শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা আসার আধা ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান জানান বি চৌধুরী।
বিকল্প ধারার সভাপতির ঢাকার বারিধারার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, তারা যুক্ত হওয়ার পরও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন কর্মসূচি এবং বক্তব্যের বিষয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছিল।
বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী বলেন, “জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য যদি হয় বিএনপিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে ক্ষমতায় বসানো, তাহলে তাদের সাথে আলোচনায় আমরা নাই।”
আ স ম আবদুর রবের জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে এক বছর আগে যুক্তফ্রন্ট নামে জোট গঠন করে পথ চলা বি চৌধুরী কিছু দিন ধরে কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে জোট বাঁধতে চলছিলেন।
সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে পাঁচ দফা দেওয়ার পর তারা একসঙ্গে কয়েকটি কর্মসূচিও পালন করেন।
এই প্রক্রিয়ায় বিএনপির যুক্ত হওয়ার আলোচনা শুরুর পর বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামী ছেড়ে আসার শর্ত দেয় বিকল্প ধারা।
এরপর জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না আসার মধ্যেই ঐক্য প্রক্রিয়ার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে শনিবার বিকালে বেইলি রোডে কামাল হোসেনের বাড়িতে যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপি নেতাদের বৈঠকের সময় ঠিক হয়।
বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি চৌধুরী বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দলীয় নেতাদের নিয়ে কামালের বাড়িতে যান। কিন্তু বাড়ির দরজা বন্ধ দেখে গাড়িতেই কিছুক্ষণ বসে থেকে ফিরে যান তারা।
বি চৌধুরীরা যখন কামালের বাড়ির ফটকে তখন মতিঝিলে নিজের চেম্বারে ফখরুল, রব, মান্নাকে নিয়ে কামালের বৈঠক চলে। তারা জানান, সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা।
অন্যদিকে কামালের বাড়ির ফটক বন্ধ পেয়ে ক্ষুব্ধ মাহি সাংবাদিকদের বলেন, “বাসায় দাওয়াত দিয়ে গেইট খোলার কেউ নেই! একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে এভাবে ডেকে এক রকম ব্যবহার কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।
“আমরা মনে করি, এই ঐক্যটা না হওয়ার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র আছে, এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব।”
এরপর জাতীয় প্রেস ক্লাবে কামাল, ফখরুল মান্না, রবদের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই বি চৌধুরীর বাড়িতে শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন; সেখানে বিকল্প ধারার সভাপতির সঙ্গে ছিলেন দলের মহাসচিব এম এ মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব মাহি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক।
সংবাদ সম্মেলনে বি চৌধুরী বলেন, যুক্তফ্রন্ট এখনও আছে।
সেক্ষেত্রে জোট শরিক অন্য দুই দলের নেতা রব, মান্নার প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হলে মাহি বলেন, “তারা তারা সেখানে পরকীয়া করতে গেছেন।”
“স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে ঐক্য প্রক্রিয়া চলছে, তার সাথে আমরা নেই,” বলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের এক সময়কার সংসদ সদস্য মাহি।
বিএনপির সঙ্গে আর আলোচনায় বসতে অনাগ্রহের কথা জানালেও দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব বি চৌধুরী জানান, ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে সরে আসছেন না তারা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মাহি বক্তব্য দেন। তিনি তাদের না জানিয়েই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, “ ঐক্য করতে আমরা চেয়েছিলাম, কিন্তু বারবার বাধা এসেছে।”
৯ অক্টোবর রবের বাসায় ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠকে একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা ঘটার কথা উল্লে করে তিনি বলেন, তারপরও ‘ঐক্যের খাতিরে’ তারা সব মেনে নিয়েছিলেন।
মাহি বলেন, শুক্রবার রবের বাড়িতে বৈঠকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ৭ দফা ঘোষণার কথা প্রথম জেনে তারা বলেছিলেন, এ বিষয়ে বি চৌধুরী ও কামাল হোসেনের আলোচনার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত করতে হবে। সে অনুযায়ী শনিবার বিকালে কামাল হোসেনের বাড়িতে বৈঠকের সময় ঠিক হয়েছিল।
তিনি বলেন, “সেই অনুযায়ী, কামাল হোসেনের বাড়িতে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানান গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। রওনা হয়ে পথে আমরা বারবার ফোন দিয়েছি, তারা ফোন ধরেননি। আমাদের মহাসচিব মান্নান সাহেব ফোন করেছেন, উনার (কামাল) এক সহকারী ফোন ধরে বলেন, আমাদের পরে জানানো হবে।
“আমরা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছি, সেখানে আমাদের গেইট খোলার জন্য কেউ ছিল না। আমরা জানতে পারি, মতিঝিলে একটি বৈঠকে রয়েছেন কামাল হোসেন। আমাদের তখন সেখানে যেতে বলা হয়।”
পুরো বিষয়টি সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর জন্য অপমানজনক ছিল বলে মন্তব্য করেন তার ছেলে মাহি।
বি চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কামাল হোসেন প্রথমে গণফোরাম নিয়ে পরে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের সঙ্গে আসতে চান বলে যখন জানালেন আমরা আনন্দিত হলাম।
“বিএনপির প্রস্তাব যখন আসল, বিএনপির মহাসচিব এক বছরের বেশি আগে থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। নিজেও আমাদের সঙ্গে ৫/৬ বার দেখা করেছেন।”
বিএনপিকে দুটো শর্ত দিয়েছিলেন বলে জানান বি চৌধুরী; তার একটি হল স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তিকে না রাখা এবং কোনো দলের একক আধিপত্য না থাকা।
“আমি বলতাম, আমাদের দুটি ব্যাপার আছে- আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি, কেবল তাদের সঙ্গে ঐক্য করতে পারি। দুই নম্বর, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারা আনতে হলে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিকল্প ধারা মহাসচিব মান্নান বলেন, “আজকের পর থেকে জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপির সাথে কোনো বৈঠকে বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ বিকল্প ধারা দেবে না।
“স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গ ত্যাগ করে জাতীয় সংসদে ভারসাম্যের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা বিএনপির পক্ষ থেকে না আসা পর্যন্ত শুধুমাত্র বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর জন্য বিকল্প ধারা কোনো চক্রান্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না।”
ড. কামালদের সংবাদ সম্মেলনের খবর