নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ সোমবার এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সামনে এখন দুটি পথ; হয় তাকে সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ করতে হবে, নইলে অসম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে হবে।
তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসে মওদুদের রাজনৈতিক জীবনে দলবদলের ইতিহাস তুলে ধরেন হানিফ।
তিনি শুরুতেই বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, আওয়ামী লীগকে টেনে-হিঁচড়ে, অসম্মানজনকভাবে ক্ষমতা থেকে নামানোর শক্তি বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ এমন কোনো অবস্থা তৈরি করেনি যে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নে।
এরপর মওদুদকে ‘পল্টিবাজ নেতা’ আখ্যায়িত করে তার বার বার দলবদলের ঘটনাগুলো তুলে ধরেন হানিফ।
“মওদুদ সাহেবের রাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তার রাজনীতিতে ডিগবাজি ছাত্রজীবন থেকেই শুরু। এক সময় ঢাকা কলেজে শাহ মোয়াজ্জেমের হাত ধরে সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েই তিনি খেলাফত ছাত্র সংসদে যোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হয়ে গেলেন।”
“১৯৭১ সালে ডাকটিকেট থেকে অর্থ আত্মসাতের কারণে দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার চর হিসেবে কাজ করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই সময়ে তার শ্বশুর পল্লীকবি জসিম উদদীনের অনুরোধে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, জীবনে কখনও রাজনীতি করবেন না।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের সরকারে মওদুদের যোগদানের কথা তুলে ধরে হানিফ বলেন, “সেই সময় দুর্নীতির কারণে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের শেষ সময়ে তিনি ছিলেন জিয়াউর রহমানের বিদ্রোহী শিবিরে।”
এরপর আরেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের দলে মওদুদের যোগদানের কথা তুলে ধরেন হানিফ।
“চট্টগ্রাম যাওয়ার পর ফেরার সময় কুমিল্লায় একসিডেন্ট হওয়ার পর কুমিল্লা হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেই সময় বেগম খালেদা জিয়াকে রেখেই এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন মওদুদ। এটা একটা অভুতপূর্ব দক্ষতা।
“রাজনীতিতে পল্টি খাওয়া এবং এই দল থেকে ওই দলে যাওয়ার এত দক্ষ লোক বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোনো লোকের নেই। ভবিষ্যতে তার মতো কেউ পারবে কি না, সন্দেহ আছে।”
হানিফ বলেন, “সেই ধরনের একজন ব্যাক্তি, বর্তমান সরকার সম্পর্কে যখন এমন উক্তি ব্যবহার করে, তা জনগণের কাছে দৃষ্টতা বলেই মনে হয়। এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
মওদুদকে তার এই ‘আপত্তিকর বক্তব্য’ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান হানিফ।
এই প্রসঙ্গে এরশাদের পতনের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মওদুদের পতনের কথাও বলেন আওয়ামী লীগ নেতা।
“উনি অসম্মানের সাথে বিদায়ের কথা বলেন! জনগণ দেখেছে ১৯৯০ সালে এই মওদুদ সাহেবের পতন। আবার ’৯৬-এ খালেদা জিয়া একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার চেষ্টার সময় জনগনের আন্দোলনের মুখে মওদুদ সাহেবদের পতনও জনগণ দেখেছে।”
মওদুদ এই ধরনের ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছেন বলেও দাবি করেন হানিফ। তার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বানও জানান ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।