সড়ক পরিবহন আইনের সংশোধন চায় বিএনপি

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার সংশোধন চেয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2018, 11:20 AM
Updated : 10 August 2018, 11:20 AM

সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের দাবি মানার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকার মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইনের যে সংশোধনী অনুমোদন করেছে তা পরিবহন মালিক সমিতি ছাড়া সবাই প্রত্যাখান করেছে।  সংশোধিত এই আইনে ছাত্রছাত্রীদের দাবিকৃত নিরাপদ সড়ক অর্জিত হবে না।

“আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন  এবং দীর্ঘদিন ধরে যারা নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করছেন তাদের সাথে অর্থবহ আলোচনা করে প্রস্তাবিত আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর দাবি জানাচ্ছি।”

দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আন্দোলনের মুখে গত ৬ অগাস্ট সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় শাস্তি দুই বছর বাড়িয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

তবে সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে যে নয় দফা উঠেছিল, তার প্রথমটিই ছিল দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে হবে।

অঅইনটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চালকের শাস্তির মাত্রা ‘কম’ দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক নেতা প্রস্তাবিত আইনে জনপ্রত্যাশার ‘প্রতিফলন ঘটেনি’ বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা ‘বেশি’ হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “এই আইনে সড়ক পরিবহন খাতে মানুষ হত্যা ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার এড়ানোর স্পষ্ট দিক নির্দেশনা কিংবা কঠোর শাস্তির বিধান নেই।

“সবাই জানেন যে শুধু চালকের অপরাধে দুর্ঘটনা ঘটে না। চালক নিয়োগ, গাড়ির ফিটনেস যথাযথ করা এবং চালকদের বেতন-ভাতা, অবসর, শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব যে মালিকদের, তাদের বিরুদ্ধে আইনে কার্য্কর পদক্ষেপ তথা বিআরটিএর অভ্যন্তরীন দুর্নীতি দমনের কোনো বিধান রাখেনি। দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলা হবে কিনা  এটা নির্ধারণের দায়িত্বে নিরপেক্ষ, যোগ্য, সংশ্লিষ্ট কাউকে রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে হাই কোর্টের মতামতেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তারদের মুক্তি এবং শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা আক্রমণ করেছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশে এমন কোনো পাগল নেই যে, তারা বিশ্বাস করবে, পুলিশের সহায়তায় এবং তাদের সমানে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি-সোটা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মারপিট করবে, দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের কোপাবে, ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিস আক্রমণ করবে আর তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে না।

“হেলমেট পরা ও মুখোশধারী আক্রমণকারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মী ছিল, এটা আহত সব সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা বলার পরেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের বিচার করার জন্য নাম চান। এমন বাজে ও নোংরা রসিকতায় তিনি আনন্দ পেতে পারেন কিন্তু দেশবাসী লজ্জিত হয়। পত্রিকায় আক্রমণকারীদের ছবি ছাপার পরও কেন ওবায়দুল কাদের ছবি ও নাম চান? কেন তথ্যমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠাতে হয়?  কি বিচিত্র এই দেশ। আর বিচিত্র বলেই তারা অপরাধ করে তার দায় অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে।”

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপির সমর্থনের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের সমর্থন যদি অপরাধ হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তারা পর্যন্ত সকলে একই অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার কথা।”

দৃক গ্যালারির কর্ণধার ও প্রবীণ আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলমের বাসা ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।

ক্ষমতাসীনরা বিএনপি আতঙ্কে ভুগছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “উনাদের একটা বিএনপি ভীতি আছে- বিএনপি ফোবিয়া। যেমন একটা বিশেষ প্রাণী আছে তারা পানি বা জল দেখলে অসুখ হয়, জলাতঙ্ক রোগ। ওদের (আওয়ামী লীগ) আছে বিএনপি আতঙ্ক রোগ।

“যেখানে যা কিছু পায় সবকিছুর মধ্যেই বিএনপি দেখতে পায়। কোনো কিছু দেখলে সেটাকে বিএনপি বলে। রাত্রে বেলাও তারা মনে হয় ঘুমাতে পারে না।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।