নথি দেখিয়ে প্রতিমন্ত্রী বললেন, তারেক আর নাগরিক নন

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে জমা দেওয়ার একটি নথি দেখিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, তার হিসাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন আর বাংলাদেশের নাগরিক নন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2018, 01:17 PM
Updated : 23 April 2018, 04:19 PM

পাসপোর্ট জমা দেওয়ার প্রমাণ দেখাতে বিএনপির চ্যালেঞ্জ আর তারেক রহমানের উকিল নোটিসের পর সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসে তারেকের মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের কপি এবং ব্রিটিশ হোম অফিসের একটি নথি দেখান তিনি।

মা খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেক প্রবাসে থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার আড়াই মাসের মাথায় শনিবার লন্ডনে শাহরিয়ার জানিয়েছিলেন, তারেক বাংলাদেশি পাসপোর্ট ত্যাগ করেছেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ারকে আইনি নোটিস পাঠান বিএনপির এক আইনজীবী। বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে রুহুল কবির রিজভী সরকারকে বলেন, তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাকলে তা দেখান।

এরপর সন্ধ্যায় নথিপত্র নিয়ে ঢাকার গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তিনি সংবাদ সম্মেলনের পর ফেইসবুকে তারেকের পাসপোর্ট, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি ফেইসবুকে তুলে দিয়ে লিখেছেন, “যে তথ্য প্রমাণ তারা চেয়েছিলো, নীচে দেয়া হলো।”

শাহরিয়ার বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে ব্রিটিশ হোম অফিসের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ২ জুন তার নিজের, স্ত্রীর, ও মেয়ের পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে ‘ফেরত পাঠান’।

তিনি বলেন, “তারেক রহমানের পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছিল ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮’এ... ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তিনি যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন ছয় মাসের ভিসা নিয়ে, একই বছর পাসপোর্টের মেয়াদবৃদ্ধির আবেদন করলে, মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর করা হয়।”

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে লন্ডনে থাকা তারেকের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০১৩ সালে শেষ হয় বলে এর আগে বাংলাদেশের হাই কমিশনের কর্মকর্তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।

শাহরিয়ার বলেন, “পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যদি তিনি বিদেশে পরিচয় দিতে চান, খুব স্বাভাবিকভাবে তার উচিৎ ছিল পাসপোর্ট রিনিউ করে নেওয়া বা ভ্যালিডিটি বাড়িয়ে নেওয়া। তা না করে তিনি তার নিজের এবং স্ত্রী-কন্যার পাসপোর্ট ব্রিটিশ হোম অফিসে জমা দিয়েছেন।”

পাসপোর্ট হস্তান্তর করার অর্থই কি নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি এটাই মনে করব।

“বিদেশে আপনার পরিচয়- আপনার পাসপোর্ট। সেই পাসপোর্টটিই যখন আপনি ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তার অর্থ আপনি নাগরিকত্ব ক্লেইম করছেন না... আপনার কাছে একটাই পরিচয়পত্র ছিল, আপনি তা হস্তান্তর করে দিয়েছেন, এটা কী বোঝায়?

“তাদের এখানে আসার ইচ্ছা নেই বলেই স্বপ্রণোদিত হয়ে পাসপোর্ট হস্তান্তর করেছেন। তাদের কারও কাছেই কোনো ভ্যালিড ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই, যা দিয়ে তারা বাংলাদেশে আসতে পারবেন।”

শাহরিয়ার জানান, তারেক ও তার পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্টগুলো হাতে লেখা। তারা এমআরপির জন্য আবেদন করেননি।

বাংলাদেশ নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে চাইলে আবেদন করতে হয়, মূল পাসপোর্ট জমা দিতে হয়, অন্য যে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তার সনদের অনুলিপি দিতে হয়।

শাহরিয়ার বলেন, বাংলাদেশি পরিচয় রাখতে চাইলে তারেককে এখন নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।

তখন কী হবে- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যা করা হবে আইনানুগভাবে করা হবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে।”

বিএনপির বক্তব্যের জবাবে নথিপত্র উপস্থাপনের পর শাহরিয়ার বলেন, “এত কিছুর পরও যদি কারও কোনো প্রশ্ন থাকে, বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী দলের কেউ যদি আগ্রহী হন, আমরা ব্যবস্থা করব। লন্ডনে আমাদের বাংলাদেশ হাই কমিশনে গিয়ে দেখে আসবেন।”

বিএনপি বলে আসছে, তারেক চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে রয়েছেন, চিকিৎসা শেষ হলেই ফিরবেন। তবে কবে তার ফেরা হবে, গত ১০ বছরেও সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি।

শাহরিয়ার বলেন, “তারা বলে চিকিৎসার জন্য, হাস্যকর একটি বিষয়। অসুস্থতা তার একটি ছুতা। কারণ বাংলাদেশ থেকে তিনি যখন চলে যান,  তিনি একটা মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিলেন।”

দণ্ডিত তারেককে ফেরতে আশাবাদী প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ সরকার তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর, সেটার জন্য যুক্তরাজ্যের সাথে আমাদের আলোচনা চলছে।”

গত শনিবার লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তারেককে নিয়ে শাহরিয়ারের বক্তব্য এসেছিল।

এরপর তারেকের আইনজীবী একটি উকিল নোটিস পাঠিয়ে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিমন্ত্রীর ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। 

শাহরিয়ার এ বিষয়ে বলেন, “আমি শুনেছি একটি উকিল নোটিস ইস্যু করেছেন। একটি বিষয় ভালো লাগল, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা বোধ হয় পুনঃস্থাপিত হয়েছে। কারণ প্রতিনিয়ত তারা আস্থাহীনতার কথা বলেন।

“একজন কনভিকটেড ক্রিমিনাল এরকম একটি ভ্যালিড ডকুমেন্টেড প্রেজেন্টেশনের পরও কীভাবে উকিল নোটিস দেন, দ্যাট বি ভেরি ইন্টারেস্টিং। তারা যদি মামলা করতে চান, উই উইল ডেফিনিটলি ফেইস ইট। তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে আদালত তারেক রহমানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই আদালতের আশ্রয় নিলে তা তিনি পাবেন কি না?”

এই সংক্রান্ত আরও খবর