলেই অবৈধ অর্থ বৈধ হয়ে যাবে। এটা থেকে তো দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন হচ্ছে না। বরং দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন হচ্ছে। এটা সুশাসন বিরোধী। আমরা কখনো সমর্থন করতে পারি না। আমি মনে করি অর্থ পাচারকারীরা কেউ ফেরত আনবে না। বরং পাচার যাতে না হয় এবং পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে সঠিক কাজ।”

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট’ হিসেবে বর্ণনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “এই বাজেট গতানুগতিক ও উচ্চাভিলাসী। বাজেটের সব খাতে ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু কোনো দর্শন চোখে পড়েনি। করোনা ও ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে এই বড় বাজেট অস্বাভাবিক।

“আমার মনে হয় উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না বরং এটি আরো বাড়তে পারে।”

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা ‘সম্ভব হবে না’ বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

দেশে বৈদেশিক রিজার্ভ ‘দিন দিন কমছে’ দাবি করেন জিএম কাদের বলেন, “বর্তমান সরকারি ঋণের পরিমাণ ১৩ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। জিডিপির ৩৪ শতাংশের মত। মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৭৯ হাজার ১০৩ টাকা। বাজেট শেষে ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ লাখ ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মাথাপিছু ঋণ হবে ৯২ হাজার ৬৬২ টাকা। মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ দাড়াবে ৩৫ হাজার ২৯৩ টাকা এবং দেশীয় ঋণ ৫৭ হাজার ৩৬৮ টাকা।”

সংসদ সদস্যদের জন্য অবসর ভাতা চালু করার দাবিও সংসদে তুলে ধরেন তিনি।

এর আগে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, “কঠিন সময় মোকাবিলায় অর্থমন্ত্রী একটি বাস্তবধর্মী বাজেট দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি সচল আছে। এক সময়ের বিশ্বের দশম দরিদ্রতম দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন ৪১তম অর্থনীতির দেশ। দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।”

তিনি রাজস্ব আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, যারা কর দিতে পারে, তারা দেয় না। আর যারা দেয়, তাদের ওপর করভার বেশি হয়। অতি ধনী ও ধনী ব্যবসায়ীরা কর অব্যাহতির জন্য আকুল আবেদন ছাপান, এটা বন্ধ করার জন্য তিনি তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিতে যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে তার বিরোধিতা করে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, “এই প্রস্তাব অনৈতিক ও বেআইনি। দেশদ্রোহীদের পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়া কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। বিদেশে যাতে টাকা পাচার না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।”