খালেদার জিহ্বায় আলসার, চলাচলে হুইল চেয়ার: ফখরুল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ‘ঠিকমতো চিকিৎসা না হওয়ায়’ খালেদা জিয়ার অবস্থা খারাপ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2019, 05:26 PM
Updated : 26 July 2019, 05:41 PM

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিয়ে দেশে বা বিদেশে তার পছন্দমতো জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। 

মির্জা ফখরুল বলেন, “তার (খালেদা জিয়া) জিবে আলসার হয়েছে। গত এক সপ্তাহে তার ওজনও কমে গেছে। তার ৪ কেজি ওজন গত এক সপ্তাহের মধ্যে কমেছে। ইট ইজ ভেরি অ্যালার্মিং।

“আপনারা ম্যাডামকে দেখলে এখন চিনতেই পারবেন না। উনি শুকিয়ে এ রকম হয়ে গেছেন। উনি খেতে পারছেন না, কিছুই খেতে পারছেন না।”

কারও সহায়তা ছাড়া খালেদা জিয়া ‘চলাফেরা করতে পারছেন না’ বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “পিজিতে (বিএসএমএমইউ) আনার পর আপনারা দেখেছেন যে, তিনি (খালেদা জিয়া) হুইল চেয়ার ছাড়া মুভই করতে পারছেন না। প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ। তিনি এখন বিছানা থেকে নিজে উঠতে পারেন না। তাকে দুইজন হেল্প করে উঠাতে হয় এবং হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাকে টয়লেটে, ওয়াশরুমে বা খাবার টেবিলে নিতে হয়। আবার দু্জনের সাহায্য নিয়েই তাকে শোয়া বা বিছানায় নিতে হয়।

“এটা অমানবিক … একজন প্রথম শ্রেণির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির সঙ্গে যে আচরণ করা হয় উনার সঙ্গে তার চেয়েও খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।”

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে প্রায় দেড় বছর কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ওই হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ‘হচ্ছে না’ অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “তার যে খাওয়া, সেগুলো ঠিকভাবে দেওয়া হয় না। তার যে সমস্ত ফলমূল যেগুলো খাওয়া উচিত সেগুলো তিনি ঠিকমতো পান না।”

খালেদা জিয়া এখন জিহ্বার আলসারে ‘সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন’ বলে জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “তার এখন যে সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উনি কষ্ট পাচ্ছেন সেটা হচ্ছে- তার জিবের মধ্যে আলসার হয়েছে, যেটাকে টাং আলসার বলে।”

এছাড়াও দাঁতের সমস্যায়ও ভুগছেন বিএনপি প্রধান।

ফখরুল বলেন, “তার দাঁত শার্প (চোখা) হয়ে গেছে। সেটা যখন তার জিবে আঘাত করে তখনই তিনি কষ্ট পান। যার ফলে তিনি এখন কিছু খেতেও পারছেন না। এই বিষয়টা ধরা পড়ার পরে সেখানকার চিকিৎসকরা টুথ গ্রাইন্ডিং করেছিলেন যাতে শার্পনেসটা কমিয়ে এনেছিলেন। এখন তার দাঁতের শার্পনেস আরও বেশি করে দেখা দিয়েছে।

“দেশনেত্রীর দাঁতের চিকিৎসাটা বড় চিকিৎসা। তার রুট ক্যানেল করা দরকার, স্কেলিং করা দরকার, টুথ এস্ট্রাকশন করা দরকার। দুই-একটা দাঁত তার নষ্ট হয়ে গেছে বয়সের কারণে, সেগুলো তুলে ফেলা দরকার।”

ইনসুলিন নেওয়ার পরও খালেদা জিয়ার ‘ব্লাড সুগার’ নামছে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “উনি ডায়াবেটিসের তিনটা ওষুধ খাচ্ছেন, তারপরও কিছুতেই তা ২০ এর নিচে নামছে না, যেটা অত্যন্ত অ্যালার্মিং। এর ফলে জিহ্বার আলসার আরও বাড়ছে।”

আর্থ্রাইটিস ও ফ্রোজেন শোল্ডার সমস্যার কারণে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আরও ‘অবনতি ঘটছে’ বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। 

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়া। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল তাকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়। এরপর থেকেই সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সেখানে তার ‘সুচিকিৎসা হচ্ছে না’ অভিযোগ করে খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী দেশের হাসপাতালে অথবা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।

সেই দাবি পুনর্ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, “অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। তার পছন্দ অনুযায়ী দেশে অথবা বিদেশে, যেখানে তিনি চিকিৎসা করাতে চান সেখানে তার চিকিৎসা করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন বিএনপি মহাসচিব: “আপনারা দয়া করে এই বিষয়টাকে একটু গুরুত্ব দিয়ে জনগণের সামনে, সরকারের সামনে তুলে ধরেন। যাতে করে এই নেত্রী, তিনি জনগণের নেত্রী তিনি ডিজার্ভ করেন ভালো ট্রিটমেন্ট যেন পান।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা খেয়াল করে দেখবেন ৩ সপ্তাহ আগে ম্যাডামের টুথ গ্রাইন্ডিং করা হয়েছিল। তার দাঁতের শার্পনেসটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

“গত ১৫ দিন যাবত অর্থ্যাৎ গত ৬-৭ তারিখে ডেন্টাল ডিপার্টমেন্টে কল করা হয়েছিল। তারা গত পরশু দিন উনাকে (খালেদা জিয়া) দেখেছেন। এ ব্লক থেকে কেবিন ব্লকে যেতে যদি ডাক্তার কল দিলে ১০ দিন সময় লাগে তাহলে এই ধরনের রোগীর প্রতি এই ধরনের আচরণ এটা কী ইন্ডিকেট করে?”

বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার দাঁতের সুচিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই চিকিৎসক।

তিনি বলেন, ~ডেন্টাল ডিপার্টমেন্ট এ ব্লকের চার তলায়; সেখানে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে আপনারা সাংবাদিকরা একবার ঘুরে আসলে দেখতে পারেন যে, সত্যিকার অর্থে কী আছে।

“ম্যাডামের মতো ৭৫ বছরের নেত্রীর কোনো না কোনো সমস্যা হলে জরুরিভাবে ম্যানেজ করবে কীভাবে? সেখানে কী সুযোগ-সুবিধা আছে?”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

পুরনো খবর