বিএসএমএমইউতে খালেদার দাঁতের চিকিৎসা

বিএসএমএমইউ হাসপাতালে কেবিন ব্লকে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দন্ত বিভাগে নিয়ে দাঁতের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2019, 08:09 AM
Updated : 27 July 2019, 10:55 AM

তার দাঁতের সমস্যার কথা বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে জানানোর পরদিন শনিবার এই চিকিৎসা দেওয়া হল।

বেলা দেড়টার দিকে কড়া পাহারায় খালেদা জিয়াকে কেবিন ব্লক থেকে বের করা হয়। এরপর তাকে একটি মাইক্রোবাসে করে নেওয়া হয় শ’ খানেক গজ দূরের আরেকটি ব্লকে দন্ত বিভাগে। বেলা সোয়া ২টার দিকে কেবিন ব্লকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তাকে।

হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়ার পরনে ছিল গোলাপি রঙের শাড়ি, চোখে ছিল চশমা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি তখন অন্য সমস্যার সঙ্গে খালেদা জিয়ার দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজনের কথাও বলেছিলেন।

ফখরুল বলেছিলেন, “তার দাঁত শার্প (চোখা) হয়ে গেছে। সেটা যখন তার জিবে আঘাত করে তখনই তিনি কষ্ট পান। যার ফলে তিনি এখন কিছু খেতেও পারছেন না।

“দেশনেত্রীর দাঁতের চিকিৎসাটা বড় চিকিৎসা। তার রুট ক্যানেল করা দরকার, স্কেলিং করা দরকার, টুথ এস্ট্রাকশন করা দরকার। দুই-একটা দাঁত তার নষ্ট হয়ে গেছে বয়সের কারণে, সেগুলো তুলে ফেলা দরকার।”

খালেদার দাঁতের চিকিৎসার পর বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক সাংবাদিকদের সামনে আসেন।

তিনি বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপরের মাড়ির দুইটা দাঁতে ইরিটেশন হচ্ছিল, সেজন্য উনি আনইজি ফিল করছিলেন। এতে তার জিবে ছোট আকারে ঘা হয়েছে। সেটাকে ট্রিটমেন্ট দেওয়ার জন্য আজকে তাকে ডেন্টাল বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে আধা ঘণ্টাব্যাপী চিকিৎসা দিয়ে দাঁতের সমস্যাটাকে দূর করে দেয়া হয়।”

বিএসএমএমইউর ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিফেসিয়াল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম বিএনপি চেয়ারপারসনের দাঁতের চিকিৎসা দেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আজকে এক্সজামিন করি, আমি দেখলাম তার কয়েকটা ভাঙা দাঁতের শেকড় রয়ে গেছে। জিবে যে জায়গাটায় ঘা ছিলো তার থেকে আরেকটা জায়গায় ছোট একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে এবং তার কারণটা হলে উপরের দুইটা আক্কেল দাঁত ৮ ও ৭ নম্বর সেই দাঁত দুটির ভাঙা অংশ ধারাল ছিল। আমরা সেই দুটি দাঁত সমান করে দিই।

“অন্য দাঁতগুলো ভালো আছে। আমার বিশ্বাস যে, জিবের ক্ষতটা চলে যাবে। তাকে(খালেদা জিয়া) মাউথওয়াশ দেওয়া হয়েছে, ওটা দিয়ে প্রতিদিন কুলি করবেন। ম্যাডামকে জিজ্ঞাসা করেছি- উনি বলেছেন, ‘আমার এখন আর কোনো প্রবলেম নাই’।”

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে বিএসএমএমইউর পরিচালক ও চিকিৎসকরা

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আনা হয়। এরপর থেকে তিনি এখানে রয়েছেন।

ফখরুলের আরও বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার ওজনও কমে গেছে। তিনি এখন বিছানা থেকে নিজে উঠতে পারেন না।

বিএনপির চেয়ারপারসনের অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর পরিচালক বলেন, “উনার চিকিৎসা কনটিনিউ হচ্ছে, আমাদের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা করছেন। আমি বলতে চাই গ্র্যাজুয়াল ইমপ্রুভিং।

“আমি আগেও বলেছি যে, এসব ক্রনিক ডিজিসগুলো ডায়াবেটিকস, আর্থারাইটিস এসব রোগ ১১০% ভালো করা ডিফিকাল্ট। এসব মিরাক্যালি ভালো হয়ে যাবে সেটাও নয়।”

“আমি বলব, উনি ভালো আছেন। আপনারা দেখেছেন উনাকে। উনাকে দেখে মনে হয়েছে কি উনি খুব বেশি অসুস্থ? উনি ভালো আছেন। আগে যেভাবে এসেছিলেন, তার চেয়ে বেটার, ডেফিনেটলি বেটার আছেন,” বলেন তিনি।

বিএসএমএম্‌ইউর সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএসএমএমইউর ওরাল ও ম্যাক্সিফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কাজী বিল্লুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। বিল্লুর রহমানই প্রথমে খালেদা জিয়াকে দেখেছিলেন, এরপর তাকে পাঠানো হয় অধ্যাপক শামসুল আলমের কাছে।

এদিকে বিএসএমএমইউ পরিচালকের সংবাদ ব্রিফিংয়ের পর বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদশ-ড্যাবের নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ড্যাবের বিএসএমএমইউ শাখার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নানবিধ সমস্যা। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ রাখছি, তার সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা যেন দেওয়া হয়।

“আমরা ডাক্তার হিসেবে দূর থেকে যতটুকু দেখেছি, ম্যাডাম অত্যন্ত অসুস্থ। উনার আরও ভালো ও উন্নত চিকিৎসা দরকার।”

এ সময়ে ড্যাব নেতা অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সেলিম, আনম মনোয়ারুল কাদির বিটু, এহতেশামুল হক তুহিন, সাইফুদ্দিন নেসার আহম্মেদ তুষার, রেজাউল আলম, কামরুজ্জামান মিন্টু, শাকিল আহম্মেদ, ইয়াহিয়া খান, মহিলা দলের সাবিনা ইয়াসমীন উপস্থিত ছিলেন।