ডেঙ্গু মোকাবেলায় ‘সরকারের ব্যর্থতা’ দেখছেন জি এম কাদের

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সরকারকে ‘অনেক আগেই’ সতর্ক করা হয়েছিল দাবি করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের ‘ব্যর্থতা’ রয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2019, 01:52 PM
Updated : 6 August 2019, 01:52 PM

বন্যা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জি এম কাদের বলেন, “দেশ এখন ভয়াবহ ডেঙ্গুর কবলে। সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। তার মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। এই পরিস্থিতি সহ্য করা যায় না। প্রতিটি মানুষ এখন আতঙ্ক-উদ্বেগের মধ্যে সময় পার করছে।”

সেজন্য সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে, এটা মোকাবেলা করা যায়নি। এই বাস্তবতা কর্তৃপক্ষকে মেনে নিতে হবে।… ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যর্থতা অবশ্যই ছিল। যখন এতটা বিস্তার ঘটেনি- তখনই আমরা সতর্ক হবার আহ্বান জানিয়েছিলাম।”

কাদেরের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা যখন এইচ এম এরশাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের অবহিত করতে গিয়েছিলেন, তখনই ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।

“তখন যদি এইডিস মশা নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হত, তাহলে হয়ত বিপর্যয়টা এত ভয়াবহ হত না।”

চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৩ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও গণমাধ্যমে ৯০ এর বেশি মৃত্যুর খবর ইতোমধ্যে এসেছে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রতিকার, প্রতিরোধে ওষুধ ও মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে রাজধানীর দুই মেয়র নানা সময়ে ‘নানা বিভ্রান্তিকর কথা বলে তামাশা করছেন’।

“সিটি করপোরেশন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। দুই মেয়রের অবহেলার কারণে আজকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জনগণকে অবহেলা করে কথা বলছেন।”

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়ার কথা তলে ধরে রাঙ্গাঁ বলেন, “একেক সময়ে একেক কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমরা কোথাও কোনো হাসপাতাল থেকে সঠিক তথ্য পাচ্ছি না। যেটুকু তথ্য পাচ্ছি, তা গণমাধ্যমের কল্যাণে।”

রংপুর সদর আসনের সাংসদ রাঙ্গাঁ তার এলাকার হাসপাতালগুলোর চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “যেখানে গেছি, দেখি মেডিকেল যন্ত্রপাতি নাই। ডেঙ্গুর ডায়াগনসিস করবে, সে ব্যবস্থা নাই। গরীব মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে রয়েছেন।”

জি এম কাদের বলেন, “সরকার চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছে না। কিন্তু মশা মারার জন্য যে ওষুধ আনা হচ্ছে, তা কার্যকর হচ্ছে না। আর তাই পরিস্থিতি এখন আউট অব কন্ট্রোল।”

সরকারি হাসপাতালে শয্যা সঙ্কটের কারণে রোগীরা যখন ভর্তি হতে পারছেন না, তখন বেসরকারি হাসপাতালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রোগী ভর্তির প্রস্তাব দেন জি এম কাদের।

“সাময়িক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালেও রোগী ভর্তি করতে হবে এখন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা ফ্রি করে দিতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকের সাথে সাময়িক ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালের খরচ সরকারকে দিতে হবে।”

ডেঙ্গুর পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন জি এম কাদের।

তিনি বলেন, “এখন যা ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা যথেষ্ট নয় । বিতরণেও অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। তাছাড়া সময়মত বা দ্রুততার সঙ্গে ত্রাণ পৌঁছে না- এ অভিযোগও আছে।”

ত্রাণ ব্যবস্থাপনা দক্ষ ও কার্যকর করার পরামর্শ দিয়ে জি এম কাদের বলেন, “যেসব এলাকা প্রায় বছরই বন্যা কবলিত হয়, সেখানকার জনগোষ্ঠীকে তালিকাভুক্ত করে কার্ড দেওয়া যেতে পারে। বন্যা কবলিত হওয়ামাত্র মাত্রা দেখে দুর্গত এলাকা চিহ্নিত করে, তালিকা মাফিক ত্রাণ বিতরণ করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ধরনের এলাকার জন্য সবসময় প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুদ রাখতে পারে।”

তিনি জানান, আগামী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জাতীয় পার্টি রাজধানীজুড়ে ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করবে। সেদিন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচি শুরু হবে।