’৭৪ এ ইনুর ‘গুলিবর্ষণের সাক্ষী’ গয়েশ্বর

স্বাধীনতা পরবর্তী জাসদের ভূমিকা নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার মধ্যে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাবি করেছেন, হাসানুল হক ইনুকে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম মনসুর আলীর বাড়িতে গুলিবর্ষণ করতে দেখেছিলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2015, 03:56 PM
Updated : 25 August 2015, 03:57 PM

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তৎকালীন জাসদ ছাত্রলীগের নেতা গয়েশ্বর এই দাবি করেন, যিনি যুবদল হয়ে এখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। 

জাসদের বর্তমান সভাপতি ইনু বর্তমানে শেখ হাসিনার সরকারের তথ্যমন্ত্রী। একই সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন প্রয়াত মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম।

আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য জাসদকে দায়ী করে কয়েকদিন আগে বক্তব্য দিলে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে।

গয়েশ্বর বলেন, “১৯৭৪ সাল, আমি তখন জাসদ করি। আমাদের একটা সিদ্ধান্ত হল, আমরা গ্রেপ্তার-অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করব। কিন্তু ঘেরাও কর্মসূচিতে সশস্ত্র আক্রমণ, এটা আমাদের জানা ছিল না।

“ছিলেন কে- হাসানুল হক ইনু। আর কে ছিলেন, কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকদিন আগের ভিসি আনোয়ার হোসেন। আমরা জানি, মন্ত্রীর বাড়ির গেইটের সামনে যাব, সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আসবে, স্মারকলিপি নেবে অথবা আমন্ত্রণ জানাবে বাড়ির ভেতরে স্মারকলিপি গ্রহণের জন্য।”

“কিন্তু গুলিটা প্রথম এই আনোয়ার হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বেই শুরু হল। যখন পাল্টা গুলি আত্মরক্ষার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন থেকে এল, তখন আমরা দিগ্বিদিক ছুটোছুটি। কারও হাত নেই, কারও পা নেই। কত জন মারা গেছে- তখন জানার সুযোগ ছিল না।”

ওই সময়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিখিল চন্দ্র সাহার বোমায় নিহত হওয়ার ঘটনার বিবরণ দিয়ে তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের জাসদ ছাত্রলীগের নেতা গয়েশ্বর বলেন, “৭৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক দেয় জাসদ। সেই হরতালে বোমা ব্যবহারের জন্য বোমা বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার নিখিল চন্দ্র সাহাকে।

“যাত্রাবাড়ীর একটি পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে নিখিল বোমা বানাতে যায়। বোমাতে মিশানো জিনিস কোনটা আগে দিতে হয়, পরে দিতে হয়- এরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে হঠাৎ করে তার নিজের হাতের মধ্যে একটা বোমা ফাটে।”

“নিখিলের সন্মানার্থে পেট্রোল বোমা বা হাতবোমার নাম রাখা হল ‘নিখিল’। আপনারা তথ্যমন্ত্রীকে (ইনু) জিজ্ঞাসা করবেন, বোমার অপর নাম নিখিল ছিল কি না?”

বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, “হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশে প্রথম গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র রাজনীতি শুরু করেছে। এটা ঐতিহাসিক সত্য।”

খালেদা জিয়াকে নিয়ে ইনুর কড়া সমালোচনার জবাবে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ১৯৭২-৭৫ সময়ে জাসদের বঙ্গবন্ধু সরকারবিরোধী ভূমিকার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

খালেদাকে ‘আগুন-সন্ত্রাসের নেত্রী’ আখ্যায়িত করে ইনুর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, হত্যা, সন্ত্রাসের রাজনীতি বাংলাদেশে শুরু করেছিল জাসদ।

গয়েশ্বর বলেন, “আজ তিনি (ইনু) কি না খালেদা জিয়াকে ‘বোমানেত্রী’, ‘আগুন’ কী কী আবোল-তাবোল কথা বলেন।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমের উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, “আজকে শেখ সেলিম আপনি যদি বিশ্বাস করেন, তৎকালীন ১৫ অগাস্টের ঘটনায় ইনু জড়িত, তারপরও এখনও কেন সে ঘেউ ঘেউ করে। আসলে তো ঘেউ ঘেউ করা ছাড়া তার কোনো গতি নেই।”