দুঃসময়ে মানুষ টাকা পাবে, এটা তো ভালো: বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, “তারা (বিএনপি যত আন্দোলন করবে, সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা যাবে। মানুষ যদি এই দুঃসময়ে কিছু টাকা পায় তাহলে তো ভালো।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2023, 01:43 PM
Updated : 6 Oct 2023, 01:43 PM

বিএনপির আন্দোলনে ‘বেশ লোক সমাগম হচ্ছে’ মন্তব্য করে একে ‘খুবই ভালো কথা’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘কেন ভালো কথা’ তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, “তারা যত আন্দোলন করবে, সাধারণ মানুষের পকেটে তত টাকা যাবে। … দুঃসময়ে এটা বেশ ভালো কথা।”

ভারতে জি টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলন এবং জাতিসংঘের ৭৮ তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে শুক্রবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে গেলে সব সময় এ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন। সেখানে সফরের বিষয়ে লিখিত বিবৃতি থাকে। পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরা সাম্প্রতিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন থাকে প্রতিবারই।

এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা বিএনপির আন্দোলন, তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের নানামুখি তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি দাবি পূরণ না হলে ভোটে না আসার ঘোষণা দিয়েছে। এই দাবিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক কর্মসূচিও পালন করে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাদের (বিএনপি) আন্দোলনে বাধা দিচ্ছি না। তারা আন্দোলন করে যাচ্ছে, লোক সমাগম হচ্ছে। এটা খুবই ভালো কথা।”

বিরোধীদের আন্দোলনে লোক সমাগমকে কেন ‘ভালো‘ মনে করছেন, তার ব্যাখায় পর মুহূর্তেই তিনি বলেন, “এতকাল ‘চুরি চামারি’ করে যত টাকা বানিয়েছিল, আর যত টাকা মানি লন্ডারিং করেছে এখন সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে। অন্তত সাধারণ মানুষের হাতে কিছু টাকা তো যাচ্ছে। আমি কিন্তু ব্যাপারটা সেভাবেই বিবেচনা করি।
“তারা যত আন্দোলন করবে, সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা যাবে। মানুষ যদি এই দুঃসময়ে কিছু টাকা পায় তাহলে তো ভালো। তাদের কাছ থেকে ওই টাকাগুলো বের হওয়া দরকার। আমি বলেছি, কোনো কিছু বলার দরকার নেই। তারা আন্দোলন করতে থাকুক।” 

তারা তো তারিখ দিতেই থাকে

বিএনপির দাবি যে সরকার ‘পাত্তা দিচ্ছে না’, সেটিও উঠে আসে শেখ হাসিনার বক্তব্যে।

নানা সময় সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা তো তারিখ দিয়েই যাচ্ছে। অমুক তারিখে ফেলে দেবে, তমুক তারিখে ফেলে দেবে। তো তারা দিতে থাক। আমি এটাকে মাইন্ড করছি না। আমি মনে করি এটা ভালো। আন্দোলনটা থাকলে আমার পার্টিও ভালো থাকে। অন্যথায় তারা আবার নুইয়ে পড়ে।

“মাঝখান দিয়ে কেউ নাই দেখে তারা (আওয়ামী লীগ) ঢিলা দিয়েছিল। এখন এমপি সাহেবরাও এলাকায় দৌড়াচ্ছে। যাদের পজিশনে একটু ভাটায় টান দিয়েছিল, তারা এখন দেখি বেশ ভালোই দিকে আগাচ্ছে।
বিএনপির আন্দোলনে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মত সহিংসতা হলে সরকারের অবস্থান পাল্টে যাবে বলেও জানিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বলেন, “তবে হ্যাঁ, ওই রকম অগ্নিসন্ত্রাস করে যদি মানুষের কোনো ক্ষতি করতে চেষ্টা করে, তাহলে তো ছাড়ব না।

“আমার কিছু করা লাগবে না। জনগণকে ডাক দিলে তারাই ঠাণ্ডা করে দেবে।”

আন্দোলন জমাতে বিএনপি যে ‘অর্থ খরচ করছে’ তার উৎসের সন্ধান করতেও সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের অনুরোধ করব, এই যে তাদের টাকার উৎস কোথা থেকে। সেটা একটু খবর নেওয়া দরকার। তারা এত টাকা কোথা থেকে পায়? আওয়ামী লীগের তো একটা সুবিধা আছে যে, ‘নিজের খাইয়া নৌকা’। কিন্তু তাদের তো সেটা নেই।”

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো নষ্ট করেছে বিএনপি’

যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলেমানের সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, তা নিয়েও জানতে চান একজন সাংবাদিক।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। আমার মনে পড়ে না। এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেউ আমাকে জিজ্ঞাসাও করেনি।“

এরপর তিনি সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বিএনপির সবশেষ শাসনামলে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক অভিজ্ঞতা ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত হয়ে গেছে না আমাদের? তারপর কী কেউ চায় (তত্ত্বাবধায়ক), চাইতে পারে?

“আর এই অবস্থার জন্য বিএনপিই দায়ী। নষ্ট তো বিএনপিই করেছে। সিস্টেমটা বিএনপিই নষ্ট করে দিয়েছে।”