পিছিয়ে হলেও ব্যালটেই ভোট দিন: ফখরুল

ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রয়োজনে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2020, 04:26 PM
Updated : 22 Jan 2020, 04:44 PM

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাত্র নয় দিন আগে বুধবার বিকালে গুলশানের লেইক শোর হোটেলে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (অ্যাব) আয়োজিত এক সেমিনারে এই দাবি জানান তিনি।

‘প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএমের কারিগরি অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফল কারচুপির সম্ভাব্য সুযোগ’ শীর্ষক সেমিনারে ফখরুল বলেন, “মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে। আরেকটি ১ ফেব্রুয়ারি আসছে, যে পদ্ধতিতে ঢাকার নগরবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে।

“আমরা তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছি। এখনও বলছি, এই ইভিএম ব্যবহার রাখুন এবং প্রয়োজনে ভোট পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এদেশের মানুষ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না।”

ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির আহ্বান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আসুন, আজকে সবাই জনগণের কাছে বলি একথা যে, তারা অত্যন্ত জোরে তাদের ভয়েস, তাদের কণ্ঠকে সোচ্চার করুন, আমরা ইভিএম মানি না। ইভিএম কখনোই জনগণের সঠিক রায়ের প্রতিফলন ঘটাবে না। আমরা এই ইভিএম প্রত্যাখ্যান করছি।”

কেন ইভিএমে ভোটের বিরোধিতা করছেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, “মেশিন ব্যবহৃত হয় মানুষের দ্বারা। মেশিনের পেছনের কারা থাকবেন সেটা একটা জরুরি প্রশ্ন।

“যেহেতু এই মেশিনের পেছনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন আছেন এবং এই সরকার রয়েছে যারা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে পরিচালনা করছে; তাদের উপরে মানুষের কোনো আস্থা নেই।”

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মূল প্রশ্ন হচ্ছে যে, নির্বাচনটা কেন? নির্বাচনের মূল কারণটি হচ্ছে, একটা প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের জন্য। সেটা জাতীয় সরকারও হতে পারে, স্থানীয় সরকারও হতে পারে।

“আমরা বলে এসছি যে, এই নির্বাচন কমিশন যোগ্য নন, অদক্ষ। বর্তমানে যে অনির্বাচিত সরকার রয়েছেন তাদের আজ্ঞাবহ একটি কমিশন। তারা যে হুমুক করে কমিশন তাই করে। বিগত নির্বাচনে আমরা পুরোটাই দেখেছি তারা সরকারের পরিচালিত হয়ে নির্বাচন করেছে।”

প্রথমবারের মত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৫৪ লাখ ভোটারের জন্য ইভিএমে ভোট ভোট নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন দুই বোতাম চেপে ইভিএমে ভোট দিতে ব্যাপক প্রচারণার কথা জানালেও বরাবরের মত এবারও ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতায় সরব রয়েছে বিএনপি।

আগের দিন ইভিএম ব্যবহার না করতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠিও দিয়েছে তারা।

আর্থিক খাত নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “ইভিএম একটা মাত্র ঘটনা, এটা মাত্র মেশিন। এ রকম হাজারো মেশিন দিয়ে আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, আমাদের পুরো রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।

“পত্র-পত্রিকা খুললে দেখবেন, ব্যাংকগুলো নেই। প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হচ্ছে প্রায়ই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর একই অবস্থা। সরকারের বাজেট থেকে উল্টো দিতে হয় ব্যাংক পরিচালনার জন্য। ব্যাংক থেকে টাকা দেদারছে লুট হয়ে যায়। শেয়ার মার্কেট মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। রপ্তানি আয় যে গার্মেন্ট থেকে সেই সেক্টরটা আজকে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে যাচ্ছে।”

আতিকের বক্তব্য ‘লজ্জাজনক’

গাবতলীতে ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচারে হামলা বিএনপিও ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমাদের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, সরকারি দলের একজন কাউন্সিলর প্রকাশ্যে তার ওপর আঘাত করলেন, তার ওপর আক্রমণ চালালেন। দূঃখজনকভাবে শুধু না, দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনকভাবে ওই দলের (আওয়ামী লীগ) মেয়র প্রার্থী বললেন, এটা তাদের দলের নিজস্ব প্রবলেম।

“ভেরি শেইম, দুর্ভাগ্যজনক। এ রকম একজন ব্যক্তি যিনি এই কথা বলতে পারেন তার তো মেয়র হওয়ার কোনো যোগ্যতাই থাকতে পারে না।”

‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ কারণে খালেদা জিয়া জামিন পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “একজন ব্যক্তির জন্য যে বিচার, আরেক ব্যক্তির জন্য সে রকম বিচার নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় তাকে দুই বছর আটকিয়ে রাখা হয়েছে। যে জামিন তিনি পাওয়ার যোগ্য, যেটা আমার সংবিধানের মধ্যে আছে সেই জামিনও তাকে দেওয়া হচ্ছে না শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে।

“নাজমুল হুদা জামিন পেয়েছেন, মহিউদ্দীন খান আলমগীর জামিন পেয়েছেন, মায়া সাহেব (মোফাজ্জল হোসেন মায়া) জামিন পেয়েছেন। অনেকে জামিন পেয়েছেন। অথচ দেশনেত্রীকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না।

“অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় তিনি, সুচিকিৎসা দরকার। তারপরও বিচার বিভাগ জামিন দিচ্ছে না। সম্পূর্ণভাবে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এজন্য যে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে।”

দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলীমের নেতৃত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এসএম আবদুর রাজ্জাক, আশরাফউদ্দিন বকুল, তানবিরুল হাসান, আসাদুজ্জামান ও মিজানুর রহমান।

এছাড়া তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ইভিএমে ‘ভোট কারচুপির’ নানা দিক উপস্থাপন করা হয়।

অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সেলিম ভুঁইয়া বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, জহির উদ্দিন স্বপন, শাম্মী আখতার, আশরাফউদ্দিন বকুল, নেওয়াজ হালিমা আরলী, কাদের গনি চৌধুরী, শামীমুর রহমান শামীম, জেবা খান, হাসান জাফির তুহিন, আবদুস সেলিম, রফিকুল ইসলাম, আবদুল হালিম মিঞা, শায়রুল কবির খান, প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন, মিয়া মো. কাইয়ুম, অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আলমগীর হাছিন আহমেদ, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিকরা।