ইসি নিয়ে সংলাপ পর্ব শুরু

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ‌্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শুরু হয়েছে।

বঙ্গভবন প্রতিবেদকজ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2016, 10:33 AM
Updated : 19 Dec 2016, 02:55 AM

রোববার বিকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রায় এক ঘণ্টার এই বৈঠকে বিএনপির ১১ সদস‌্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাহীন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ‌্য ইসি গঠনের দাবি তুলে ধরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার পর তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।

অন‌্যদিকে রাষ্ট্রপতি হামিদও বিএনপির প্রস্তাবকে ‘ইতিবাচক’ অভিহিত করে বলেছেন, এই আলোচনা ইসি গঠনে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।

খালেদা ও মির্জা ফখরুল ছাড়াও সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস‌্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

খালেদার গাড়ি বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছালে বঙ্গভবনের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান তাকে স্বাগত জানান। সাতটি গাড়িতে করে বিএনপির প্রতিনিধি দলের ১১ সদস‌্য তার আগেই বঙ্গভবনে প্রবেশ করে।   

বিকাল ৪টা ৩৭ মিনেটে সংলাপ শুরুর আগে বঙ্গভবনের দরবার হলে এসেই রাষ্ট্রপতি হামিদ বিএনপি নেত্রী খালেদার কুশল জানতে চান। উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি ‘মোটামুটি’ আছেন।

রাষ্ট্রপতি হামিদ এ সময় তার স্পিকার থাকার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা খালেদাকে বলেন, “আগে সংসদে থাকতে তো দেখা হত। এখন তো আমি দূরে থাকি।”

বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে আলোচনা শেষে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। বঙ্গভবনের অক্টাগনালে দাঁড়িয়ে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস‌্যদের বিদায় জানান তিনি। 

এর আগে বিকাল ৩টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে রওনা হন খালেদা। বিএনপির দলীয় পতাকা লাগানো ওই গাড়িতে খালেদার সঙ্গে ছিলেন তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তবে বঙ্গভবনে পৌঁছানোর পর দরবার হলে থাকার সুযোগ হয়নি তার।

এই বৈঠকের জন‌্য বঙ্গভবনে বিএনপির পাঠানো প্রতিনিধিদলের তালিকায় তরিকুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাসের নামও ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তরিকুল এবং সিঙ্গাপুরে থাকায় মির্জা আব্বাস সংলাপে উপস্থিত থাকতে পারেননি।  

২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে এ কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন যে ইসি দায়িত্ব নেবে, তার অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

এবারও যে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’ করে নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন, সে বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগেই জানিয়েছিলেন। এরপর চলতি মাসের শুরুতে বঙ্গভবনের কর্মকর্তারা সংলাপের প্রস্তুতি শুরু করেন এবং ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন চূড়ান্ত সূচি সাংবাদিকদের জানান।

খালেদা জিয়া গত নভেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ইসি ও সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে তার দলের ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। সংলাপেও বিষয়গুলো তোলা হবে বলে জানানো হয়েছিল বিএনপির পক্ষ থেকে।

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি বসবেন মঙ্গলবার বিকাল ৩টায়। পরদিন বিকাল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (এলডিপি) ও সাড়ে ৪টায় কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ এবং বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় সরকারের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে বসার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতির।

প্রথম পাঁচটি দলের পর চলতি সপ্তাহে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলে বঙ্গভবনের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।