জাতীয় পার্টিতে ফের অস্থিরতা

এইচ এম এরশাদ ছোট ভাই জিএম কাদেরকে আবারও দলের ‘ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান’ ঘোষণা করার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাতীয় পার্টির রাজনীতি।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2019, 05:47 PM
Updated : 6 April 2019, 05:55 PM

শনিবার সকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ওই ঘোষণা দেওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে তৎপরতা শুরু করেন দলের একটি অংশ, যেখানে সভাপতিমণ্ডলীর বেশ কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন।

এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চেয়ারম্যানের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে দলের একটি অংশ এখন ষড়যন্ত্র করছে।”

এই দলে রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সুনীল শুভ রায় ও খালেদ আখতারসহ কয়েকজন রয়েছেন বলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাকের ভাষ্য।

তিনি বলছেন, জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ এই নেতারা জি এম কাদেরকে ‘পদচ্যুত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন’।

সকালে জিএম কাদেরকে নিয়ে এরশাদের ঘোষণা আসার পরপরই এরশাদের বাসভবন ও বনানী কার্যালয়ে রংপুর এলাকার নেতাকর্মীদের ভিড় তৈরি হয়। তারা জটলা বেধে নানা স্লোগান দেন।

এরশাদ সকালে জিএম কাদেরকে দলের ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান ঘোষণা করার পর তার বাসার সামনে অবস্থান নেন কাদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত রংপুর অঞ্চলের নেতাকর্মীরা

ওই অবস্থান সম্পর্কে মোস্তাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জি এম কাদেরকে নিয়ে আবারও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে কোনো নেতা এরশাদের বাসভবনে এলে তাদের প্রতিহত করা হবে।”

সেখানে অবস্থানকারী জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, “বিগত দুই সপ্তাহ যাবত পার্টির মাঝে ঘাপটি মারা থাকা কুচক্রীরা পার্টিকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছেন। ভেবে দেখতে হবে এদের উৎপত্তি কোথা থেকে। যারা ষড়যন্ত্র করছেন তারা এক সময় বিএনপি থেকে এ পার্টিতে এসেছে।

“এদের মাঝে কেউ কেউ এরশাদের বুকে ছুরিকাঘাত করে চলে গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন। অনেকে জাপাকে ভেঙে বিএনপি-জামাত জোটের মিশন বাস্তবায়ন করতে চায়।”

দলের বিপক্ষ শিবিরের নেতাদের ইঙ্গিত করে জি এম কাদের বলেন, “মুষ্টিমেয় একটা গোষ্ঠী কাজ করছে। হাতেগোনা পাঁচজন অ্যাকটিভলি আমার পেছনে লেগেছে। তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে। এদের কেউ কেউ সংসদে আছেন, কেউ বাইরে। তাদের কাছে রাজনীতি অনেকটা ব্যবসার মতো হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত স্বার্থটার্থ মিলিয়ে অনেক কারবার হয়েছে কয়েক বছরে।”

এ বিষয়ে জানতে ওই নেতাদের কাউকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এরশাদ তার ভাই জি এম কাদেরকে দলের ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন।

এর তিন মাস না পেরোতেই গত ২২ মার্চ জি এম কাদেরকে ‘অযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে দলের কো চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেন এরশাদ। কেড়ে নেওয়া হয় জাতীয় সংসদে দলের উপনেতার পদও। উপনেতার পদে আসীন হন এরশাদপত্নী রওশন এরশাদ।

দলীয় পদায়ন, সিদ্ধান্ত নিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। জি এম কাদেরের সাময়িক পদচ্যুতিতে রওশন এরশাদের ভূমিকা থাকতে পারে বলে দলের অনেকের সন্দেহ।

এর মধ্যে গত মঙ্গলবার জাতীয় যুব সংহতির এক অনুষ্ঠানে জি এম কাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে রওশন এরশাদ বলেন, তাদের দলে ‘কোনো দ্বন্দ্ব নেই’।

জি এম কাদেরও তখন ভাবির সঙ্গে একমত হয়ে বলেছিলেন, পার্টিতে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে।

এর দুদিনের মাথায় বৃহস্পতিবার জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ ফিরিয়ে দেন এরশাদ। তার দুদিনের মাথায় নিজের উত্তরসূরি ঘোষণা করলেন তিনি। 

এই ঘোষণায় নতুন করে তোড়জোড় শুরু করা দলের ওই নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে জিএম কাদের বলেছেন, “তারা যদি দলের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করতে চান, তবে এসব ছাড়ুন। না হলে দল থেকে চলে যান। আমাদের দল টিকে থাকবে। আমার বিশ্বাস, শতকরা ৯০ ভাগের উপর নেতাকর্মী আমার সঙ্গে থাকবে।”

দলের ভেতরে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

তবে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জি এম কাদের চেয়ারম্যান হবেন, এটা আমিও চাই। তবে এই যে পরিবর্তন, সেটা সবার ভোটে হোক না কেন, তাহলে ওনার গ্রহণযোগ্যতা কর্মীদের মাঝে বাড়বে।”