শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ থেকে বাসদ নেতারা এ দাবি করেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ”করোনা মহামারীতে দেশের মানুষের অর্থনীতি ও জীবন যখন বিপর্যস্ত, সেই সময় সরকারের প্রশ্রয়ে একদল মুনাফালোভী দুর্বৃত্ত মাস্ক, পিপিই, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে দেশে নৈরাজ্য ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছিল। এই দুর্নীতিবাজ লুটপাটকারীদের হাত থেকে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রক্ষার জন্য দেশবাসী লড়াই করছে। এখন নতুন করে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ২ ডলার মূল্যের অক্সফোর্ডের টিকা সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ ডলার দিয়ে কিনে তা ৫ ডলারে সরকারকে সরবরাহ করবে সরকারের উপদেষ্টা সালমান রহমানের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো।
"এর মাধ্যমে কোনো টেন্ডার ছাড়াই বেক্সিমকোকে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য ৬ কোটি ডলার বা ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা করার সুযোগ করে দিল সরকার। এ ছাড়াও তারা বেসরকারিভাবে আমদানির অনুমতিও সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে, যা ১৩ ডলারে বিক্রি করে মুনাফা লুটবে। অথচ মাত্র ১০ হাজার কোটি বরাদ্দ করলে গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের দেশে টিকা তৈরি অথবা সরাসরি অক্সফোর্ডের টিকা সরকারি উদ্যোগে এনে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে প্রদান করা সম্ভব ছিল।”
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম চালান আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে আশা করছে সরকার।
সব কিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে।
অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত নভেম্বরে যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।
বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার ‘ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা সরবরাহ করবে।
অক্সফোর্ডের তৈরি এই টিকা প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হয়। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকার অর্ধেক ২৫ লাখ মানুষকে দিয়ে তাদের জন্য বাকি টিকা সংরক্ষণ করা হবে।
তবে সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া টিকা প্রথম মাসেই একসাথে ৫০ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে।
বাসদের সমাবেশে বলা হয়, “ভারতে আজ থেকে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হলেও বাংলাদেশে কবে আসবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সরকার। বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেওয়ার দিন-তারিখ ঠিক না হলেও ব্রাজিলে সেরামের উৎপাদিত ভ্যাকসিন পাঠানোর তৎপরতা চলছে। বিশ্বের প্রায় ৬০টি প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে।”
১২টি দেশে অনুমোদনের পরেও একাদিক দেশ থেকে ভ্যাকসিন না এনে শুধুমাত্র ভারতের সেরাম ইনসটিটিউট থেকে ভ্যাক্সিন আমদানির উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাসদ নেতারা বলেন, “এতে দেশের নাগরিকদের ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।”
সমাবেশ থেকে ভারতের উপর নির্ভরশীল না থেকে একাধিক দেশ থেকে ভ্যাকসিন আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বলা হয়, “করোনায় যখন দেশের প্রায় ৭০% মানুষের আয় কমেছে, প্রায় ১১ কোটি মানুষ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, অসংখ্য মানুষ কর্মহীন বেকার হয়ে পড়েছে, তখন একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ দিশেহারা অন্যদিকে গণশুনানির নামে গণ নাটক মঞ্চস্থ করে বিইআরসি এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির চক্রান্ত করছে। এতে দেশের মানুষ আরও সংকটের মধ্যে নিপতিত হবে। সরকারি এলপিজি কোম্পানি সাড়ে ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকার প্রস্তাব করলেও সরকার তাকে ৯০২ টাকা ও ১২ কেজি বেসরকারি গ্যাসের সিলিন্ডার ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। এর মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপিজি লিমিটেডকে ধ্বংস করে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের মুনাফার দুয়ার উন্মোচিত করা হবে।”
বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, বাসদ ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব জুলফিকার আলী, সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়।