বিচারকদের নিয়ন্ত্রণেই রাখল সরকার: ফখরুল

বিচারকদের চাকরিবিধি প্রণয়নের ফলে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা বেড়েছে বলে আইনমন্ত্রী দাবি করলেও তাতে ভিন্নমত জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2017, 10:37 AM
Updated : 12 Dec 2017, 02:08 PM

তিনি বলেছেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য প্রণীত চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির ফলে বিচার বিভাগে সরকারের নিয়ন্ত্রণই থাকছে।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার গেজেট সোমবার প্রকাশ করে সরকার।

এই বিধিমালায় আপত্তি জানিয়ে তা ফেরত পাঠিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। নানা নাটকীয়তার মধ্যে তার পদত্যাগের পর এই গেজেট প্রকাশ হল।

গেজেট প্রকাশের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনেই এই বিধিমালা করা হয়েছে। এটি আটকে রাখার জন্য বিচারপতি সিনহাকে দায়ী করেন তিনি।

আনিসুল হক মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “উচ্চ আদালতের সঙ্গে আলাপ-আলাচনা করেই বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আমার মনে হয় সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কোথাও ক্ষুণ্ন করা হয়নি, বরং একটু বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম একই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমরা বহু কথা বলেছি, বহু আন্দোলন করেছি, আইন পাস হয়েছে পার্লামেন্টে। সেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তারা (সরকার) আবারও সেই প্রশাসনের কাছে নিয়ে গেল।

“অধস্তন আদালতের বিচারকদের যে শৃঙ্খলা বিধি করেছে, গেজেট করেছে গতকাল- সরকারের হাতেই থাকছে এর নিয়ন্ত্রণ। এটা একটা ভয়াবহ রকমের বিচ্যুতি, ভয়াবহ একটা চক্রান্ত।”

বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করেই এখন আওয়ামী লীগ সরকার ‘ভিন্নমত ও ভিন্নপথ’ নিয়ন্ত্রণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে অনেকগুলো। এখন আবার তার নামে বিদেশে সম্পত্তির কল্পিত গল্প তৈরি করে প্রচার করছেন তারা, যার কোনো ভিত্তি নেই।”

অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মামলার প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “এভাবে যারা বিরুদ্ধে কথা বলবে, ভিন্নমত পোষণ করবে, যারা সত্য উচ্চারণ করবে, তাদেরকে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে শেষ করে দেওয়া হবে।”

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়েই বিচারপতি সিনহাকে সরকারের বিরাগভাজন হয়ে দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

“এই বলার কারণে প্রধান বিচারপতি সিনহা সাহেবকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, তার পদ হারালেন। এই হচ্ছে বর্তমান স্বাধীন বিচার বিভাগের নমুনা।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটস প্রতিনিধি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানের পর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আরেকটি আলোচনা সভায়ও একই কথা বলেন ফখরুল।

কমরেড মো. তোয়াহার ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও তানোরের নিহতদের স্মরণে ২০ দলীয় জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের উদ্যোগে রিপোর্টার্স ইউনিটির আলোচনা অনুষ্ঠানটি হয়েছিল।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ ছাড়াও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপা নেতা রেহানা প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা এম এ রকীব,এনপিপি নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি নেতা আতাউর রহমান ঢালী, জহিরউদ্দিন স্বপন, ডিএল নেতা সাইফুদ্দিন মনি সভায় বক্তব্য রাখেন।

সিনেটে প্রার্থী যারা

প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী পরিষদের ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আখতার হোসেন খান। 

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী পরিষদের ২৫ প্রার্থীর পরিচিতি সভা

ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটরা হলেন- অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার ড. উম্মে কুলসুম রওজাতুর রোম্মান, এ কে এম ফজলুল হক, এ টি এম আবদুল বারী (ড্যানি), এ বি এম ফজলুল করিম, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম (বাচ্চু), কে এম আমিরুজ্জামান শিমুল, ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, ড. জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, ডা. প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, ডা. মোহাম্মদ রফিকুল কবির লাবু, মো. আশরাফুল হক, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুদার, ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ড. মো. শরীফুল ইসলাম দুলু, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, মো. সেলিমুজ্জামান মোল্যা, শওকত মাহমুদ ও ড. সদরুল আমিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ফখরুল বলেন, “আজ আমরা একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। “যে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তচিন্তার পাদপিঠ বলে মনে করি, যে বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচিকাগার বলে গর্ববোধ করি, সেই বিশ্ববিদ্যালয় এখন পুরোপুরিভাবে একটি একদলীয় চিন্তাভাবনার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

জাতীয়তাবাদী পরিষদের সিনেটের প্রতিনিধি নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অধ্যাপক মোরশেদ হাসান খানও উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ৬ ও ১৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে।