ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারেককে ফেরত নেবই: হাসিনা

তারেক রহমানকে নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত এই ‌‘অপরাধীকে যেভাবেই হোক’ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

রিয়াজুল বাশার লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2018, 07:07 PM
Updated : 21 April 2018, 09:53 PM

শনিবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিএনপিরও কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। যে অপরাধী সাজাপ্রাপ্ত, সে কী করে এখানে থাকে? কাজেই তাকে তাড়াতাড়ি ফেরত দেন।

“ফেরত নেওয়ার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যেভাবেই হোক দেশে আমরা ফেরত নেব।”

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর স্ত্রী-কন্যা নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন তারেক রহমান। দুই বছর আগে মুদ্রাপাচার মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় হাই কোর্ট।

এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তারেকের। ওই মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে এখন কারাবন্দি তারেকের মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার অনুপস্থিতিতে পদাধিকার বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে লন্ডন থেকে দল পরিচালনায় নির্দেশনা দিচ্ছেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ অবমাননাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আরও কয়েক ডজন মামলা রয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

লন্ডনের এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া অধিকাংশ প্রবাসীই তারেককে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। কলামনিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীও একই দাবি জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউর রহমান খুনি, তার স্ত্রী খুনি এবং তার ছেলেও খুনি। এই খুনিদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।

“আপনাদের প্রবাসীদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, এই যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানোর উপযুক্ত জবাব দেওয়া। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে যে সম্মান পেয়েছে সেটা রক্ষা করতে হবে।”

তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “বিএনপিতে কি চেয়ারপারসন হওয়ার মতো একটাও লোক ছিল না?

“দুই একটা লাফাঙ্গা, সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আবার বিএনপির চেয়ারপারসন বানায়। আসামি আবার পলাতক, সে কি করে একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন হয়? তাহলে সেই দলতো দেউলিয়া দল। দলের তো কিছু নেই।”

‘রাজনৈতিকভাবে’ খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়নি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, “তা করলে ২০১৩, ২০১৪ সালে করতে পারতাম।”

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই মামলা মোকাবিলা করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন।

“অবৈধ ক্ষতাদখলকারী দল গঠন করলে সেটাও অবৈধ হয়।”

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ‘রাজনৈতিকভাবে পুর্নবাসন’ করায় জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করেন তিনি।

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “যাদের আন্দোলন মানুষ পুড়িয়ে মারা, সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়া তাদের মুখে ‘গণতন্ত্রের ছবক’ শুনতে হয়-এটা বাঙালির দুর্ভাগ্য।

“এরা দেশের সর্বনাশ করতে চায়। সমানে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে বেড়ায়।”

ক্ষমতায় থাকাকালে ‘দুর্নীতি করার জন্য’ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ‘লজ্জা পাওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিবাজ ও সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা ‘অবৈধভাবে’ আয় করা অর্থ দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে বেড়াচ্ছে।

“দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। নৌকায় ভোট দিয়েই স্বাধীনতা পেয়েছেন, এই নৌকায় ভোট দিয়েই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।”

বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে বলে যারা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছেন, তাদের  উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “১১ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার পরও কেউ যদি আমাদের মানবতাবিরোধী বলে, তারাই যে মানবতাবিরোধী, তারাই যে দোষী, তারাই যে অপরাধী, খুনি, দুর্নীতিবাজ…।

“মানবতার ডাকেই আমরা কাজ করি।নিজে কী করলাম বড় কথা না, দেশকে ও দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা।”

সততাই তার শক্তি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সততা আছে বলেই যে কোনো পরিস্থিত মোকাবিলা করতে পারি। নিজের ভাগ্য গোছানোর জন্য নয়, দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করি।”

বাংলাদেশে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার সরকার সেসব বলে মন্তব্য করেন সরকার প্রধান। তার সরকারের আমলে বাজেট বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আবদুল গাফফার চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বক্তব্য রাখেন।

যুক্তরাজ্য ছাড়াও পুরো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় ওয়স্টমিনস্টারের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল কানায় কানায় পূর্ণ হয়।