ধর্ষণ যে করে, ধর্ষণ যে সহে…

সৌমিত জয়দ্বীপসৌমিত জয়দ্বীপ
Published : 11 Oct 2020, 12:24 PM
Updated : 11 Oct 2020, 12:24 PM

মানুষের 'লিবিডো' চেতনা কি ধর্ষণের প্রধান কারণ? ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ দ্বারা কি ধরা যাবে ধর্ষণের মনস্তত্ত্ব?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে যদি লেখাটা শুরু করতে হয়, তাহলে উত্তর অস্পষ্টই হয়তো থাকবে। এই দুঃসময় ও চিন্তাবৈকল্যের আকালে এসব তাত্ত্বিক আলাপ আসলে খুব একটা বাজার পাবে না। বাজার এখন 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন' নিয়ে ব্যস্ত!

ক্ষমতা সম্পর্ক দিয়ে এই অরাজকতা বোঝাপড়ার কোন লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

২.
আমার মনে আছে, এই বছরের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রীটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, তার ধর্ষক মজনু গ্রেফতার হওয়ার পর, বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক ধর্ষককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার পক্ষে লিখেছিলেন। তার এই অবস্থানের সমালোচনাও হয়েছিল প্রকাশ্যে। অনেক সুধীজন ও পণ্ডিত মানুষ এই সমালোচনায় সামিল হয়েছিলেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক, যিনি একজন নারীও বটেন, কী করে ক্ষমতা-সম্পর্কের ধার না ধেরে সরাসরি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে 'প্রশ্রয়' দেন, তা নিয়ে অনেকেই তখন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন।

আমার ধারণা, সেই শিক্ষক চলমান পরিস্থিতি দেখে হয়তো তার ওই মতটির ব্যাপারে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তবে, তিনি তো জানেনই, বিচার পাওয়ার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু, আজকে বলা চলে, স্যোশাল মিডিয়া বলছে, প্রায় সবাইই সেই শিক্ষকের চাওয়াটির পক্ষে পরোক্ষে-প্রত্যক্ষে অবস্থান নিয়ে ফেলেছেন। ধর্ষণের শাস্তি – 'ক্রসফায়ার' কিংবা 'প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা'!

এখন প্রশ্নটা হয়ে দাঁড়াল দ্বিবিধ। দ্বান্দ্বিকও বটে। যে সকল সুধীজন সে সময় ঢাবির সেই শিক্ষকের সমালোচনা করেছিলেন, তারা সমাজের লাঞ্ছিত বা অ-লাঞ্ছিত নারীদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতি খুব একটা সুবিচার করছেন বলে খোদ আক্রান্ত নারীরাই হয়তো নাও মনে করতে পারেন। সমাজে এ জনমতটি সংখ্যাগুরু হয়ে উঠছে। কেননা, সমাজ ছেয়ে গেছে একেকজন সম্ভাব্য ধর্ষক, সম্ভাব্য স্যাডিস্ট পুরুষে! আক্রান্তের ক্ষোভ ও চোখের জলের মূল্য পরিমাপ করার কোন ব্যারোমিটারের মাপ কোন অনাক্রান্ত ব্যক্তির নেই। এমনকি সন্তানের ব্যথাও সন্তানেরই একান্ত, মায়ের নয়। ফলে, একজন মা পর্যন্ত সন্তানের সেই ব্যথাটি অনুমান করেন, বুঝার ক্ষমতা তারও নেই; আর এ তো সমাজ! যে কারণে, আক্রান্তের বিচার চাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই যখন হলো 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন – ক্রসফায়ার', তখন তার আবেগের বিপরীতে গিয়ে 'বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে'র বিপক্ষে যে সমাজ-সুধীজন-বুদ্ধিজীবীবৃন্দ, তারা একটি 'শ্যাম রাখি না, কুল রাখি' অবস্থায় নিপতিত হন। একদিকে আক্রান্তের আবেগ, অন্যদিকে তাদের আইনের যুক্তি।

বহুবিভক্ত বাইনারি সমাজে এ হলো বিভক্তি তথা 'বাইনারি অপজিশনে'র আরেকটি দৃষ্টান্ত।

এখন প্রশ্নটা হলো, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি'র বিধান কী হওয়া উচিত? যে সব ছবি ও বক্তব্য মিডিয়া মারফত সামনে আসছে, সে সব জায়গায় 'ক্যাপিটাল পানিশমেন্টে'র কথাই আসছে। 'ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট' মানে তো মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু, এমন একজনও কি নেই, যিনি একই সঙ্গে ফেসবুকে লিখেছেন 'ধর্ষণের শাস্তি হোক ক্রসফায়ার', আবার রাস্তায় আন্দোলনে নেমে প্লেকার্ডে লিখেছেন, 'ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যদণ্ড চাই'? ঠিক ওখানেই প্যাঁচটা লেগে বসে আছে। যারা আইনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, তারা আপনাকে খুব বিজ্ঞভাবে বুঝিয়ে দিতে পারবেন, 'ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট' মৃত্যদণ্ড হলেও, তা বিচারিকবিধি মেনে হয় এবং তা কখনই 'ক্রসফায়ারে'র মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে (এক্সট্রাজুডিশিয়াল এক্সিকিউশন) বিধিবদ্ধভাবেই সমর্থন করে না।

ফলে, একই সঙ্গে একই আন্দোলনের (রাজপথে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে) দু'টি সাংঘর্ষিক দাবি থাকতে পারে না। দাবিদাওয়া যেখানেই দেওয়া হোক না কেন, এমন দাবি কখনই করা উচিত হবে না, যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে।

তবুও যারা ধর্ষণ ইস্যুতে 'ডাইরেক্ট ক্রসফায়ার' চান, তাদের আবেগের প্রতি অসহিষ্ণু হওয়াটা সম্ভবত তাদের প্রতি অবিচারের সামিল হবে। কেননা, অনেক অ-বিচার প্রত্যক্ষ করে, বহু বহু ধর্ষণের বিচার না পেয়ে, বিচার বিভাগ ও পুরো আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেই তারা আজকে আহত বাঘের মতো হুংকার দেবেন, এটা চিন্তা না করাটাই অস্বাভাবিক। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তো প্রত্যাঘাত ছাড়া আর কোন গত্যন্তর থাকে না। তবুও, বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়েই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতি সমর্থন জানানোর কোন সুযোগ নেই।

৩.
ওপরে যে দু' পক্ষের অবস্থানের কথা বলছি – বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে বনাম বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে – আমি দ্বিতীয় পক্ষের লোক। এই অবস্থানটুকু পরিষ্কার করা দরকার পাঠকের কাছে সৎ থাকার জন্য। যেন এই লেখাটি পড়ার পর পাঠকের মনে কোন ভুল ধারণার উদ্রেক না ঘটে। আমি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে। কিন্তু, আমি আইনি প্রক্রিয়ায় অপরাধীর কঠোর শাস্তির পক্ষে বরাবর।

এখন আইনি প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা আছে কি না সেটা একটি বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু, অপরাধীর শাস্তি বিধানের দায়িত্ব বিচার বিভাগের। নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় এ রীতিনীতি তো মানতেই হবে। সঙ্গে, আইন বিভাগ তথা সংসদকেও সংশ্লিষ্ট করতে হবে। কেননা, বিদ্যমান আইনে বা তার কোন ব্যাখ্যার ফলে যদি অপরাধীর 'গুরুপাপে লঘুদণ্ড' হয়ে থাকে, তাহলে এর প্রথম সমাধান রাজনীতিবিদ তথা আইন সভার সভ্যদেরই করতে হবে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০'-এর "ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, ইত্যাদির শাস্তি" বিষয়ক ৯ নম্বর ধারার ৯(১) উপধারায় বলা আছে, "যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷"

এই বিধানের ব্যাখ্যাটাও জানা জরুরি। ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, "যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বত্সরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ষোল বত্সরের কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷"

এই ব্যাখ্যার রেশিওন্যাল আলোচনায় পরে আসছি। এখানে যে ১৬ বছরের সীমা দেওয়া হয়েছে, সেটা কোন চিন্তা থেকে করা, তারও একটা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা তৈরি করা দরকার।

সারা পৃথিবীতে রাষ্ট্রভেদে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার নানা রকম বয়স ধরা হলেও, সবচেয়ে জনপ্রিয় মানদণ্ড হলো ১৮ বছর, যেটি বাংলাদেশের সংবিধান দ্বারাও স্বীকৃত। বাংলাদেশ রাষ্ট্র জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ, দেশজ শিশু আইন ও শিশুনীতিসহ বিভিন্ন আইন ও নীতি অনুসমর্থন করে অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সীদের 'শিশু' তথা 'মাইনর চাইল্ড' তথা 'অপ্রাপ্তবয়স্ক' হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম অধ্যায়ে বর্ণিত 'ভোটার তালিকায় নামভুক্তির যোগ্যতা' শীর্ষক ১২২ ধারার ১২২(১) ও ১২২(২)(খ) উপধারা অনুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্ক বলতে ১৮ বছর বয়সকে বোঝানো হয়েছে। অথচ, বাংলাদেশে মেয়েদের প্রাপ্ত বয়স্কতার 'খেলা' নিয়ে খোদ সংবিধানের সঙ্গেই সাংঘর্ষিক এমন অন্তত দু'টি বিধি আছে। একটি তো এই 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০' (এখানে ১৬ বছর)। আরেকটি হলো 'বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭' (এখানে মেয়েদের বিবাহের বয়সসীমা ১৮ থাকলেও, শর্তসাপেক্ষে ১৮ বছরের নিচে বিবাহ দেওয়া প্রযোজ্য করা হয়েছে)।

এ দু'টি আইন একসঙ্গে পাঠ করলে দেখা যাবে, ২০০০ এর আইনে ১৬ বছর আছে বলেই, ২০১৭ সালের আইনে সেটা রেখে দেওয়ার সুযোগটা নেওয়া হয়েছে। মানে, একটি আইন অপর আইনের কমপ্লিমেন্টারি বা পরিপূরক হয়েছে। পরিহাসের বিষয় হলো, যা এখন ১৬, তা ২০০৩ সালের বোধোদয়ের প্রেক্ষিতে আনা সংশোধনী; এর আগে এটা ছিল মাত্র ১৪ বছর! কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, বয়সের এমন সীমারেখা টেনে দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ল কী জন্য?

৪.

আপনাদের মনে পড়বে, 'বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪' এর খসড়া থেকে 'বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭' আইনে পরিণত হওয়া পর্যন্ত ওই সময়টায় তুমুল বিতর্ক হয়েছে মূলত মেয়েদের বয়স নিয়ে। আইনটি যখন ২০১৭ সালে পাশ হলো, জনচাপের ফলে সরকার তখন মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বরাবরের মতো ১৮-ই রাখল, কিন্তু শর্তসাপেক্ষে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া যাবে মর্মেও ধারা যুক্ত হয়ে গেল। ২০১৫ সালে তৎকালীন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছিলেন, 'আমরা বয়সের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে এসে গেছি। বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ হবে। কিন্তু বিয়ে ছাড়া কেউ প্রেগন্যান্ট (অন্তঃসত্ত্বা) হয়ে গেলে কী হবে?' (মানসুরা হোসাইন, "বিয়ের বয়স ১৮-ই থাকছে, মা-বাবা চাইলে ১৬", দৈনিক প্রথম আলো, ৭ মার্চ ২০১৫)

এই যদি হয় একটি আইন তৈরির স্পিরিট, তাহলে ধর্ষণ ঠেকানো যাবে? ধর্ষিতার করুণ পরিণতি তাহলে ধর্ষকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া?

১৬ বছর যুক্ত হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০'-এ ৯(১) ধারাটিতে ধর্ষণের শাস্তি বিধানে 'বিবাহ বন্ধন' বিষয়টিকে খুব জোর দিয়ে দেখা হয়েছে।

ব্যাপারটা এমন যে, বৈবাহিক সম্পর্ক থাক বা না-থাক, নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেলে এই নারীর 'মান-ইজ্জত' ও 'সতীত্বচ্ছেদ' থেকে বাঁচাতে হলে তাকে বিয়ে দিতে হবে, তার বয়স যতই হোক। কেননা বিধানের ব্যাখ্যা মতে – কোন পুরুষ "বিবাহ বন্ধন ব্যতিত" কোন নারীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করলেই তা "ধর্ষণ বলিয়া গণ্য হইবে"। অথবা, অন্য ব্যাখ্যায় বা মতান্তরে, "যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বত্সরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি[তে]" যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাহলে তা "ধর্ষণ বলিয়া গণ্য হইবে" না। অন্যদিকে, বিবাহ বন্ধন থাকলে 'সম্মতি ব্যতিরেকে' বা 'ভীতি প্রদর্শন' বা 'প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায়' করে যৌন সঙ্গম করলে, সেটাও "ধর্ষণ বলিয়া গণ্য হইবে" না। মানে, 'বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে ধর্ষণ করা জায়েজ আছে'! তাই তো? অথচ, আধুনিক পৃথিবীতে এটা সাংস্কৃতিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে যে, এমনকি একজন যৌনকর্মীকেও তার সম্মতি ব্যতিত যৌনসঙ্গম করতে চাইলে তা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।

আইনের এমন ব্যাখ্যাও যে কখনও কখনও ঘটনার নেপথ্যে মনস্তাত্ত্বিকভাবে কাজ করতে পারে, তা কি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি?

বয়স এ লেখায় এজন্যই আলোচ্য বস্তু। বয়সের সুযোগ নিয়ে ধর্ষিতাকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে করিয়ে দেওয়ার এ বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে সমালোচনার দৃষ্টিতে পাঠ করা দরকার। ধর্ষিতার বয়স কত, তিনি মাইনর চাইল্ড না অ্যাডাল্ট, সেটা কেন একটি আইনের বিবেচ্য বিষয় হবে? বিবেচ্য বিষয় হবে, একপক্ষ ধর্ষক, আরেকপক্ষ ধর্ষিত। চলমান আন্দোলনে 'ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট' দাবি করা হলেও, আইনের সূক্ষ্ম এ বিষয়টি নিয়েও আন্দোলনকারীদের কথা বলা দরকার। সুস্পষ্ট দাবি থাকা দরকার যে, অবশ্যই বয়সের এ সীমারেখা তুলে দিতে হবে।

৫.

বাংলাদেশে ধর্ষণকে বিয়ে হওয়া না-হওয়া দিয়ে যে খুব করুণভাবে 'জাস্টিফাই' করে রাখা হয়েছে, এটা তো পরিষ্কার। বিয়ে নামক একটি ট্যাবু নরনারীর সম্পর্কে নির্ধারক হবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু, কথা কি এখানেই শেষ হয়ে যায়?

আন্দোলনকারীরা 'মৃত্যুদণ্ড' দাবি করেছেন, সরকারও বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন। সঙ্গে, দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে এসব মামলার নিষ্পত্তি অন্যূন ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করারও জরুরতও বোধ করা দরকার। বিদ্যমান আইনে ৯০ দিন বা তার কাছাকাছি সময় ব্যতিত কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে 'অসীম' সময় লেগে যায় রায় প্রদান ও তা কার্যকর হতে। এটাই আইন ও বিচারের প্রতি মানুষের অনাস্থার মূল কারণ। এ কারণেই, কত ইয়াসমিন, কত কল্পনা, কত তনু, কত নুসরাতের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে আছে, তার হদিশ রাষ্ট্রের কাছে থাকে না! তারা তো তাও মরে গিয়ে 'বেঁচে' গিয়েছেন, সমাজের মুখোমুখি তাদের হতে হয়নি। কিন্তু, যারা বেঁচে যাবেন, তারা কি আদৌ 'বাঁচতে' পারবেন? আদৌ কি একজন নারী ধর্ষণের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেন? শারীরিক ট্রমা যদিবা কেটেও যায়, মানসিক ট্রমা কি কখনও কাটে?

এটা তো পরিষ্কার যে, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন দিয়ে ধর্ষণ ঠেকানোও যাচ্ছে না, আবার, ধর্ষণের অপরাধের ন্যায় বিচার সঙ্গত করাও সম্ভব হচ্ছে না। অথচ, সাজা হিসেবে আজীবন কারাদণ্ডও তো কম কঠোর শাস্তি নয়। তবুও, ধরেই নেওয়া যাক, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির পরও ধর্ষিতার সামাজিক অবস্থান যে বিভিন্ন সামাজিক ফতোয়া কিংবা ব্যক্তিগত লাজলজ্জা ও আত্মসম্মান ধুলিৎসাতের চিরন্তন ভয়ে টলায়মান হয়ে পড়ে এ সমাজে, সেটা থেকে তার মুক্তির উপায় কী?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯৮-১৯৯৯ সালের ইতিহাস সৃষ্টিকারী দুটি ধর্ষণবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গৌরবগাঁথা আমরা জানি। এ আন্দোলনেরই ফলাফল ২০০৯ সালে হাইকোর্টের যুগান্তকারী সেই রায়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে কর্মস্থলের জন্য যৌননিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন হয়েছে। অথচ, একটা লম্বা সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের দিকে সমাজ এমন চোখে তাকাত যেন তারা অন্য কোন দ্বীপবাসী! অথচ, বাংলাদেশ নাও জানতে পারে, অন্তত জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস জানে, সমাজের এমন শ্যেনদৃষ্টিকে এ ক্যাম্পাসের মেয়েরা থোড়াই কেয়ার করে। প্রতিরোধ-প্রতিবাদের দুর্গ গড়ে তোলা জাহাঙ্গীরনগরে পুরুষতন্ত্র তাই খুব জাঁকিয়ে বসতে পারে না। মুশকিলটা হলো, বাংলাদেশ মানেই জাহাঙ্গীরনগর না। আহা, সমগ্র বাংলাদেশই যদি সমাজের ট্যাবু ছিন্নভিন্ন করে আমাদের প্রতিরোধপ্রত্যয়ী জাহাঙ্গীরনগর হয়ে উঠত!

হয়ে উঠতে যেহেতু পারছে না, সেহেতু উপায়ন্তর কী?

বিয়ে যে কোন নিদান না, তা তো আমরা আগেই বলে নিয়েছি। বিয়ে আসলে শেষ পর্যন্ত অপরাধীকে শাস্তি না দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করে ধর্ষণের শিকার নারীকেই বরং 'যাবজ্জীবনে'র জন্য এক কারাগারে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দিয়ে উল্টো তারই শাস্তির বিধান করা। ফলে, আমাদের উন্নততর পথে হাঁটতে হবে, ভাবতে হবে।

প্রথমত, বিয়েকে যে সমস্যার সমাধান ভাবা যাবে না, তা মেনে নেওয়া। বিয়ে না হওয়াকে (একই সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়া বা তালাক হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও বলা যেতে পারে) কোনভাবেই একজন আক্রান্ত নারীর জীবন চলার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে না দেখে, তার সামাজিক ও মানসিক পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করতে রাষ্ট্রকে আইনিভাবেই দায়িত্ব নিতে হবে। কীভাবে জীবনধারণের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যায় এমন আক্রান্ত নারীকে, সেটা রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে। এটা খুব ভালো ব্যাপার যে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৩ ধারা 'ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত বিধান' অনুযায়ী সন্তানকে 'সিঙ্গেল মাদার' বা 'নিঃসঙ্গী মা'র পরিচয়ে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সেই শিশুর কমপক্ষে ২১ বছর পর্যন্ত ভরণপোষণের দায়িত্বও রাষ্ট্র আইন করে নিজের দায়িত্বে নিয়েছে। এই আইনের স্পিরিট এটাই যে, একজন সন্তানের পিতৃপরিচয় না থাকাটা কোনভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে না। কিন্তু, মায়ের সামাজিক-মানসিক পুনর্বাসনের দায়িত্ব কি নেবে না রাষ্ট্র? একই রকমভাবে, অপ্রাপ্ত বয়স্করা যদি এমন পাশবিকতার শিকার হয়, তা হলে ঠিক কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই শিশু-কিশোরীদের সমাজে-পরিবারে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে পুনর্বাসন করা যাবে, রাষ্ট্র কী ধরনের দায়িত্ব নেবে, তারও বিধান পরিষ্কার করেনি রাষ্ট্র। এটাও খুবই জরুরি ও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে এবং বিধিসিদ্ধ আইন তৈরি করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ককে আইনী বৈধতা দেওয়া, যেন বিয়ে না হলেও যে কোন ১৮ বছরোর্ধ্ব প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে তার জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পুরুষশাসিত সমাজের দিকে মুখ পানে চেয়ে থাকতে না হয় কিংবা পুরুষতন্ত্র যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এর দৃষ্টান্ত খোঁজার জন্য খুব বেশি দূর যেতে হবে না। প্রতিবেশি দেশ ভারতেই এ দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে উচ্চ আদালত এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতীয় পেনাল কোডের ৪৯৭ ধারার 'বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের সাজা'কে ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৫ ও ২‌১ নম্বর ধারা অনুযায়ী অসাংবিধানিক রায় দেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে আইনসিদ্ধ করার কারণ বলতে গিয়ে তৎকালীন ভারতীয় প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, যিনি এই ঐতিহাসিক রায়ের মাত্র ৫ দিন পরেই অবসরে গিয়েছিলেন, তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, 'স্বামী স্ত্রীর প্রভু নন। নারীকে পুরুষের মতোই সমানাধিকারের চোখে মূল্যায়ন করতে হবে।'

তৃতীয়ত, যৌন শিক্ষা/সেক্স এঝুকেশনকে জরুরিভাবে স্কুল-কলেজের একাডেমিক ক্যারিকুলামে সংযুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা 'জেন্ডার স্টাডিস' পড়েন। হুবুহু এই নামেও স্কুল-কলেজের সিলেবাসে একটি কোর্স থাকতে পারে। তবে, কোর্স শিরোনাম যাই হোক, একাডেমিক ক্যারিকুলামে এ বিষয়ক শিক্ষা যুক্ত করা আজকে এমন দুঃসময়েই সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

এ তিনটি বিষয় আইনের রূপ পরিগ্রহ না করলে, সাংস্কৃতিকভাবে বাংলাদেশের সমাজে এগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করা খুব মুশকিল। নানারকম অপ্রগতিশীল-সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদী-লিঙ্গবাদী চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপত্র তৈরি করেছি, যে রাষ্ট্রে এসব জরুরি কথা মন খুলে বলাও যায় না। কিন্তু, কথা আমাদের বলে যেতে হবে। অন্যদিকে, আরও দু'টি বিষয় আছে, যেগুলোকে আসলে আইন করে সমাজে প্রতিষ্ঠত করা যায় না। এগুলো নির্ভর করে একটি সমাজ ও তার মধ্য থেকে বেড়ে ওঠা রাষ্ট্র চিন্তাভাবনায় ঠিক কতটা প্রাপ্তবয়স্ক, পরিপক্ক ও উদারনৈতিক হতে পেরেছে, তার ওপরে।

এক. নারী ও পুরুষ উভয়কেই সামাজিকভাবে 'সীতা' ও 'সতীত্ব' বিষয়ক ট্যাবু ভাঙতে হবে প্রবলভাবে। যৌনাঙ্গই যে শেষ পর্যন্ত জীবন-মরণ ও আত্মমর্যাদার নিয়ন্ত্রক ও নির্ধারক নয়, এটিকে সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করাটা আজকের 'আধুনিক' সমাজে খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। ধর্ষণ মানবহত্যার মতোই গুরুতর অপরাধ, কিন্তু আক্রান্ত 'সব শেষ হয়ে গেল' ধারণা করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে, তা কখনই কাম্য নয়। এসব ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা একজন আক্রান্ত নারীর সংগ্রামের পরিপূরক। কেননা, সমাজের বুকের মধ্যে যে পুরুষতন্ত্র প্রবল জগদ্দল পাহাড় হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে ভাঙতে হলে পুরুষকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। 'বিধবাবিবাহ আইন' প্রবর্তনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ক্যারিশমা শুধু এটা নয় যে, তিনি এটি প্রবর্তনে ভূমিকা পালন করেছিলেন। বরং এটাও তার বড় ক্যারিশমা ছিল যে, দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি তার পুত্র নারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে একজন বিধবার সঙ্গে বিবাহ দিয়েছিলেন।

দুই. প্রতিনিয়ত নারীর পোশাককে ধর্ষণের জন্য দায়ী করে যে বহু যুগের পুরুষী মোড়লিপনা, সেই মগজের ব্যারিকেডটা ভাঙতে হবে। নারীর পোশাক কখনই ধর্ষণের মনসত্ত্বের জন্য দায়ী হতে পারে না। হলে, একজন মায়ের কোলের শিশু বা বোরখা পরিহিত নারী ধর্ষণ তথা যৌন নির্যাতনের শিকার হতেন না। পোশাকই যদি দায়ী হবে, তাহলে ভারতীয় মেয়েরা যে ধরনের পোশাক পরে বাইরে চলাফেরা করেন, সে পোশাক তারা নাগরিক জীবনে পরিধান করতেন না ভারতীয় পুরুষতন্ত্রের গায়ে ধর্ষণের এতে প্রবল অভিযোগ থাকার পরও। তাছাড়া, পশ্চিমে স্বল্পবসন থাকার যে পোশাকী রীতি দেখা যায়, সেটার ফলে বাংলাদেশের চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি ধর্ষণ সেখানে হওয়ার কথা। আদতেই কি তাই হয় অমন উদারনৈতিক সমাজে? হয় না বলেই, নারীকে তার যথোপযুক্ত পোশাক পছন্দের সুযোগ দিতে হবে। আর এই পোশাকের জন্য, এমনকি কোন নারীকে যদি ইভটিজিংয়ের শিকারও হতে হয়, তাহলে ইভটিজারের জন্য যথোপযুক্ত সাজার বন্দোবস্ত করে দ্রুততম সময়েই তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৬.

সন্দেহ নেই, সারা পৃথিবীতেই নারীকে যেমন ভোগ্যপণ্য ও যৌনবস্তু মনে করা হয়, তা একটি ক্ষমতাবান পুরুষতান্ত্রিক শ্রেষ্ঠত্ববাদী অবস্থান থেকেই করা হয়। ধর্ষণের মনস্ত্বত্ত্বের সঙ্গে ক্ষমতার অবশ্যই যোগ আছে। সে ক্ষমতা প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক ক্ষমতা নাও হতে পারে, কিন্তু আমাদের সমাজে পুরুষতন্ত্রকে শক্তিমানের প্রতীক হিসেবে দেখার রাজনীতিটি তো আজও প্রবল। যে কারণে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থায় নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তি আজকের তারিখেও ভীষণ কণ্টকময়। এই ক্ষমতা-সম্পর্ককে প্রশ্ন না করে, মোকাবিলা না করে ধর্ষণ ঠেকানো যাবে? কিংবা ধর্ষণের বিচার 'ন্যায়বিচার' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে?

বিচারের প্রশ্ন অবশ্য আসেই না, যদি দুর্ঘটনা না ঘটে কিংবা নারীর জীবনও পুরুষের মতো স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু, পুরুষতন্ত্রের ক্ষমতার দম্ভ এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে যে, তা এক 'ভয়ের সংস্কৃতি' তৈরি করে ফেলেছে রাষ্ট্রের কোণে কোণে এবং নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোণঠাসা নারীকেই শেষ পর্যন্ত হতে হচ্ছে। তাই, যেখানেই নারীর অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্ন আসবে, সেখানেই রাষ্ট্র এবং একই সঙ্গে সমাজেরও 'জিরো টলারেন্স' অবস্থান তৈরি করতে হবে। যদি রাষ্ট্র ও সমাজ তা করতে ব্যর্থ হয়, যদি পুরুষ হিসেবে নারীর প্রতি এই সহানুভূতি তৈরিতে ব্যক্তি আমিও ব্যর্থ হই, তাহলে আমিও আসলে শেষতক অপরাধী। একজন পুরুষ হিসেবে সে অপরাধ আমারও, যেমন তা রাষ্ট্র ও সমাজের।

স্মরণ করি, 'নৈবেদ্য' কাব্যগ্রন্থের সত্তরতম কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত চরণ দু'টি—

'অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে

তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।'

ঠাকুরকে ধার করেই সুর্নিদিষ্টভাবে বলি, 'ধর্ষণ যে করে আর ধর্ষণ যে সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।'