তারেক পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাকলে সেটা দেখান: রিজভী

তারেক রহমানের বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা দেওয়ার যে খবর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বরাতে সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2018, 08:56 AM
Updated : 23 April 2018, 03:17 PM

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নির্জলা মিথ্যা কথা বলেছেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি প্রদর্শন করুন। হাই কমিশন তো সরকারের অধীনেই, তাদের বলুন সেটি দেখাতে।”

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। এর পর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে তিনি সেখানেই বসবাস করে আসছেন।

দুই বছর আগে মুদ্রাপাচারের এক মামলায় তারেককে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় হাই কোর্ট। আর গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়।

ওই মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর এখন কারাগারে আছেন তারেকের মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার অনুপস্থিতিতে পদাধিকার বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে লন্ডন থেকে দল পরিচালনায় নির্দেশনা দিচ্ছেন তারেক রহমান।

গত শনিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডিত তারেক রহমানকে ‘যেভাবেই হোক’ দেশে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। যে অপরাধী সাজাপ্রাপ্ত, সে কী করে এখানে থাকে? কাজেই তাকে তাড়াতাড়ি ফেরত দেন।”

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও সেই অনুষ্ঠানে তারেকের বিষয়ে কথা বলেন , যা নিয়ে দেশে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সোমবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 

প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “তারেক জিয়া বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট হাই কমিশনে জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। সেই তারেক রহমান কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে?”

এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট হাই কমিশনের জমার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে উড়ো ও অবান্তর কথা বলেছেন, তার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলমের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ার জন্যই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছেন, যা মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় আত্মা বিক্রির সমতুল্য।”

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের প্রসঙ্গ টেনে এই বিএনপি নেতা বলেন, “পাসপোর্ট সারেন্ডার করে তারা, যাদের ছেলে-মেয়েরা বিদেশিদের বিয়ে করে বিদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। বিদেশে বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।”

রিজভী দাবি করেন, জিয়া পরিবারের কেউ বিদেশিদের বিয়ে করেনি, অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্বও তারা ‘গ্রহণ করেননি’।

“তারেক রহমান অসুস্থ অবস্থায় লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে মনের জ্বালা মেটানোর জন্য একেবারে উদগ্রীব হয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের লোকেরা। লন্ডনে গিয়েও অনবরত তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাকে ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা করবেন- ইত্যাদি নানা কথা তিনি বলেছেন।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।