চরম সংকটে মা যা করেন, নেত্রী আমার জন্য তাই করেছেন: কাদের

সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2019, 02:58 PM
Updated : 15 May 2019, 03:05 PM

তিনি বলেছেন, চরম সংকটে একজন মা তার সন্তানের জন্য যা করেন, শেখ হাসিনাও তার জন্য তাই করেছেন।

দলীয় সভাপতির প্রতি নিজের মনোভাব বোঝাতে অচেতন অবস্থার একটি ঘটনাও তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।

“সেই সময়ে আমার মধ্যে আমি ছিলাম না। শুনেছি আপনজন এই সময় কাছে এসে ডাকলে মৃত্যুপথযাত্রী সাড়া দেয়। শেখ হাসিনা আমাকে নাম ধরে ডেকেছিলেন তখন আমি সাড়া দিয়েছিলাম- এটা পরে আমাকে বলেছে।” 

৬৭ বছর বয়সী ওবায়দুল কাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ছাড়াও শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ সিওপিডিতে (ক্রনিক অবসট্রাকটিভপালমোনারি ডিজিজ) ভুগছেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের গত ৩ মার্চ সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এনজিওগ্রামে কাদেরের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ব্লক স্টেন্টিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা সংজ্ঞাহীন ছিলেন ওবায়দুল কাদের। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিসিইউতে দেখতে এসে নাম ধরে ডাকলে কাদের চোখ মিটমিট করেছিলেন বলে সে সময় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছিলেন।

তবে তখনও শঙ্কামুক্ত ছিলেন না ওবায়দুল কাদের। পরদিন সকালে তার চেতনা ফেরার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

পরে অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৪ মার্চ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। ভর্তি করা হয় মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।

এতদিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর ভিভিআইপি টার্মিনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “দুই মাস ১১ দিন আগে আমার জীবন ছিল চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। বাঁচব কি না এ নিয়ে সংশয় ছিল। সেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় এবং আমাদের প্রিয় নেত্রীর, যিনি চরম সংকটে মা তার সন্তানের জন্য যা করে তিনি আমার জন্য তাই করেছেন, তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই। যিনি মমতাময়ী মা, সত্যিই তার কাছে আমার ঋণের বোঝা বেড়ে গেল।”

প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানার প্রতি কৃতজ্ঞা জানান কাদের: “শেখ রেহানা, তিনি কোরআন শরীফ পাঠ করে আমার জন্য দোয়া করেছেন। তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।”

অসুস্থতার মধ্যে সারা দেশের মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা পেয়েছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সারা দেশের মানুষ দলের এবং দলের বাইরের সবাই আমার জন্য দোয়া করেছেন এমনকি প্রবাসী বাঙালিরা আমার পাশে ছিলেন। সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো মানুষের ভালোবাসা, আমি তা অর্জন করেছি। এত ভালোবাসা মানুষের, এত দোয়া আমি পেয়েছি!

“সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা রইল, আমি আপনাদের পাশে আছি। একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় অর্জন জনগণের ভালবাসা পাওয়া, যা আমি পেয়েছি।”

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি নতুন উদ্যোমে সংগঠনের কাজে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আসুন আমরা নতুন উদ্যোমে কাজ করে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করি। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রতি, আমার অনুপস্থিতিতে তারা টিমওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হতে দেননি।”

সেখানে উপস্থিতদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আর পাঁচ মিনিট পরে যদি আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আসতাম তাহলে অন্য ঘটনাও ঘটে যেতে পারত, আপনারা কি তা ভেবেছেন?”

এ সময় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসক, মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসক এবং ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আহমেদ হোসেন, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীনসহ দলের নেতারা বিমানবন্দরে ওবায়দুল কাদেরকে স্বাগত জানান।