ই-কমার্স হোক প্রকৃত ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’

বীরেন্দ্র নাথ অধিকারী
Published : 14 Oct 2020, 08:19 AM
Updated : 14 Oct 2020, 08:19 AM

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃ' কবিতার প্রথম স্তবকটি এরকম-

কোন্ বাণিজ্যে নিবাস তোমার

কহ আমায় ধনী,

তাহা হ'লে সেই বাণিজ্যের

করব মহাজনী।

কবিগুরু নিশ্চয় লাভের আশায় সেই বাণিজ্যের মহাজনী করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা করেছিলেন কিনা আজ-অবধি জানা যায়নি। তবে যুগে-যুগে বিশ্বব্যাপী তার মতো আশাবাদী বহু মহাজনের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা ব্যবসায় লাভের আশায় বিনিয়োগ করেছেন। তাতে হরেক রকম ব্যবসা প্রসারিতও হয়েছে। আর রবীন্দ্রনাথের তিরোধানের পর জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি ঘটেছে, যার প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। ব্যবসা-বাণিজ্য এসবের বাইরে কিছু নয়। প্রযুক্তি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সমান্তরাল উন্নয়নশীল ও অগ্রসরমান। সে কারণে প্রযুক্তির নানামুখী শাখা-প্রশাখার উন্নয়নের সাথে-সাথে বাণিজ্যেরও দশদিগন্ত প্রসার এবং নতুন নতুন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছে, যার সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে- 'ই-কমার্স', যাকে বাংলাদেশে সরকারিভাবে 'ডিজিটাল কমার্স' নামে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

ই-কমার্স এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও বহুল প্রচলিত বাণিজ্য পদ্ধতি। সর্বজনীন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- "ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য একটি বাণিজ্যক্ষেত্র, যেখানে কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেম (ইন্টারনেট বা অন্য কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক)-এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। আধুনিক ইলেকট্রনিক কমার্স সাধারণত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর মাধ্যমে বাণিজ্য কাজ পরিচালনা করে। এছাড়াও এতে মোবাইল কমার্স, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ও অন্যান্য আরো কিছু মাধ্যম ব্যবহৃত হয়"।

অনেকেরই মনে হতে পারে ই-কমার্স সবেমাত্র হাল-আমলের একটি ব্যবসা পদ্ধতি। আসলে তা নয়, প্রায় অর্ধশত বছর হতে চলছে ই-কমার্সের বয়স। শুনতে আশ্চর্য মনে হতে পারে- গাঁজা বেচা-কেনার মধ্য দিয়ে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু। ১৯৭১ বা ৭২ সালের কোনো এক সময়ে ইন্টারনেটের আদিরূপ অরপানেট ব্যবহার করে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবরেটরি এবং ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি'র ছাত্রদের মধ্যে গাঁজা বেচা-কেনা হয়। সেই থেকে শুরু করে ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে ই-কমার্সের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি থেকে শুরু করে জীবনরক্ষাকারী সব ধরনের পণ্যই এখন বিপণন হচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়, বাইরে থাকার কোনো কারণও নেই। আমাদের দেশে ই-কমার্সের বয়স খুব একটা কম নয় কিন্তু! সঠিক সন তারিখ জানা না গেলেও এটি ঠিক যে, বিগত নব্বই দশকের শেষ নাগাদ এখানে ই-কমার্সের প্রথম প্রয়াস নেয়া হয়। দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলমান ই-কমার্স আমাদের দেশে খুব বেশি প্রসারিত না হলেও, একেবারে কমও নয়। গত ডিসেম্বর মাসে দেশের বহুল প্রচারিত একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় বর্তমানে দেশে ই-কমার্স লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ১৭,৫০০ কোটি টাকা, যা আগামী তিন বছরে, অর্থাৎ ২০২৩ সাল নাগাদ বেড়ে প্রায় ২৬,২৫০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপের ফলাফলটি অমূলক নয়। কারণ বর্তমানে দেশের আইসিটি খাতের পাঁচটি বাণিজ্য সংগঠনে ৫,৬০০'র অধিক নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরেও কয়েক শত আইসিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসবের মধ্যে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সদস্যসংখ্যা হচ্ছে ১২০০'র অধিক। তবে, বেশ কিছু আইসিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ই-কমার্স বা এম-কমার্স বা পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে ব্যবসা করছে, কিন্তু তারা ই-ক্যাবের সদস্য নয়, অথচ বছরে তাদের কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। প্রায় ১৫০০ আইসিটি কোম্পানী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ই-কমার্স ব্যবসার সাথে জড়িত বলে ধারণা করা যাচ্ছে। বছরে তাদের ১০-১২ কোটি টাকা গড় লেনদেন মোটেও অযৌক্তিক নয়।

এভাবে ই-কমার্সের লেনদেন যেখানে বাড়ছে, সেখানে সঙ্গত কারণেই ক্রেতা-বিক্রেতাও বাড়ছে। তাই গত ২-৩ বছর থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্সের বেশ উর্দ্ধগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বেশকিছু দেশি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, বিদেশি দু'একটি প্রতিষ্ঠানও ইতোমধ্যে এখানে বিনিয়োগ করেছে, বিশ্বের নামকরা আরো কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ বা সরাসরি ব্যবসা শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছে। তাছাড়া, বর্তমান মহামারীকালীন মানুষ ই-কমার্সের সহায়তায় ঘরে বসে অনেক দ্রব্য কিনছে। সব মিলিয়ে ব্যবসার অন্যদিকগুলো যখন অসুবিধার সম্মুখীন, তখন ই-কমার্সের অনেকটা তেজিভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঠিক এই সময়ে ইভ্যালি নামক দেশের উদীয়মান একটি ই-কমার্স কোম্পানির কর্মকাণ্ড রাষ্ট্র ও সরকারের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নজরে আসে। বেশ কিছুদিন থেকেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ পড়ে। কোম্পানিটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৬ অগাস্ট তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ই-কমার্সের ইতিবাচক দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সবার আগে গ্রাহক যাতে প্রতারিত না হন, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমিটি একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে যথাযথ সুপারিশ করেছে ধারণা করা যাচ্ছে। তাছাড়া, ২৫ অগাস্ট বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন কথিত ই-কমার্স কোম্পানিটিকে চিঠি দেয়। কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের ৮০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত অস্বাভাবিক ক্যাশব্যাক অফার দিচ্ছে বলে বাজারে একচেটিয়া কারবারের (মনোপলি) অবস্থা তৈরি হতে যাচ্ছে এবং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করে প্রতিযোগিতা কমিশন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত লেনদেন, আয়-ব্যয়সহ কোম্পানির বিস্তারিত বিবরণ, তাদের আওতাভুক্ত পণ্যগুলোর বিবরণ, পণ্যের ভৌগোলিক সীমানার বিবরণ, তাদের মাধ্যমে যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, তাদের তালিকা ও ব্যবসায়িক লেনদেনের পদ্ধতি ও শর্তাবলি জানতে চায় প্রতিযোগিতা কমিশন। তাছাড়া, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ'র নিকটও কথিত কোম্পানিটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চায় কমিশন। অন্যদিকে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্ডে উক্ত কোম্পানির পণ্য কেনার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করে। তবে, কোম্পানিটি'র ব্যাপারে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গত ২৭ অগাস্ট উক্ত কোম্পানি এবং কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সকল ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য জব্দ করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী বিএফআইইউ দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠায়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশে সংস্থাটি আরও বলে, হিসাবগুলোতে ৫০ লাখ টাকা ও তার চেয়ে বেশি পরিমাণ টাকার জমা ও উত্তোলন সম্পর্কিত সব তথ্য যেমন-জমা ভাউচার, পে-অর্ডার, চেক এবং টাকার প্রেরক ও প্রাপকের হিসাবের তথ্য দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া জমাকারী ও উত্তোলনকারী ব্যক্তির ছবিযুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র বিএফআইইউতে জমা দিতে বলা হয়। সব তথ্যই পত্র দেওয়ার ৫ দিনের মধ্যে জমা দেয়ার জন্য বলা হয়। উল্লেখ্য, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হচ্ছে বিএফআইইউ।

একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সবকিছু খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পদক্ষেপ আইনসিদ্ধ। বিশেষ করে কথিত ই-কমার্স কোম্পানীটি ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯, প্রতিযোগিতা আইন ২০১২, জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮ এবং মানি লন্ডারিং বিধিমালা ২০১৯ পরিপন্থী কোনো ধরনের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ ও লেনদেন করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর নিত্যনৈমিত্তিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এসব আইন, বিধি ও নীতিমালা অনুযায়ী অসম প্রতিযোগিতা, একচেটিয়া ব্যবসার অবস্থা সৃষ্টি, সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করা, সর্বমহলের আস্থা অর্জন, সন্দেহজনক মানি লন্ডারিং ইত্যাদি বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর অনুসন্ধান করার কথা। ধারণা করা যায় তাদের ব্যাংক লেনদেন বা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে তেমন কোনো গড়মিল বা অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি। যে কারণে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় উল্লেখিত ই-কমার্স কোম্পানি এবং কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য জব্দ হওয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর জব্দ হওয়ার মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের ব্যাংক হিসাব লেনদেনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে শোনা গেছে তাদেরকে কিছু শর্তাবলী দেয়া হয়েছে বা হবে, যেসব অনুসরণ করে তাদেরকে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।

সরকার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সিদ্ধান্ত সার্বিকভাবে ই-কমার্সের জন্য ইতিবাচক। ই-কমার্সের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে, বিশেষ করে যেসব চ্যানেল ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করছে, তাদেরকে এই ইতিবাচক সিদ্ধান্তের মর্যাদা রাখতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন ই-কমার্স চ্যানেলের অবস্থান মধ্যবর্তী জায়গায়, অর্থাৎ তাদের একপাশে পণ্য বিক্রেতা, অন্যপাশে ক্রেতা। এই উভয় শ্রেণিকে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের নিকট থেকে পণ্য সংগ্রহের পর তাদেরকে মূল্য পরিশোধ করা এবং ক্রেতাদের নিকট থেকে মূল্য গ্রহণ করে তাদেরকে পণ্য সরবরাহ করার বিষয়গুলো সুষমভাবে নিষ্পন্ন করতে হবে। তাছাড়া, বিশেষ অফার বা সুবিধা ও মূল্যছাড়জনিত প্রচারণার কাজগুলোও তাদেরকে সুচিন্তিতভাবে করতে হবে। বিক্রেতাদেরকে দেরিতে মূল্য পরিশোধ করা, ক্রেতাদেরকে যথাসময়ে পণ্য পৌঁছে না দেয়া বা বিক্রয়োত্তর যথাযথ সেবা প্রদান না করা, বিক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়াতে মাত্রারিক্ত সুবিধা দিয়ে প্রচারণায় বিশেষত্ব আনা, ঘোষিত সুবিধাদানে গরমিল হওয়া ইত্যাদি এক বা একাধিক ঘটনা সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স চ্যানেলের জন্য ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, ই-কমার্সের মূল বিষয় হচ্ছে নিজগৃহ বা কর্মস্থলে বসে ন্যায্য মূল্যে নির্বিঘ্নে দ্রুততার সাথে ক্রেতা পণ্য হাতে পাবেন। ক্রেতা সাধারণের কিন্তু পণ্য বিক্রেতা হিসেবে মূল পণ্য বিক্রেতার সাথে কোনো লেনদেন বা জবাবদিহিতার ব্যাপার নেই, তারা সব ব্যাপারে ই-কমার্স চ্যানেলের নিকটই জবাবদিহি বা সমাধান চাইবেন। অন্যদিকে, পণ্য বিক্রেতাদেরও প্রান্তিক ক্রেতাদের সাথে কোনো লেনদেন বা জবাবদিহিতার ব্যাপার নেই, তারা কেবল ই-কমার্স চ্যানেলের নিকটই পণ্য সরবরাহ করে তাদের নিকট থেকে মূল্য বুঝে নেবেন এবং কোনো কারণে কোনো পণ্যের বদলি বা সার্ভিসের প্রয়োজন হলে তা ই-কমার্স চ্যানেলের মাধ্যমেই নিষ্পন্ন করবেন। তা'হলে দেখা যাচ্ছে পুরো প্রক্রিয়ায় ই-কমার্স চ্যানেল একটি সরবরাহ চ্যানেল হিসেবে কাজ করছে। এই সরবরাহ চ্যানেল যতটা প্রশস্ত ও মসৃণ হবে, ই-কমার্স কার্যক্রমও ততটা চাঙ্গা হবে। এ ব্যবস্থাকে অনেকটা সড়ক বা নদীপথে যানবাহন চলাচলের সাথে তুলনা করা যায়। অপ্রশস্ত বা ভঙ্গুর সড়ক এবং নাব্যতাহীন নদী যান চলাচলে যেমন বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তেমন ব্যাকরণ বহির্ভূত ই-কমার্স চ্যানেল গোটা পদ্ধতিকেই ত্রুটিযুক্ত করে ফেলে।

যাহোক, বেশ জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ইভ্যালির কার্যক্রম আপতত নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ই-কমার্সের স্বার্থে এবং গ্রাহক সাধারণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসাীয়দের সুবিধার্থে এটি প্রয়োজন ছিল। এর থেকে সকলেরই অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে।

বিশ্বকবির 'বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মীঃ' কবিতার প্রথম স্তবক দিয়ে প্রবন্ধটি শুরু হয়েছিল। কবিতাটিতে মোট ১৫টি স্তবক রয়েছে, সেসবের মধ্যে কবি দশটি স্তবক বাণিজ্যের একেকটি প্রত্যাশা বা বাধাবিঘ্ন ঘিরে লিখেছেন এবং প্রতি দু'টি স্তবক পরপর নিচের স্তবকটিতে বর্ণিত প্রত্যাশাটি পাঁচবার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

যাবই আমি যাবই, ওগো,

বাণিজ্যেতে যাবই।

তোমায় যদি না পাই, তবু

আর কারে ত পাবই।

'আর কারে ত পাবই', পংক্তিটি খুবই ইঙ্গিতবহ। এর ব্যাখ্যা এভাবে করা যেতে পারে- লাভ-লোকসান হওয়ার চেয়েও বড় কথা বাণিজ্যতরী বিচিত্রসব ঘাটে-বাটে নোঙর করা এবং বিভিন্ন অনুকূল বা প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় অর্জন, যেসবের উপর ভর করে সফলতা একদিন আসবেই। সে আলোকেই কবিতাটির একটি যুতসই নামকরণ করেছেন কবিগুরু! তাই আশা করা যাচ্ছে অচিরেই বাংলাদেশের ডিজিটাল জগতে ই-কমার্স হবে প্রকৃত 'বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃ' এবং লক্ষ্মীটিকা পড়বে উদ্দীপ্ত তারুণ্যের ললাটে, যেমনটি ঘটেছে অ্যামাজন কর্ণধার জেফ বেজোস এবং আলিবাবা কর্ণধার জ্যাক মা সহ বিশ্বের আরো অনেক ই-কমার্স পুরোধার বেলায়!