কাদেরের ভোটের প্রচার বেআইনি: রিজভী

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সড়ক পথে যে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন, তাকে বেআইনি বলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচির রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2018, 12:30 PM
Updated : 23 Sept 2018, 12:35 PM

তার দাবি, ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী হিসেবে সরকারি গাড়ি ও সুবিধা ব্যবহার করে দলীয় প্রচার চালাচ্ছেন এবং তাও করছেন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগে।

কাদের ঢাকা থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রাম সফরে থাকার মধ্যে তা নিয়ে রোববার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন রিজভী।

সপ্তাহ দুয়েক আগে উত্তরাঞ্চলের পথে ট্রেনে সাংগঠনিক সফরের পর এখন সড়ক পথে চট্টগ্রাম অঞ্চল সফর করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের।

নিজের এই সফরকে নির্বাচন যাত্রা বলছেন তিনি। সফরে বিভিন্ন স্থানে পথসভায় তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন, বিএনপিকে ভোট না দিতে মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।

রিজভী বলেন, “ট্রেন মার্চ ব্যর্থ হয়েছে জনগণের ক্ষোভের মুখে, এখন রোড মার্চ। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে উনি নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। এটা বেআইনি।

“হবুচন্দ্র রাজার দেশে এই গবুচন্দ্র মন্ত্রীরা না আইন মানে, না কানুন মানে। ওরা মনে করে এটা তাদের জমিদারি। সরকারি গাড়িকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে।”

ক্ষমতাসীনদের বেআইনি কর্মকাণ্ডের অবসানে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে দাবি করে এক্ষেত্রে কামাল হোসেন ও একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বিএনপির যোগ দেওয়ার কথা বলেন রিজভী।  

একে ‘সাম্প্রদায়িক ঐক্য’ বলার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে গেলে যা হয়। সেজন্য এক এক দিন একেক রকম কথা বলছেন।

“আপনারা (আওয়ামী লীগ) কাকে সাম্প্রদায়িক বলছেন? এটা সুস্পষ্টভাবে বলা উচিৎ। আপনারা চুক্তি করেননি হুজুরদের সাথে? তখন সাম্প্রদায়িকতা কোথায় ছিল? জামায়াতে ইসলামীর সাথে একসাথে আন্দোলন করেননি? একই মঞ্চে বসেননি? এসব ভুলে যান কেন।”

আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় ঐক্য হয় না- কাদেরের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, “তারা (আ. লীগ) তো আগেই জনগণকে ছেড়েছে, জাতিকে ছেড়েছে। যারা জাতি ও জনগণকে ত্যাজ্য করে তাদের সাথে আর ঐক্যের কী আছে?”

বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পরিসংখ্যান দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, গত ৩/৪ দিনে রাজধানীর দুটি থানায় ৭টি মামলায় দলের আইনজীবীসহ প্রায় ১৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

“সারাদেশে প্রায় ১৬ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে গত দুই দিনে মামলা দেওয়া হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত তিন লাখ ২৫ হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে।

“গায়েবী মামলার ছড়াছড়িতে সারাদেশে বিরাজ করছে এক আতঙ্কের পরিবেশ। মামলার ব্যাপক বিস্তারে সরকার যেন জনগণের সঙ্গে প্রেতাত্মাসূলভ আচরণ করছে।”

‘২১ আগস্ট একটি প্রহেলিকা’

২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের দিন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানকে আসামি করার প্রতিবাদ আবারও জানান রিজভী।

তিনি বলেন, “২১ অগাস্ট বোমা হামলার পুরো বিষয়টাই একটি প্রহেলিকা। আওয়ামী রাজনীতির কুটিল পাটিগণিত। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার দেশীয় ও বৈদেশিক চক্রান্তের বিপজ্জনক ব্লুপ্রিন্ট।

“বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার নানাবিধ ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ২১ অগাস্ট বোমা হামলা মামলায় সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে আইন আদালতকে। কারণ আইন আদালত এখন সম্পূর্ণভাবে সরকারের হাতের মুঠোয়।”

সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দকে ব্যবহার করে সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়ে তারেক রহমানকে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “কাহার আকন্দের দাখিলকৃত চার্জশিটের বর্ণনা অনুযায়ী দেখা যায়, হাওয়া ভবনে তথাকথিত ষড়যন্ত্রমূলক সভা অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যত জন (৮/১০ জন) সাক্ষীকে তিনি ভয় দেখিয়ে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছেন, তাদের একজনও কত তারিখে সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি।

“এত বড় বড় পদের মানুষদের সাথে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা, সেই সভার তারিখ কেউ মনে রাখতে পারবে না-এটা রীতিমতো বিস্ময়কর ঘটনা।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, হারুনুর রশীদ, আবেদ রাজা উপস্থিত ছিলেন।