রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে তারেকের পাসপোর্ট জমা: বিএনপি

নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের জন্য নয়, যুক্তরাজ্যে ‘সাময়িকভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়’ নিতে তারেক রহমান সে দেশের সরকারের কাছে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2018, 06:58 AM
Updated : 24 April 2018, 05:59 PM

তার নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সরকার ও সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তৃতা ও বিবৃতিতে এটা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয় যে, দেশে তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। এই অবস্থায় তিনি (তারেক রহমান) বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকারবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গতকারণেই তা পেয়েছেন।

“এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট জমা রেখে তাকে ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়েছে। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন।”

২০০৮ সালে সেপ্টেম্বরে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার পর এই প্রথম বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানের লন্ডনের অবস্থানের বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য জানানো হলো।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে মা খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেক প্রবাসে থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার আড়াই মাসের মাথায় শনিবার লন্ডনে শাহরিয়ার জানান, তারেক বাংলাদেশি পাসপোর্ট ত্যাগ করেছেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ারকে আইনি নোটিস পাঠান বিএনপির এক আইনজীবী। বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে রুহুল কবির রিজভী সরকারকে বলেন, তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাকলে তা দেখান।

এরপর সোমবার সন্ধ্যায় নথিপত্র নিয়ে ঢাকার গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে জমা দেওয়ার একটি নথি দেখিয়ে তিনি বলেন, তার হিসাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন আর বাংলাদেশের নাগরিক নন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ‘অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি’ মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, “কী কী কারণে কেউ জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন- এটা যিনি জানেন না। তেমন একজন ব্যক্তির পক্ষেই ‘অনির্বাচিত সরকারের’ মন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জ্বাজনক।

শুধুমাত্র জমার জন্য তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডন হাই কমিশনে পাঠানো হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কোনো আইন বা যুক্তিতে প্রমাণিত হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন।

“এই ধরণের উদ্ভট ধারণাকে তত্ত্ব কিংবা তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেইসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূখর্তা ও উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।”

জন্মসূত্রে তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধানেও পরিষ্কার করে লেখা আছে যে জন্মসূত্রে যারা বাংলাদেশের নাগরিক তাদের নাগরিকত্ব কোনোভাবে অন্যকোনো জটিল অবস্থা না হলে সেটা যায় না।

“পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব এক বিষয় না। দেশের ১৬ কোটি মানুষের পাসপোর্ট নেই তাই বলে কি এই মানুষরা বাংলাদেশের নাগরিক না?”

দেখানো চিঠি ‘রহস্যজনক’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বৃটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের যে চিঠি দেখিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “দেশের জনগণ ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছে যে, তাদের কষ্টার্জিত বিপলু পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডনে সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা জনাব তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের তিনটি পাতা এবং বৃটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের- যা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে- সেই বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি ফটোকপি। এই চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে।

“কী বিচিত্র এই সরকার! কী দুর্বল তাদের অপকৌশল!”

সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের আইনজীবী দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্যে যে এসাইলাম সিক করেছেন, সেই এসাইলামে বৃটিশ আইনের ১৭ ধারায় মোতাবেক উল্লেখ আছে যে, পাসপোর্ট অথবা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট কারো কাছে যাবে না। শুধুমাত্র যিনি হোল্ডার তার কাছে যাবে। অন্য কোনো থার্ড পার্টির কাছে যাবে না।

“অতত্রব পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে দাবি করছেন পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাই কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে- এটা রহস্যজনক ও সন্দেহজনক। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট যে, বৃটিশ আইন অনুযায়ী তারেক রহমানের পাসপোর্টটা বাংলাদেশ হাই কমিশনের যাওয়ার কথা নয়।”

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “তারেক রহমান সাহেবের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ভবিষ্যতে নিঃসন্দেহে তিনি সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।