আমি রাজা হতে আসিনি: জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে জি এম কাদের বলেছেন, রাজা বা জমিদার হতে নয়, দলকে ‘সঠিক পথে’ পরিচালনা করাই হবে তার প্রধান কাজ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2019, 10:03 AM
Updated : 6 May 2019, 01:23 PM

সোমবার ঢাকার বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় যুব সংহতির এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই কাদেরের এমন বক্তব্য আসে।  

তিনি বলেন, দলে এ মুহূর্তে ভাঙ্গনের আশঙ্কা তিনি দেখছেন না। ঐক্য ধরে রাখতে তিনি দলের সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন।

জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর শিকদার লোটনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁও এসেছিলেন।

জি এম কাদের বলেন, “আমি রাজা বা জমিদার হতে আসিনি। কারও ওপর কর্তৃত্ব করতে আসিনি। দলের বড় দুঃসময়ে আমি রাজনীতিতে এসেছি, যখন দলকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল সরকারি মেশিনারি। আমি রাজনীতিতে লাভবান হতে আসিনি। আমি সবাইকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি, এটাই আমার লক্ষ্য।”

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের বয়স এখন নব্বই ছুঁই ছুঁই। গত জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে নিজের চেয়ার ছোট ভাই কাদেরকে একপ্রকার উইল করে দিয়েছিলেন তিনি।    

কিন্তু দেশে ফেরার পর মার্চ মাসে জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন এরশাদ। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার জায়গায় আনেন স্ত্রী রওশনকে। 

এরপর দুই সপ্তাহ না গড়াতেই দলের কো চেয়ারম্যানের পদে ছোট ভাইকে ফিরিয়ে আনেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। পরে গত শনিবার রাতে এরশাদ নিজের বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে জি এম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদে আসীন করেন।

জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। দলের নীতিনর্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তগুলো চেয়ারম্যান একা নেন বলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন কেউ কেউ।

তাদের উদ্দেশে জি এম কাদের সোমবারের অনুষ্ঠানে বলেন, “এখন থেকে দলের কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়া হবে না। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “দু-একজন যারা আছেন, তারাও নিশ্চয় অনুধাবন করবেন যে আমি তাদের উপর কর্তৃত্ব করার জন্য আসিনি। আপনারা আসবেন।দলের ভালোর জন্য আপনারা মতামত দেবেন। আপনাদের কথা মত আমি দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেব।”

জিএম কাদের প্রতিশ্রুতি দেন, দলে কারও কিছু পাওয়ার থাকলে তিনি থাকবেন সবার পেছনে। কাউকে ছোট করার জন্য তিনি নেতৃত্ব করবেন না। দলের রাজনীতিতে তিনি ‘গুণগত পরিবর্তন’ আনবেন।

দলের নেতাকর্মীদের একতা ধরে রাখার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি শৃঙ্খলার বিষয়েও সতর্ক করেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “দল ভেঙে পড়ার বিষয় এখানে আসেনি। যদিও শৃঙ্খলার বিষয় এখানে থাকে, সেটা যে কোনো সময় হতে পারে। নিয়ম শৃঙ্খলার ভেতরে যারা থাকবে না, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আলমগীর শিকদার লোটন দলের ‘ত্যাগী’ নেতাকর্মীদের ‘বঞ্চনার কথা’ অনুষ্ঠানে তুলে ধরলে জি এম কাদের বলেন, “যারা দলে জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন ও আনুগত্য প্রকাশ করেছেন, কিন্তু সেভাবে সম্মান পাননি, আমি তাদের সামনে নিয়ে আসব।”

হুট করে উড়ে এসে কেউ দলের প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “হুট করে কেউ এসে দলে ঢুকে পড়লে সেটা দলের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক হবে না। এটা আর হবে না।”

ভুলভ্রান্তি শুধরে নিয়ে এবার দলের সাংগঠনিক দিক মজবুত করার প্রত্যয় জানান দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

তিনি বলেন, “এখন দলকে রিকভারি করার সময় এসেছে। মানুষ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, আওয়ামী লীগের অবস্থাও আগামী পাঁচ বছরে আরও খারাপ হবে। সুতরাং দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে। নিজেদের ভুল ত্রুটিগুলো আমার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসে বলব। কিন্তু কানামাছি খেলা যাবে না। অন্য কিছু করার ছল করা যাবে না।”

অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, সাঈফুদ্দিন মিলন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া ও যুগ্ম মহাসচিব নুরুল আলম নুরু সভায় বক্তব্য দেন।