বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “জনগণ অবশ্যই চাপের মুখে পড়বে, এটা সর্বমুখী চাপ।”
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২২ অর্থ বছরের জন্য পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন, যা ‘গরিব ও ব্যবসাবান্ধব’ বলে অভিহিত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
তার বিপরীতে ‘সর্বমুখী’ চাপের কথা বলার ব্যাখ্যায় বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, “কারণ হচ্ছে যে, মানুষের জীবন-যাত্রার মান যখন কমতে থাকে, তখন এই চাপটা তো সব জায়গায় অ্যাফেক্ট করে।
“এটা তার দৈনিন্দিন জীবনে তার পুষ্টির উপর আঘাত করে, তার স্বাস্থ্যের উপর আঘাত করে, তার মানসিক অবস্থার উপর আঘাত করে, তার শিক্ষার ব্যবস্থার উপর আঘাত করে, তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর আঘাত করে।”
সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু।
তিনি বলেন, “আজকে যেসব ট্যাক্সের কথা বলা হচ্ছে, আপনি দেখবেন সেগুলো মূলত সাধারণ মানুষের পকেট থেকে যাচ্ছে। ভ্যাটের মাধ্যমে যাচ্ছে, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে বসে বসে জনগণের ট্যাক্সে টাকা দেওয়া হচ্ছে।”
বাজেট কেমন হওয়া উচিৎ ছিল- প্রশ্ন করা হলে আমীর খসরু বলেন, “এখন বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, আগামীতে সেখানে যাচ্ছে, আজকে সরকারের উচিৎ ছিল সবচেয়ে বড় অঙ্কের ক্যাশ ট্রান্সফার জনগণের কাছে পাঠানো, বেশি করে খাদ্যপণ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া, কৃষক থেকে শুরু করে যারা উৎপাদনের সাথে জড়িত, তাদেরকে সাবসিডাইজ করা।
“সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে লুটপাট বন্ধ করা। লুটপাট বন্ধ করা না হলে জনগণকে তা দিতে হবে। কারণ দিনের শেষে টাকা তো জনগণের কাছ থেকে সরকারকে নিতে হচ্ছে। টাকা তো আর আকাশ থেকে আসে না।”
বাজেট বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, “তাদের (সরকার) বাস্তবায়ন রেকর্ড তো প্রতি বছর আমরা খারাপ দেখছি। আপনি দেখবেন, একদিকে বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অন্যদিকে বাজেটের বিশাল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে।”
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু নির্মাণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাপানের সাথে নির্ধারণ করেন, স্থানও নির্ধারণ করেন। সেই ১০ হাজার কোটি টাকা এখন ৩০ হাজার কোটি টাকা করেছে। সেই হিসাবে ধরতে গেলে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ২/৩ লক্ষ কোটি টাকা জনগণ ও দেশের জন্য ব্যয় হবে কি না, আমাদের সন্দেহ আছে।”
নিজের বাড়িতে এই প্রতিক্রিয়া জানানোর শুরুতেই আমীর খসরু বলেন, “একটা অবৈধ সরকারের বাজেট নিয়ে কথা বলার মন-মানসিকতা আমাদের নেই, ইচ্ছাও নেই। কিন্তু দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে বিধায় দেশের মানুষের সামনে প্রকৃত চিত্রটা তুলে ধরার জন্য কিছু বক্তব্য তুলে ধরতে চাই।”
অর্থ পাচারে দায়মুক্তি ‘অনৈতিক’
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশে থাকা সম্পদের কর দিয়ে ‘দায়মুক্তির’ ঘোষণাকে ‘অনৈতিক’ বলে সমালোচনা করেছেন আমীর খসরু। তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনদের
অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলল।
তিনি বলেন, “বিদেশে যে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, এটা তাদের (ক্ষমতাসীন দল) দলীয় লোকজন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, দুর্নীতি করে অবৈধভাবে যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, প্রস্তাবিত বাজেটেই সেই টাকা দেশে এনে বৈধ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার। এটা কত বড় অন্যায়, কত অনৈতিক কাজ!
“যেখানে এই পাচারকারীদের শাস্তি হওয়া দরকার, এদেরকে বিচারের আওতায় এনে তাদের সম্পদ বিদেশে থেকে ফিরিয়ে আনা দরকার। এটাই হচ্ছে বিশ্বের সব দেশের আইন, এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধানের কথা, এটা হচ্ছে বাংলাদেশের সামাজিক ন্যায় বিচারের কথা। সেখানে সরকার আজকে সব কিছু ভায়োলেট করছে, ভায়োলেট করে তারা জঙ্গলের আইন বাংলাদেশে চালু করছে। কোনো সভ্য দেশ এরকম আইন করতে পারে না।”