এক বিবৃতি বিএনপির চেয়ারপারসন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ‘উগ্রবাদী শক্তি’ দমনে সর্বদলীয় ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তার খালেদার ওই বিবৃতি পড়ে শোনান দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
খালেদা জিয়া বলেন, “অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ফলে সৃষ্ট অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতি মিলে মিশে দেশে এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যা পৈশাচিক স্বৈরতন্ত্রে অধঃপতিত হয়েছে।
“গতরাতে গুলশানে দুষ্কৃতকারীদের নির্মম রক্তাক্ত অভ্যুত্থান দেশে বিরাজমান দুঃশাসনের বহিঃপ্রকাশ।”
শুক্রবার রাতে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে বিদেশিদেরসহ অনেককে জিম্মি করেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে রাতেই জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম; আহত অনেকেকে রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সকালে সেনা কমান্ডো অভিযানে ওই রেস্তোরাঁ থেকে ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের প্রায় সবাই বিদেশি নাগরিক। আর ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার দুজন ও জাপানের এক নাগরিক রয়েছে। অভিযানের সময় ছয় অস্ত্রধারী নিহত হন এবং একজনকে আটক করা হয়।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, “গুলশান রেস্টুরেন্টের ঘটনা উগ্রবাদী দুষ্কৃতকারীদের কর্তৃক বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনের মতো মানুষকে জিম্মি করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদেরকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ফলে সৃষ্ট প্রাণবিনাশী ঘটনা অন্ধ হিংস্রতা ও বিকৃত রুচির পশুপ্রবৃত্তি।
“আমি আবারও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- এই নিষ্ঠুর বিবেকবর্জিত গণতন্ত্র ও সভ্যতাবিরোধী উগ্রবাদী শক্তিকে নির্মূল করতে দল-মত নির্বিশেষে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাই। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এখন এই উগ্রবাদী শক্তিকে দমন করতে না পারলে এরা দীর্ঘতম যুদ্ধ চালিয়ে দেশের জনগণের শান্তি, সুস্থিতি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন করে তুলবে।”
একইসঙ্গে জিম্মি সঙ্কট মোকাবেলায় দেশের নিরাপত্তা বাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
“দেশের নিরাপত্তা বাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যে সমস্ত সদস্যরা অটুট মনোবল ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রক্তাক্ত জিম্মি ঘটনাকে মোকাবিলা করেছেন, সেজন্য আমি দেশবাসী ও আমার দলের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
গত রাতের ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন খালেদা জিয়া।
“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই সহিংস ঘটনায় জড়িত প্রকৃত দুস্কৃতিকারীদের শাস্তি দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্য্কর হবে এবং এদের নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করে তাদের নির্মূল করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সক্ষম হবে।”
সাম্প্রতিক সাঁড়াশি অভিযানের সমালোচনা করে খালেদা বলেন, “কিছুদিন আগে জঙ্গি দমনের নামে সরকারি অভিযানে যে ভয়াবহ রূপ জনগণ দেখল, তাতে আমরা তখনই বলেছিলাম- সরকারের এই নৃশংস ক্র্যাকডাউন বিএনপির বিরুদ্ধে ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য। এই অভিযান ও বেআইনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরও জঙ্গিদের বিবেকবর্জিত অপতৎপরতা থামাতে পারেনি সরকার।”
শুক্রবার ঝিনাইদহে শ্যামানন্দ দাস নামে একজন সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “… প্রমাণিত হলো সরকারের সপ্তাহব্যাপী ক্র্যাকডাউনের উদ্দেশ ছিলো বিএনপির দমন, জঙ্গিবাদ দমন নয়।
“গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা জারি রেখে গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে গিয়ে দেশে অমানবিক সভ্যতাবিধ্বংসী শক্তির উত্থান ঘটেছে। দেশে বিদ্যমান বহুমাত্রিক স্বৈরতান্ত্রিকতার কারণেই আনাচে কানাচে উগ্রবাদ বাসা বেঁধেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবীর খোকন উপস্থিত ছিলেন।