জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের পরদিন শুক্রবার গণভবনে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি গেছে বিকল্প ধারার সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি চৌধুরীর কাছে।
তার আগে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নিজেদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন বি চৌধুরী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই প্রস্তাবের চিঠি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমন্ত্রণের চিঠি দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদকে ঢাকার বারিধারায় বি চৌধুরীর বাড়িতে পাঠান শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
হাছান মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকল্প ধারার সভাপতি সংলাপের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে উনাকে শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমি সেই চিঠি দিয়ে গেলাম।”
চিঠিতে ঐক্যফ্রন্টের মতোই সংবিধান সম্মত সব বিষয়ে আলোচনার জন্য নিজের দ্বার খোলা থাকার কথা জানান শেখ হাসিনা।
চিঠিটি বি চৌধুরী নিজেই গ্রহণ করেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিকল্প ধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুকসহ অন্য নেতারা।
এর আগে বিকালে বিকল্প ধারার সভাপতিমণ্ডলীর এক বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আবদুল মান্নান, শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, মুহম্মদ ইউসুফ, ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
এরপর সন্ধ্যায় শেখ হাসিনাকে লেখা বি চৌধুরীর চিঠি নিয়ে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান বিকল্প ধারার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রউফ মান্নান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক।
ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর চিঠিটি আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৌঁছে দিয়েছি।”
তারা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের হাতে চিঠিটি দেন।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বি চৌধুরী লেখেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা আলোচনার যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ায় তারা ‘আনন্দিত’।
এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ‘জাতির এই রাজনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে’ বিকল্প ধারাকেও সংলাপে ডাকার আহ্বান জানিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সুযোগ চান বি চৌধুরী।
“আমরা লক্ষ্য করে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে, আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি, রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই, সেই প্রস্তাবটি আপনি গ্রহণ করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে বসার জন্য আপনার সময় ও সুবিধামতো আমাদের আমন্ত্রণ জানালে আমরা খুশি হব।”
“জাতির এই রাজনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সকলের শুভেচ্ছা ও সৌহার্দ্যের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে বিশ্বাস করি,” লেখেন বি চৌধুরী।
একই ধরনের আরেকটি চিঠি দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। তা দেন বিকল্প ধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান।
কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠানোর পর আগামী বৃহস্পতিবার তাদের গণভবনে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের প্রক্রিয়ায় বিকল্প ধারাও ছিল; কিন্তু বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ না ছাড়ায় তাদের নিয়ে আপত্তি থেকে শেষ মুহূর্তে তাতে যোগ দেয়নি বি চৌধুরীর দল।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগে কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী মিলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৫ দফা দিয়েছিলেন।
ওই পাঁচ দফায় ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবি ছিল।
পাশাপাশি সংসদ ভেঙে দেওয়া, ইসি পুনর্গঠন, ইভিএম ব্যবহার না করা, সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েনের দাবি তুলেছিলেন তারা।
বি চৌধুরীকে বাদ দিয়ে কামাল হোসেন বিএনপি, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েছেন, তারা ৭ দফা দিয়েছে। তাতে নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি যুক্ত হয়েছে।