কানাডায় ট্রাক চালকদের আন্দোলন: শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের প্রভাব ও জরুরী অবস্থা

মঞ্জুরে খোদামঞ্জুরে খোদা
Published : 13 Feb 2022, 02:35 PM
Updated : 13 Feb 2022, 02:35 PM

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় আসা ট্রাক চালকদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন এড়াতে অবশ্যই টিকা দিতে হবে বলে ২০২১ সালের নভেম্বরে ঘোষণা করে। এ আদেশ চলতি বছরের জানুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু টিকা না নেওয়া ট্রাক চালকরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় ফেরার পর তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে ৩০ জানুয়ারি থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কানাডার রাজধানী অটোয়াতে বাণিজ্যিক ট্রাক চালকদের একাংশের অবস্থান-অবরোধ চলছে। 'ফ্রিডম কনভয়' নামের ট্রাক চালকদের এ আন্দোলনের বক্তব্য-

১.ভ্যাকসিন পাসপোর্ট মানি না

২.কোন লকডাউন চলবে না

বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিন সংক্রান্ত আইন ও বিধিনিষেধ বাতিল কর। এ দাবির সমর্থনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাক চালকরা লড়ি-ট্রাক নিয়ে অটোয়ার কেন্দ্রস্থল পার্লামেন্ট ভবনসহ তার আসেপাশে সমাবেত হয়েছেন। তাদের বক্তব্য আমরা এখানে এসেছি স্বাধীনতার জন্য, আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়ছি।

এটা সকল ট্রাক চালকদের নয়, একটি সংখ্যালঘু অংশের দাবি। কিন্তু আন্দোলন শুরু হবার পর থেকে এখন অবধি ট্রাকারদের এই তথাকথিত স্বাধীনতার অভিযাত্রা আর তেমন নিরীহ অবস্থানে নেই। এরমধ্যে স্থানীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতির নানা উপাদান ঢুকে পড়েছে। যে কারণে এ আন্দোলন নিয়ে প্রথম থেকেই কানাডার নাগরিকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

ট্রাক চালকরা অটোয়ায় আসতে শুরু করলে এর সমর্থনে টুইটারে কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি-বক্তব্য শেয়ার হতে থাকে। আন্দোলনের তীব্রতাতার সাথে ঘৃণা-বিদ্বেষ-উগ্রতা- হিংসা, শ্বেতাঙ্গবাদী মনোভাব দৃশ্যমান হতে থাকে।

ট্রাক চালকদের এই স্বাধীনতার অভিযাত্রায় কিছু অদ্ভুত বিষয় দৃশ্যমান হয়েছে। যা কানাডার সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বিপরীতমুখী। এর মিছিল-সমাবেশে দেখা যায়, আমেরিকা কনফেডারেশের পতাকা, নাজিদের স্বস্তিকাসহ অন্যান্য ঘৃণার প্রতীক, 'টিকা নয়, যীশুতে আস্থা রাখা'র স্লোগান, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের পতাকা বহন ও ঘোড়ার শোডাউন, ফেস্টুন-ব্যানার ও যানবাহনে অত্যন্ত আপত্তিকর কথা-স্লোগান, টেরি ফক্সের মূর্তিকে বিকৃতভাবে সজ্জিত করা, সৈনিকদের কবরের উপর নৃত্য করা, ক্রমাগত হর্ন-সাইরেন বাজানো, স্থানীয় অধিবাসীদের ভয়ভীতি দেখানো, বিনামূল্যে খাবার দাবি ও রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর, আতশবাজির উৎসব করা, অটোয়া পার্লামেন্ট ভবন ও আশেপাশের রাস্তা অবরোধ ও তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করা, সমাবেশে চরমপন্থি বক্তব্য দেওয়া, নাগরিকদের হয়রানি ও তাদের স্বাধীনতা হরণ করা প্রভৃতি।

ট্রাক চালকদের এ আন্দোলনকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্র ও আক্রমনাত্মকভাবে সমর্থন করেছেন। জাস্টিন ট্রুডোকে তিনি 'উন্মাদ ও উগ্র বামপন্থি' হিসেবে অভিহিত করেছেন। ফলে ট্রাকারদের আন্দোলনে প্রতিবেশি আমেরিকার উগ্র ডানপন্থিদের সম্পৃক্ততা ও ইন্ধন বিষয়টি আর গোপন নেই। ট্রাক চালকদের আন্দোলনে ১০ মিলিয়ন ডলারের উপরে চাঁদা উঠেছে। যার অধিকাংশই এসেছে প্রতিবেশী আমেরিকা থেকে। মার্কিনিদের ডোনেশন ও ট্রাম্পের উস্কানিমূলক বক্তব্য স্থানীয়দের সন্দিহান করেছে।

ট্রাক চালকদের স্বাধীনতা কনভয় আন্দোলন প্রসঙ্গে- ঘৃণা-বিরোধী বিশেষজ্ঞদের অভিমত, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামফোবিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যক্তিরা শুধু আন্দোলনের প্রান্তের প্রতিনিধিই নয় বরং এই কনভয়ের মূল সংগঠকদের মধ্যেও আছে। কানাডিয়ান অ্যান্টি-হেট নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক ইভান বালগর্ড বলেছেন, "এটা একটা অতি দক্ষিণপন্থি কাফেলা কারণ এর সংগঠকরা নিজেরাই পূর্বে অতি-ডানপন্থি আন্দোলনে জড়িত ছিলেন এবং অতীতে ইসলামফোবিক মন্তব্য করেছেন।'

২০১৯ সালে পিপলস পার্টি অব কানাডার কনভেনশনে বি জে ডিখটার, "ইসলামপন্থি রাজনীতিকদের বিপদ সম্পর্কে বলেছিলেন যে, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ইসলামপন্থিরা ঘিরে ফেলছে। রাজনৈতিক ইসলামের সংযোগ আমাদের সমাজে পঁচন ধরাচ্ছে।"

ট্রাক চালকদের ফ্রিডম কনভয়ের প্রভাবশালী কণ্ঠ প্যাট্রিক কিং নামে এক ব্যক্তি। যিনি প্রতিনিয়ত উগ্রজাতীয়তাবাদী, শ্বেতাঙ্গবাদ ও অভিবাসন বিরোধী বক্তব্য দেন। জেসন লাফেস কানাডা ইউনিটি ওয়েবসাইট ও ফেইসবুকে, 'কানাডার রাজনীতিবিদ যারা কানাডায় জন্মগ্রহণ করেনি তাদেরকে 'আমাদের দেশের বিশ্বাসঘাতক' বলে মন্তব্য করেছেন। গ্লোবাল নিউজ সূত্র বলছে, কানাডায় ওডিন গ্রুপের উত্থান 'অভিবাসী বিরোধী সতর্কতা' দিয়েই।

কানাডার মিডিয়ার সংবাদ বলছে, ট্রাক চালকদের এ সব কর্মকাণ্ডের সাথে নাকউঁচু শ্বেতাঙ্গ উগ্র জাতীয়তাবাদী ও রক্ষণশীলদের সমর্থন ও সম্পর্ক আছে। সংসদের প্রধান বিরোধী রক্ষণশীল দল এদেরকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং এই দলের নেতারা ট্রাক চালকদের সমাবেশে বক্তব্যও রেখেছেন।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ট্রাক চালকদের বিক্ষোভের মুখে, শহরের একাংশ অচল হয়ে পড়ায় কানাডার রাজধানী অটোয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন শহরটির মেয়র। তিনি বলেছেন, চলমান বিক্ষোভ শহরবাসীর নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ট্রাক চালকদের এ আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, "কানাডিয়ানদের প্রতিবাদ করার, তাদের সরকারের সাথে একমত না হওয়ার এবং তাদের কণ্ঠস্বর শোনানোর অধিকার রয়েছে। আমরা সবসময় সেই অধিকার রক্ষা করব। তবে আসুন পরিষ্কার করা যাক: আমাদের অর্থনীতি, গণতন্ত্র, নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনকে অবরুদ্ধ করার অধিকার তাদের নেই। এটা বন্ধ করতে হবে। অটোয়া পুলিশ পরিসেবাগুলিকে সমর্থন করার জন্য কয়েক শ আরসিএমপি  অফিসারকে একত্রিত করা হয়েছে৷ আমরা আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে অংশীদারদের সাথে কাজ করছি। এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যা কিছু প্রয়োজন তা করা হবে।"

কানাডিয়ান ট্রাকিং অ্যালায়েন্স (সিটিএ) শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, কানাডা-আমেরিকা সরকার ট্রাকারদের ভ্যাকসিন বাধ্যতামুলকের যে বিধান করেছেন একটি শিল্প হিসাবে, আমাদের অবশ্যই তা মানিয়ে নিতে হবে। সিটিএ সভাপতি স্টিফেন লাসকোস্কি বলেন, জনসাধারণের রাস্তা, মহাসড়ক ও সেতুতে বিক্ষোভ করে জনস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়।

দেশে দেশে উগ্রজাতীয়তাবাদী ও ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের তৎপরতা বাড়ছে। তারা নানা অজুহাতে সংগঠিত হচ্ছে। আর ডানপন্থি রক্ষণশীল দলগুলো তাতে পুষ্টি জোগাচ্ছে। কানাডাতেও তাদের প্রভাব, অবস্থান এখন আর গোপন নয়। ভ্যাকসিনের বিরোধিতার নামে অদ্ভুত স্বাধীনতার কথা বলে তারা উগ্র ডানপন্থার তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের একাংশের কর্মকান্ডে সে প্রমাণ স্পষ্ট। এ আন্দোলনের নেপথ্যে বেশ কয়েকজন উর্ধ্বতন  সাবেক সামারিক-বেসামরিক কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে, কোন সমীকরণে এই অতি-ডানপন্থি দলগুলো অটোয়ার এই তথাকথিত কাফেলায় যুক্ত হলো?  কানাডার রক্ষণশীল প্রধান বিরোধী দল, অতি দক্ষিণপন্থি দল-গ্রুপ ও চরমপন্থিরা তাদের এই অদ্ভুত, উদ্ভট 'স্বাধীনতা হারানো'র বক্তব্যকে কিভাবে সমর্থন করছেন? কী তাদের উদ্দেশ্য? তারা কানাডাকে কোথায় দেখতে চান?

'স্বাধীনতার কাফেলা' একটি উছিলা মাত্র। তারা আসলে স্বাধীনতা হারানোর নামে অতি উগ্র দক্ষিনপন্থি শক্তিকে সংগঠিত ও শক্তিশালী হবার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন।

গত সপ্তাহের কয়েকটি ঘটনা এখানকার জাতি-গোষ্ঠি-সম্প্রদায়ে শোকের ছায়া ফেলছে, শংকিত করছে। এই তথাকথিত স্বাধীনতা কনভয় যখন অটোয়ার দিকে যাচ্ছিল তখন সাবেক সেন্ট পিটার্সবার্গের মাটিতে, জোসেফ মিশন আবাসিক স্কুলে ৯৩টি আদিবাসী শিশুর কবর আবিষ্কৃত হয়। হোলোকাস্ট স্মরণ দিবসে এই কথিত কাফেলার একাংশ ঘৃণিত নাজিদের স্বস্তিকা পতাকা বহন করে। অটোয়াতে কুইবেক মসজিদে হামলার বার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠান- সহিংসতার আশঙ্কার কারণে বাতিল করা হয়।

কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এলি স্পাও এর মন্তব্য স্মরণযোগ্য। তার মতে, "বর্ণবাদ, ঘৃণা ও সহিংসতার মিথ ছড়িয়ে চরমপন্থি দল-উপদলগুলোর দ্বারা কিভাবে একটি আন্দোলন হাইজ্যাক হয়ে যায়, এ অভিযাত্রা তার এক সফল উদাহরণ।"

কানাডার রাজনীতিতে প্রধানত তিনটি ধারা বিদ্যমান। ডানপন্থি, মধ্যডান ও বামপন্থি এবং বামপন্থি। কিন্তু সম্প্রতি আরেকটি ধারা দৃশ্যমান ও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। আর সেটা হচ্ছে অতিডান ও উগ্র জাতীয়বাদী ধারা।

ট্রাক চালকদের অবরোধ কানাডার অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিশেষ করে কানাডার কাঁচাবাজার ও অন্যান্য বাণিজ্য বেশি ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে। পণ্যের মূল্যে প্রাপ্তিতে তার প্রভাব পড়ছে। তথ্য বলছে, কানাডার অধিকাংশ জনগণ ট্রাক চালকদের এ অনৈতিক-কাণ্ডজ্ঞানহীন আন্দোলনকে সমর্থন করছেন না। তারপরও এদের আন্দোলন দমনে সরকার কোন প্রকার শক্তি প্রয়োগ করেনি, জলকামান ব্যবহার করেনি, লাঠিপেটা, হামলা করেনি। সরকার দলের লোকজন, জনপ্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে হুমকি-ধামকি দেয়নি। বরং একটি রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা চলছে। আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের সাংবিধানিক অধিকার ও প্রশাসনিক ক্ষমতায় যা করার কথা তাই করছেন, তার অধিক নয়। এটাই সভ্য দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও সে কথা পরিষ্কার।

ট্রাক চালকরা তাদের দুই সপ্তাহের বেশি চলা অবরোধ অটোয়া থেকে অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করছিল। তাদের অবরোধ নিয়ে রাজনীতিকদের অনেক দুশ্চিন্তা ও উত্তেজনার মাঝে শুক্রবার অন্টারিও-র মুখ্যমন্ত্রী ডাগ ফোর্ড প্রদেশটিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন। যদিও তিনি বলেছেন, এটি অধিবাসীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে না। সেতু ও সড়কের অবরোধ মুক্ত করতেই এ সিদ্ধান্ত।

কানাডার ব্যস্ততম স্থল সীমান্ত ক্রসিং অ্যাম্বাসেডর সেতুর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিদিন ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। এর সাথে লাখ লাখ কর্মসংস্থান ও খাদ্য সরবরাহ যুক্ত। এরমধ্যে বাইডেন প্রশাসন কানাডাকে সেতুতে অরবোধ তুলে নিয়ে ফেডারেল ক্ষমতা ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। অন্টারিও কোর্টও অবরোধের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

জরুরী অবস্থা ঘোষণার সময় মি. ফোর্ড বলেন, "পণ্য-পরিবহন ও মানুষের চলাচলে বাধা দেওয়া বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা মানুষের যাতায়াত, পণ্যপরিবহন ও জরুরী সেবা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে তাদের সর্বোচ্চ ১ লাখ ডলার জরিমানা ও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।" অবরোধে জড়িত হলে বাণিজ্যিক লাইসেন্স বাতিল বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জাস্টিন ট্রুডো বিরোধী দলের প্রিমিয়ার ফোর্ডের সিদ্ধান্তকে 'দায়িত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়' বলে মন্তব্য করেছেন।

জরুরী অবস্থা ঘোষণার পর অবরোধ দুর্বল হয়ে পড়লেও ট্রাক চালকদের আন্দোলন থেমে যায়নি। বরং অন্যান্য শহর ও প্রদেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে ও তীব্র হয়েছে। শুধু কানাডায় নয় অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডসেও ভ্যাকসিন বিরোধীরা বিক্ষোভ করছে। উগ্র ডানপন্থিরা আন্দোলন অব্যাহত রাখতে মানববন্ধনে মানববর্ম হিসেবে তাদের সন্তানদের ব্যবহার করছে। এ পরিস্থিতে উগ্র ডানপন্থি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের আন্দোলন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সময়ই বলবে। এবং এর অন্তর্গত বিষয়, কারণ-সমীকরণও জানা যাবে।

কানাডাতে বহুভাষা, সংস্কৃতি, জাতি-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বাস। সেখানে উগ্রজাতীয়তাবাদীর এমন তৎপরতা ভবিষ্যতে দেশটির জন্য অশনিসংকেত। কানাডার যে সহসশীলতা ও উদারগণতান্ত্রিক সমাজের যে মূল্যবোধ তাকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করা জরুরী। ট্রাক চালকদের কথা বলার, প্রতিবাদ করার অধিকারকে সমর্থন করি। কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ যা ইচ্ছে তাই করতে পারা নয়, বরং এক অর্থে যার যা ইচ্ছে তা করতে না পারাই স্বাধীনতা।