মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

এম এম আর জালাল এবং বিদ্যুৎ দে
Published : 7 March 2020, 09:54 AM
Updated : 7 March 2020, 09:54 AM

আজকাল আমরা কথায় কথায় "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" এই শব্দদ্বয় প্রায়ই শুনতে পাই। কিন্তু "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" বলতে আসলে কি বোঝায়? কয়েকদিন আগে একজন বিশাল মোটিভেশনাল স্পিকারকে বলতে দেখলাম "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" অর্থ হার না মানা। এক একজন এক এক রকম কথা বলেন। এর মধ্যে অনেক তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক নেতা, আমলা, সাংবাদিক ইত্যাদি রয়েছেন। জিজ্ঞাসা করলে এক একজন এক একরকম কথা বলেন। বেশিরভাগ মানুষই কেমন জানি ভাসা ভাসা কথা বলেন। অর্থাৎ তাদের নিজেদেরই এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা নেই। যারাই এই শব্দদ্বয় ব্যবহার করছেন তাদের মধ্যে অনেকে না বুঝে, অনেকে হুজুগে, অনেকে বিভেদের উদ্দেশ্যে আর অনেকে তেলবাজি করতে ব্যবহার করছেন।

"মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" ফ্রেজটি বা শব্দবন্ধটি হাল আমলে খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বা এর অব্যবহিত পর এই শব্দের ব্যবহার কোনো পত্রপত্রিকা, বই, সরকারি নথি বা কোনো দলিলে ব্যবহৃত হয়েছে এমন কিছু আমাদের চোখে পড়ে নাই। অর্থাৎ শব্দটির ব্যবহার বেশিদিনের নয়।

"মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" – এই ফ্রেজটাকে আমরা যদি একটু ভাবসম্প্রসারণ বা ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করি তাহলে আমরা বুঝতে পারব – মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে সেই সব চেতনার কথা, সেই সব আকাঙ্ক্ষার কথা নির্দেশ করে যার জন্য বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ সময় আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন এবং অবশেষে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছেন।

"মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" হঠাৎ করে পাওয়া কোনো বিষয় নয়।

ইংরেজ কলোনী থেকে বাঁচতে এ অঞ্চলের মানুষ মুসলীম লীগকে সমর্থন করে পাকিস্তান কায়েম করল। যাকে ত্রাতা ভেবেছিল সেই মুসলিম লীগ তথা পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে যেন আমরা নতুন গোলাম হয়ে গেলাম। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার লুন্ঠিত হলো। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শোষণ করা হচ্ছিল। পাকিস্তানের ২৩ বছরের ইতিহাস বাংলার মানুষের বঞ্চনার ইতিহাস। বাংলার মানুষ আবার মাঠে নামল, মরনপণ শপথে শুরু করল অধিকার আদায়ের লড়াই। এই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে গ্রহণ, বর্জন, সংশ্লেষণ, নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা, মুল্যবোধের দীর্ঘ রাস্তা পেরিয়ে "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট অবয়ব পায়।

১৯৭০ এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টো, বিভিন্ন ভাষ্যসমূহ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ভাষণসমূহ যদি আমরা সতর্কচোখে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা সেখানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে সংবিধানের কাঠামো কেমন হবে, সরকার কী কী বিষয় অগ্রগণ্য হিসাবে ব্যবস্থা নেবেন তার পরিস্কার দিকনির্দেশনা আছে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্য থেকে গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের অধিকার সুরক্ষা করা, সুবিচার, সম্পদের সমবন্টন করা, জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়াসহ মৌলিক বিষয়গুলো যেখানে যেভাবে সুযোগ পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে স্পষ্টভাবে বলেছেন। ৬ দফার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

আমরা সংবিধান এবং সরকারি গেজেটের আলোকে "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" এর ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করছিলাম।

১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদ তথা মহান সংসদে শ্রদ্ধেয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম "স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কীয় প্রস্তাব" –এ বলেন:

"…… এক্ষণে এই পরিষদ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সেই সব মূর্তপ্রতীক ও আদর্শ, তথা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, যা শহীদান ও বীরদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছিলো, তার ভিত্তিতে দেশের জন্য একটি উপযুক্ত সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করছে।"

সম্প্রতি বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যা, সোমবার, অক্টোবর ৮, ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত ২০১৮ সনের ৪৬ নং আইন "ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন"- এ "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে:

"মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" অর্থ যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্ধুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ;"

অর্থাৎ আমরা একথা নির্দ্বিধায় উচ্চকন্ঠে বলতে পারি, লাখ লাখ মানুষের রক্তস্নাত পথে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছিলাম তার পিছনে মূল চারটি আকাঙ্ক্ষা কাজ করেছিল। সেগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

এখন আসুন আমরা এই চারটি আদর্শ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি আমাদের জাতির জনকের জবানীতে।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গণপরিষদ, ঢাকা, শনিবার, ৪-নভেম্বর-১৯৭২, সকাল ১০-৪০মিনিট-এ প্রদত্ত ভাষণে বলেন:

" ……

জনাব স্পিকার সাহেব,

চারটা স্তম্ভের উপর এই শাসনতন্ত্র রচিত হয়েছে। এ সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা এই হাউসে হয়েছে। আমার সহকর্মীরা অনেকেই এর উপর বক্তৃতা করেছেন। আমার সহকর্মী ড. কামাল হোসেনও অনেক কথার উত্তর দিয়েছেন। অন্য সদস্যরাও এর উপর বক্তৃতা করেছেন।

এই যে চারটা স্তম্ভের উপর শাসনতন্ত্র রচনা করা হলো, এর মধ্যে জনগণের মৌলিক অধিকার হচ্ছে একটা মূলবিধি। মূল চারটা স্তম্ভ জনগণ ভোটের মাধ্যমে তা প্রমাণ করে দিয়েছে। শুধু ভোটের মাধ্যমে নয়, ৩০ লক্ষ লোক জীবন দিয়ে, রক্তের মাধ্যমে তা প্রমাণ করে দিয়েছে।

হ্যাঁ, অধিকার আছে অনেক কথা বলার।

জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল চরম মরণ-সংগ্রামে। জাতীয়তাবাদ না হলে কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। আমরা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। জাতীয়তাবাদের অনেক সংজ্ঞা আছে। অনেক ঋষি, অনেক মনীষী, অনেক বুদ্ধিজীবী, অনেক শিক্ষাবিদ এ সম্পর্কে অনেক রকম সংজ্ঞা দিয়েছেন। সুতরাং, এ সম্বন্ধে আমি আর নতুন সংজ্ঞা না-ই দিলাম। আমি শুধু বলতে পারি, আমি বাংলাদেশের মানুষ, আমি একটা জাতি।

এই যে জাতীয়তাবাদ, সে সম্পর্কে আমি একটা কথা বলতে চাই। ভাষাই বলুন, শিক্ষাই বলুন, সভ্যতাই বলুন, আর কৃষ্টিই বলুন—সকল কিছুর সঙ্গে একটা জিনিস রয়েছে। সেটা হলো অনুভূতি। এই অনুভূতি যদি না থাকে, তাহলে কোন জাতি বড় হতে পারে না। এবং জাতীয়তাবাদ আসতে পারে না। অনেক জাতি দুনিয়ায় আছে, যারা বিভিন্ন ভাষাবলম্বী হয়েও এক-জাতি হয়েছে। অনেক দেশে আছে, একই ভাষা, একই ধর্ম, একই সবকিছু নিয়ে বিভিন্ন জাতি গড়ে উঠেছে–তারা এক জাতিতে পরিণত হতে পারে নাই। জাতীয়তাবাদ নির্ভর করে অনুভূতির উপর।

সে জন্য আজ বাঙালি জাতি যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে, যার উপর ভিত্তি করে আমরা স্বাধীনতা নিয়েছি, যার উপর ভিত্তি করে আমরা সংগ্রাম করেছি, সেই অনুভূতি আছে বলেই আজকে আমি বাঙালি, আমার বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এর মধ্যে যদি কেউ আজকে দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন তুলতে চান, তাহলে তাকে আমি অনুরোধ করব, মেহেরবানী করে আগুন নিয়ে খেলবেন না।

দ্বিতীয় কথা, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র সেই গণতন্ত্র, যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে।

মানুষের একটা ধারণা এবং আগেও আমরা দেখেছি যে, গণতন্ত্র যে সব দেশে চলেছে দেখা যায় সে সব দেশে গণতন্ত্র পুঁজিপতিদের protection দেওয়ার জন্য কাজ করে এবং সেখানে শোষকদের রক্ষা করার জন্যই গণতন্ত্র ব্যবহার করা হয়। সেই গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র এবং সেই শোষিতের গণতন্ত্রের অর্থ হলো, আমার দেশে যে গণতন্ত্রের বিধিলিপি আছে, তাতে যে সব provision করা হয়েছে, যাতে এ দেশের দুঃখী মানুষ protection পায়, তার জন্য বন্দোবস্তু আছে – ঐ শোষকরা যাতে protection পায়, তার ব্যবস্থা নাই। সে জন্য আমাদের গণতন্ত্রের সঙ্গে অন্যের পার্থক্য আছে। সেটা আইনের অনেক schedule-এ রাখা হয়েছে, অনেক বিলে রাখা হয়েছে, সে সম্বন্ধে আপনিও জানেন। অনেক আলোচনা হয়েছে যে, কারও সম্পত্তি কেউ নিতে পারবে না। সুতরাং, নিশ্চয়ই আমরা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে হাত দিচ্ছি না। কিন্তু যে চক্র দিয়ে মানুষকে শোষণ করা হয়, সেই চক্রকে আমরা জনগণের জন্য ব্যবহার করতে চাই। তার জন্য আমরা প্রথমেই ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, কাপড়ের কল, জুট মিল, সুগার ইন্ডাস্ট্রি-সব কিছু জাতীয়করণ করে ফেলেছি, তার মানে হলো, শোষকগোষ্ঠী যাতে এই গণতন্ত্র ব্যবহার করতে না পারে। শোষিতকে রক্ষা করার জন্য এই গণতন্ত্র ব্যবহার করা হবে। সে জন্যই এখানের গণতন্ত্রের, আমাদের সংজ্ঞার সঙ্গে অন্য অনেকের সংজ্ঞার পার্থক্য হতে পারে।

তৃতীয়ত, socialism বা সমাজতন্ত্র। আমরা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি। এবং বিশ্বাস করি বলেই আমরা এগুলি জাতীয়করণ করেছি। যারা বলে থাকেন, সমাজতন্ত্র হলো না, সমাজতন্ত্র হলো না, তাদের আগে বোঝা উচিত, সমাজতন্ত্র কী।

সমাজতন্ত্রের জন্মভূমি সোভিয়েত রাশিয়ায় ৫০ বছর পার হয়ে গেল, অথচ এখনও তারা সমাজতন্ত্র বুঝতে পারে নাই। সমাজতন্ত্র গাছের ফল না – অমনি চেখে খাওয়া যায় না। সমাজতন্ত্র বুঝতে অনেক দিনের প্রয়োজন, অনেক পথ অতিক্রম করতে হয়। সেই পথ বন্ধুরও হয়। সেই পথ অতিক্রম করে সমাজতন্ত্রে পৌঁছানো যায়।

সে জন্য পহেলা step, যাকে প্রথম step বলা হয়, সেটা আমরা গ্রহণ করেছি—শোষণহীন সমাজ। আমাদের সমাজতন্ত্রের মানে শোষণহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। এক এক দেশ, এক এক পন্থায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে।

সমাজতন্ত্রের মূলকথা হলো, শোষণহীন সমাজ। সেই দেশের কী climate, কী ধরনের অবস্থা, কী ধরনের মনােভাব, কী ধরনের আর্থিক অবস্থা, সব কিছু বিবেচনা করে step by step এগিয়ে যেতে হয় সমাজতন্ত্রের দিকে এবং তা আজকে স্বীকৃত হয়েছে।

রাশিয়া যে পন্থা অবলম্বন করেছে, চীন তা করে নাই, সে অন্যদিকে চলেছে। রাশিয়ার পার্শ্বে বাস করেও যুগোস্লাভিয়া, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া তাদের দেশের environment নিয়ে, তাদের জাতির background নিয়ে, সমাজতন্ত্রের অন্য পথে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যান- ইরাক একদিকে এগিয়ে চলেছে, আবার মিসর অন্যদিকে চলেছে।

বিদেশ থেকে হাওলাত করে এনে কোনদিন সমাজতন্ত্র হয় না, তা যারা করছেন, তারা কোনদিন সমাজতন্ত্র করতে পারেন নাই। কারণ – লাইন, কমা, সেমিকোলন পড়ে সমাজতন্ত্র হয় না, যেমন আন্দোলন হয় না।

সে জন্য দেশের environment, দেশের মানুষের অবস্থা, তাদের মনোবৃত্তি, তাদের 'কাস্টম', তাদের আর্থিক অবস্থা, তাদের মনোভাব, সব কিছু দেখে step by step এগিয়ে যেতে হয়। একদিনে সমাজতন্ত্র হয় না। কিন্তু আমরা নয় মাসে যে পদক্ষেপগুলি নিয়েছি, তা আমার মনে হয়, দুনিয়ার কোন দেশ, যারা বিপ্লবের মাধ্যমে Socialism করেছে, তারাও আজ পর্যন্ত তা করতে পারে নাই- আমি চ্যালেঞ্জ করছি। কোন কিছু করলে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি হয়ই। সেটা process-এর মাধ্যমে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়।

তারপরে আসছে ধর্মনিরপেক্ষতা। জনাব স্পিকার সাহেব, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করবও না।

ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারও নাই। হিন্দু তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নাই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধাদান করতে পারবে না। খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না।

২৫ বছর আমরা দেখেছি, ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেঈমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, ধর্মের নামে খুন, ধর্মের নামে ব্যভিচার – এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলছে।

ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা চলবে না। যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয় নি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছি।

কেউ যদি বলে, গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার নাই, আমি বলব সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যদি গুটি কয়েক লোকের অধিকার হরণ করতে হয়, তাহলে তা করতে হবে।

কোন কোন বন্ধু বলেছেন, schedule-এ এ জিনিস নাই, ও জিনিস নাই। জনাব স্পিকার সাহেব, কেবল শাসনতন্ত্র পাস করলেই দেশের মুক্তি হয় না, আইন পাস করলেই দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম হয় না, ভবিষ্যৎ বংশধর, ভবিষ্যং জনসাধারণ কেমন করে, কীভাবে শাসনতন্ত্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে, তারই উপর নির্ভর করে শাসনতন্ত্রের success, কার্যকারিতা। আমরা চারটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে শাসনতন্ত্র দিয়েছি। ……"

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাই কোনো ফাঁপা বাগাড়ম্বর নয়, বরং সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চার মুলনীতিকে নির্দেশ করে।