জাতীয় বাজেট এবং উপেক্ষিত পর্যটন শিল্প

মাসুদুল হাসান জায়েদী
Published : 21 June 2020, 01:58 PM
Updated : 21 June 2020, 01:58 PM

বর্তমানে সমগ্র পৃথিবী এক চরম দুঃসময় পার করছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রভাবে চলমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রেক্ষাপটে বিশ্ব অর্থনীতির আজ ভঙ্গুর দশা। একদিকে যেমন কর্মচাঞ্চল্য স্তম্ভিত অন্যদিকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সামাল দিতে সকল দেশ নাজেহাল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ত্রাহি ত্রাহি রব। এমন অবস্থায় দেশের বাজেট ঘোষণা মোটেও সহজ কাজ নয়। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে মূল প্রত্যাশা হচ্ছে, এই বাজেট যেন অর্থনীতির হাল ধরে রাখতে পারে। দেশের এমন নাজুক অবস্থায় গত ১১ জুন, ২০২০ তারিখে পেশ করা হলো দেশের ৪৯ তম বাজেট। বর্তমান পরিস্থিতে স্বাস্থখাত প্রাধান্য পাবে সেটাই স্বাভাবিক। সেই সাথে কৃষি, শিক্ষাসহ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেই যে সিংহভাগ বরাদ্দ যাবে বোঝাই যায়। 

এত গুরুত্বপূর্ণ খাতের ভিড়ে অবহেলিত পর্যটন খাত যে উপেক্ষিত হবে তা ধারণা করা যেতেই পারে। যেখানে ১৯৯৯ সালে অত্যাবশ্যকীয় শিল্পখাত হিসাবে ঘোষণা করার পরেও আজও তা শিল্পের মর্যাদা পায় নি। তথাপি ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন খাতে ৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে তা বেড়েছে ২৬২ কোটি টাকা। যদিও চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এরমধ্যে প্রায় ৮০% বাজেট বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। এত বড় পর্যটন খাতের জন্য মাত্র ৭২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারী দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রথম যেই কার্যক্রম বন্ধ করা হয় তা হচ্ছে পর্যটন এবং মহামারী শেষ হলেও সবচেয়ে দেরিতে যে ক্ষেত্র কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পাবে সেটাও এই পর্যটন। ফলে দেশের পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। একটি বিপুল জনগোষ্ঠীর শ্রমবাজার হুমকির সম্মুখীন। একটা কথা বিবেচনা করা প্রয়োজন, পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক হয় দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত ফলে তারা যদি এই শিল্প ছেড়ে অন্য কাজে চলে যায় তবে এই শূন্যতা সহসা পূরণ করা কঠিন হবে। তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছিলেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে ছিল পর্যটন খাতের জন্য বিশেষ প্রণোদনা। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে তা দেওয়া হয়নি।

যদিও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশ্বাস দিয়েছেন, কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকার সক্রিয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, 'পর্যটন শিল্পকে অর্থনৈতিক খাত হিসেবে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যেমন, দেশের পর্যটন সম্ভাবনাময় স্থানগুলোতে কেবল বিদেশিদের জন্য স্বতন্ত্র পর্যটন এলাকা স্থাপন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রেখে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক, দ্বীপভিত্তিক পর্যটন পার্ক ও হোটেল নির্মাণ এবং পর্যটকদের বিনোদনসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।' কিন্তু যে বিশাল কর্মীবাহিনী বিগত কয়েক মাস যাবত কর্মহীনতায় ভুগছে এবং বিভিন্ন হোটেল রিসোর্ট কর্মী ছাটাই করছে এরা কি ভাবে টিকে থাকবে তার কোন দিক নির্দেশনা এ বাজেটে প্রতিফলিত হয় নি।

প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে যে ৪০ লাখ লোক এ শিল্পের সাথে জড়িত তাদের প্রতি কি রাষ্ট্রের কোনও দায়িত্ব নেই? বাজেটে পর্যটন শিল্পের পেশাজীবীর স্বার্থ উপেক্ষা করে মূলত পর্যটন শিল্পকে অবহেলা করা হয়েছে। তাই পর্যটন শ্রমিক ও কর্মচারীদের পূর্ণবাসনে বিশেষ বরাদ্ধ , রেশন কার্ড ও ক্ষতিগ্রস্ত সকল মালিক- শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে ২৪ জুন সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতীকি মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেলস ওয়ার্কার্স- এমপ্লয়িজ ফেডারেশন।

জাতীয় বাজেট পেশের পূর্বে গত ২১ মে সম্মিলিত পর্যটন জোটের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বাজেটে ট্যুরিজম রিকভারি ও উন্নয়নে বরাদ্দ নির্ধারণ শীর্ষক বিষয়ে একটি অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পীরজাদা শহীদুল হারুণ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ। সেই সভায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে পর্যটনকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সম্মিলিত পর্যটন জোট ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রত্যাশা করে। এর মধ্যে পর্যটন রিকভারির জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা এবং পর্যটন উন্নয়নের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাব পেশকালে বলা হয় যে, পর্যটন বাংলাদেশের 'গ্রো ইঞ্জিন' এবং এটি দেশের ৩য় ক্যাটাগরির আয়ের মাধ্যম। ২০১৯ সালে পর্যটন বাংলাদেশের জিডিপিতে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থাৎ ৭৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকার অবদান রেখেছে, পর্যটন রপ্তানির মাধ্যমে একই বছর ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে এবং এই সেক্টরে বর্তমানে নিয়োজিত আছে প্রায় ৪০ লাখ কর্মী। এই কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ।

বর্তমান বাজেটে নিঃসন্দেহে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে বিস্তর ফারাক। তাই গত ১৭ জুন তারিখে সম্মিলিত পর্যটন জোটের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমানের সঞ্চালনায় সম্মিলিত পর্যটন জোটের উদ্যোগে 'পর্যটনে বাজেট' শীর্ষক ওয়েবনার আয়োজন করা হয়। পর্যটন বাজেট পর্যালোচনায় উপস্থিত ছিলেন ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) লুবনা ইয়াসমিন, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের সমন্বয়কারী শফিকুজ্জমান, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক (মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশন) সাহেদ উল্লাহ, ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, ময়মনসিংহ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সদস্য আবদুল কাদের চৌধুরী মুন্না ও সম্মিলিত পর্যটন জোটের প্রথম যুগ্ম-আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম সাগর, বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদুল হাসান জায়েদী এবং ডিরেক্টর অপারেশন কিশোর রায়হান সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। এছাড়াও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি টেলিফোনে এই সভায় যুক্ত ছিলেন।

বর্তমান বাজেট প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী স্বীকার করেন প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের পর্যটন খাতকে অবহেলা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, "সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ, সমুদ্র সৈকত এলাকা ও সিলেটের প্রাকৃতিক নিসর্গ ভিত্তিক পর্যটন গড়ে তোলার জন্য এই বাজেট অত্যন্ত অপ্রতুল।" তিনি সংসদে পাস হওয়ার পূর্বে মন্ত্রণালয়কে এই বাজেট পুনর্মূল্যায়ন করার পরামর্শ দিবেন বলে জানান।

ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ বলেন, পর্যটন কোনও একক সত্ত্বা নয় পর্যটনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নির্ধারিত থাকলেও অন্তত ১৭ (সতের)টি মন্ত্রণালয় মিলে এই সেক্টরের কাজ করতে হয়। কাজেই পর্যটন বাজেট পর্যালোচনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বাজেটও পর্যালোচনা করতে হবে। পর্যটন বান্ধব বাজেট পেতে হলে পর্যটনকে মেইনস্ট্রিমিং করতে হবে যেন অন্যান্য মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকাণ্ড ও বাজেট প্রণয়নের সময় পর্যটনকে বিবেচনা করে। তা নাহলে পর্যটনের বাজেট বাড়ালেও তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জিত হবে না। এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তিনি অবিলম্বে ট্যুরিজম স্যাটেলাইট একাউন্ট চালুর কার্যক্রম শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) লুবনা ইয়াসমিন বলেন, বাজেট প্রণয়নে মন্ত্রণালয়ের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে তা প্রণীত হয়। যেমন, আগের বছরের ব্যয়িত অর্থের সাথে ১৫ শতাংশ হারে পরের বছরের বাজেট তৈরি হয়। তাই বাজেটের আয়তন হঠাৎ করে বাড়ে না। তাছাড়া পর্যটনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক বড় দূর্বল একারণে মন্ত্রণালয় পর্যটনের বিষদ কিছু জানে না। তিনি সম্মিলিত পর্যটন জোটকে আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রস্তাবনা নিয়ে আসুন, আমরা বাস্তবায়ন করবো।

রাজেকুজ্জামান বলেন, দেশের পর্যটন অবস্থার পরিবর্তনের জন্য চাই অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপত্তা উন্নয়ন এবং সহজ শর্তে অর্থায়ন। বর্তমানে এই ক্ষেত্র কর্মহীন হয়ে আছে তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার এখনই উত্তম সময়। তিনি আরো বলেন পর্যটন তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি করতে পারে। আর আজকের তরুণ পর্যটনের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হলে পরবর্তী অন্তত ৪০ বছর তার প্রভাব থাকবে এবং দেশকে সেবা দিবে।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই আমাদের দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর পর্যটন স্বাক্ষরতার অভাব রয়েছে। তাই এই শিল্পের পশ্চাৎপদতার একক দায় শুধু সরকারের উপর বর্তায় না। পর্যটন ব্যবসায়ীরা যেমন এই শিল্পের গুরুত্ব সরকারকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন, পর্যটন সুশীল সমাজ যেমন শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিকগণও তেমন অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে নি।

তবে আশার বাণী হলো আগামী কয়েক বছরে নিশ্চিতরূপে এ শিল্পের পরিবর্তন ঘটবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২ নভেম্বর ট্যুরিজম সেক্টরকে এসএমই এবং পুনঃঅর্থায়নযোগ্য খাত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য এক পরিপত্রের মাধ্যমে একে সেবা ও অগ্রাধিকার খাত হিসেবে নির্ধারণ করে। এই পরিপত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত ২৪টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এসএমই খাতের মধ্যে পর্যটন ৫ম স্থানে রয়েছে। তবে পর্যটনের সকল উপখাতগুলি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না করার জন্য ঋণ সুবিধা থেকে ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন গত ১৪ জুন ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মহোদয় বরাবরে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করে। এতে পর্যটনখাতে ১০টি উপখাত চিহ্নিত করে তার অধীন ১২৫টি ক্ষেত্রে পর্যটনে এসএমই ঋণদানের জন্য প্রস্তাবনা করা হয়েছে।

নির্ণীত পর্যটনের ১০ (দশ) টি উপখাতগুলো হচ্ছে-

১. পর্যটন আবাসন

২. পর্যটন পরিবহণ

৩. খাদ্য ও খাবার

৪. বিনোদন

৫. বিশেষায়িত পর্যটন কার্যক্রম

৬. মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান

৭. পর্যটন শিক্ষা

৮. পর্যটন প্রযুক্তি

৯. পর্যটন প্রকাশনা

১০. বিবিধ

এছাড়াও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাথে চুক্তি মোতাবেক মোড-৪ অনুযায়ী পর্যটন ও টেলিকমিউনিকেশনকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) ও পর্যটন জোটের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম শুরু হচ্ছে। গঠিত হচ্ছে প্রথম পর্যটন সমবায় সমিতি।

আমাদের দেশে গার্মেন্টস সেক্টরকে প্রধান রপ্তানি শিল্প হিসেবে ধরা হয় অথচ গার্মেন্টস সেক্টর বছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করলেও ২২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি করে। অন্যদিকে ইউরোপের বাজার পড়ে গেলে গার্মেন্টসও পড়ে যাবে। কিন্তু পর্যটনের রপ্তানি নিট এবং এই বাজার কখনো পড়বে না। ২০১৯ সালে পর্যটন আমাদের জিডিপিতে ৪ দশমিক অর্থাৎ ৭৭ হাজার ৩০০ কোটির অবদান রেখেছে, ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং মোট অর্থনীতির ৩ শতাংশের অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করেছে। একই বছর পর্যটন রপ্তানি থেকে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। পর্যটন রপ্তানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর আয়ের পুরো টাকাটাই দেশে থাকে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন যে, মহামারীকে কাটিয়ে উঠার জন্য পর্যটন একটি প্লাটফর্ম হতে পারে। জনগণকে একত্রিত করার মাধ্যমে পর্যটনই পারে সংহতি ও আস্থা বাড়িয়ে তুলতে। তিনি এই মর্মে বিশ্বকে একটি বার্তা প্রেরণ করেছেন যে, জাতিসঙ্ঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা পুনরায় পর্যটন শুরু করার মাধ্যমে টেকসই বিকাশের জন্য ২০৩০-এর এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং আমাদের সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সদস্যদের সুরক্ষায় এই খাতটির অনন্য ভূমিকা পালন করবে।

তাই আগামীতে সংহতি ও আস্থা বাড়িয়ে পর্যটন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসাবে গড়ে উঠবে এ প্রত্যাশা সকলের।