শুধু বয়স কম হওয়ায় ‘জেন-জি’ ভোট দিতে পারবে না, সেটা এনসিপি ‘যৌক্তিক’ মনে করে না।
Published : 23 Mar 2025, 12:15 AM
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ন্যূনতম বয়স ২৩ বছর ও ভোটারদের ক্ষেত্রে ১৬ বছর করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সুপারিশ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রাথমিক সংস্কার প্রস্তাব পেশ করবে নতুন আত্মপ্রকাশ করা দলটি।
বর্তমানে ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর; আর সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য লাগে ২৫ বছর।
সংবিধান সংস্কার কমিশন অবশ্য প্রার্থীদের ন্যূনতম বয়স ২১ বছরে নামানোর সুপারিশ করেছে।
শনিবার রাজধানীর বাংলা মোটরে নিজেদের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এনসিপির যুগ্মআহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “২৩ মার্চ (রোববার) দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদল অনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরবে।”
সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা বলেছেন প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। আমরা মনে করেছি, ইট ইস টু আর্লি, এটা ২৩ বছর হতে পারে। আর ভোটা দেওয়ার বয়স হতে পারে ১৬ বছর।”
১৬ বছরে নামিয়ে আনার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, “এ গণঅভ্যুত্থানকে বিশ্বে ‘জেন-জির’ অভ্যুত্থান বলা হচ্ছে। এই যে এতবড় একটা অংশ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে; কিন্তু আগামী নির্বাচনে তারা মতামত দিতে পারবে না শুধুমাত্র বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ার কারণে।
“এটা আমরা যৌক্তিক মনে করছি না। এজন্য আমরা ১৬ বছর বয়স থেকে ভোটের বিধান করার প্রস্তাব করব।”
বর্তমান সংবিধান ‘সরকার পরিচালনায় প্রাধান্য পাচ্ছে না’ মন্তব্য করে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান পুনর্লিখনের কথাও বলেন তুষার।
“সেটা করার জন্য সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি আমরা মনে করি গণপরিষদ নির্বাচন। গণপরিষদ নির্বাচন যদি নাও হয়, সে ক্ষেত্রে গণপরিষদ ও আইনসভা হিসাবে নির্বাচিত সংসদ, এমন একটা আইনসভা, যার ভূমিকা গণপরিষদ হিসাবেও থাকবে, সে প্রস্তাব আমরা তুলে ধরব।”
তিনি বলেন, “যেসব সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত না, সেগুলো আমরা বলেছি নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ বা প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে করা যেতে পারে।”
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কখনও আন্দোলনে আসবে না, আওয়ামী লীগ যেটা করবে, সেটাকে আমরা আন্দোলন বলব না।
“আওয়ামী লীগ পরিষ্কারভাবে দেশবিরোধী শক্তি ও ভারতের এজেন্ট। তারা যদি আন্দোলনে নামে, সেটাকে আমরা আন্দোলন বলবো না, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নামবে।”
গত ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন গেল ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ করা হয়েছে।
সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে ও ঐকমত্যে পৌঁছাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিশন কাজ শুরু করে।
সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গত ৬ মার্চ ৩৭টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়ে মতামত চেয়েছিল ঐক্যমত কমিশন।
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে তাদের মতামত কমিশনের কাছে তুলে ধরেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপি রোববার কমিশনের কাছে মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরবে।