পাচার অর্থ ফেরতে দায়মুক্তি: সংসদে বিতর্ক চলছেই

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার বিধান রাখার পক্ষে ও বিপক্ষে সংসদে বক্তব্য অব্যাহত রয়েছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2022, 06:11 PM
Updated : 16 June 2022, 06:11 PM

বৃহস্পতিবার বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় সরকারি দলের একাধিক সদস্য বলেন, অপ্রদর্শিত আয় এলে বিনিয়োগ বাড়বে। আর বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলছেন, এই সুযোগ দেওয়া হলে টাকা পাচার আরও বাড়বে।

গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বিদেশ থাকা বাংলাদেশিদের সম্পদের ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে তা দেশে ফেরত আনার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেশে বৈধ আয়ের তালিকায় যুক্ত করা যাবে, সেই অর্থ দেশেও আনা যাবে। ওই আয়ের উৎসব জানতে চাওয়া হবে না।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো রূপরেখা অর্থমন্ত্রী দেননি। (অথচ) তিনি টাকা পাচার করে তা হালাল করারা সুযোগ দিয়েছেন। ৪০ বছর যাবৎ বিভিন্ন সরকার ‘কালো টাকা’ সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু লাভ হয়েছে খুব কম।”

তিনি বলেন, “ব্যবসা করলে ২৫ শতাংশ কর দেওয়া লাগে। আর টাকা পাচার করে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা আবার ফিরিয়ে আনা যাবে। এতে মানুষ টাকা পাচারে উৎসাহী হবে।”

অর্থ পাচার রোধে এবং পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়ার আগে আইন সংশোধনের পরামর্শ দেন বিরোধী দলের এই এমপি।

বাজেটের বিভিন্ন দুর্বলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার অপকর্মকে লিগ্যালি সুযোগ দেওয়া হবে। এতে টাকা পাচার উৎসাহিত করা হবে।”

‘কালো টাকা’ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বুধবারের বক্তব্যের সমালোচনা করে এমপি চুন্নু বলেন, তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তার ঢাকায় ফ্ল্যাট নেই, স্ত্রীর বাসায় অনেক দিন থেকেছেন। ২০১০-১১ সালে একটি প্লট পেয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর নতুন ‘সংজ্ঞা’ অনুযায়ী এখন তিনি ‘কালো টাকা’র মালিক হয়ে গেছেন!

অর্থমন্ত্রী আইন লঙ্ঘন করে ‘কালো টাকা’র মালিক হয়েছেন কি না, সংসদে সে ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।

বাজেটে বড় ব্যবসায়ী ও ঋণ খেলাপিদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে দাবি করে বিএনপির মোশাররফ হোসেন বলেন, “গত ১৪ বছরে সরকার ঘনিষ্ঠরা বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করেছে, সিঙ্গাপুরে পাঁচ তারকা হোটেল করেছে।

“যারা টাকা পাচার করেছে তারা যদি সামান্য কর দিয়ে টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ পায়, তাহলে যারা কর দেন তারা উৎসাহ হারাবেন।”

সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবদুস শহীদ বলেন, “অপ্রদর্শিত টাকা থেকে থাকলে তা কোনো কাজে লাগছে না। সেটা ব্যবহারের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেটা অর্থ পাচারের বিষয় নয়। অর্থ পাচারের জন্য যে আইন আছে সেটা অবশ্যই প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় আনা যাবে। অপ্রদর্শিত আয়কে যদি প্রকাশ করা, বিনিয়োগ করা না যায় তাহলে সমৃদ্ধি সম্ভব হবে না।”

মৌলভীবাজারের এই সংসদ সদস্য বলেন, “চা শ্রমিকরা যে মজুরি পায় তা দিয়ে তাদের চলে না।” তাদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবিও তোলেন তিনি।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য আ ক ম সরোয়ার জাহান বলেন, “কর দিয়ে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক। তবে এজন্য কর ৭ শতাংশ নয়, ১০ শতাংশ করা দরকার।”

আলোচনায় আরও অংশ নেন সরকারি দলের নূর মোহাম্মদ, ওমর ফারুক চৌধুরী, শাহে আলম, নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, দীপংকর তালুকদার, আকম সারোয়ার জাহান, এম এ মতিন, মনোরঞ্জন শীল গোপাল, সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, মামুনুর রশীদ কিরণ খালেদা খানম, সুলতানা নাদিরা, একরামুল করিম চৌধুরী।