স্বীয় মহিমায় উৎকর্ষিত হোক দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়

শাম্মী আক্তার
Published : 2 Sept 2019, 10:21 AM
Updated : 2 Sept 2019, 10:21 AM

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশনের খসড়া নীতিমালায় শিক্ষকদের সপ্তাহে ৪০ কর্মঘণ্টার (সপ্তাহে ৫ দিন ৮ ঘণ্টা করে) বিধানটি যথাযথ কার্যকর করার জন্য জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সপ্তাহে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা দুপুরের খাবারের বিরতি। সে হিসাবে সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৩৫। সপ্তাহে একজন শিক্ষক ছয় ঘণ্টা খণ্ডকালীন চাকরি করতে পারবেন। এর মধ্যে তিন ঘণ্টা কর্মদিবসে, বাকি ৩ ঘণ্টা ছুটির দিনে চাকরি করতে পারবেন শিক্ষকরা। এ হিসাবে প্রতিদিন দুপুরের খাবারের বিরতি ও খণ্ডকালীন তিন ঘণ্টা বাদ দিলে নিজ বিভাগেই একজন শিক্ষক সময় দেবেন ৩২ ঘণ্টা। 

কিন্তু কথা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবার কর্মঘন্টা কী? তারা কি অফিসিয়াল কাজ করে? তারা তো কারিগর; মানুষ তৈরির। এ কারিগরি কাজ তো কোনো সময় মেপে করা হয় না!

উদ্ভাবনী কারিগরি পেশার ক্ষেত্রে বাঁধাধরা সময় আসলে কতটা যুক্তিসঙ্গত? ডিজিটাল বাংলাদেশকে কেন ফিজিক্যালি বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে? "ডিজিটাল বাংলাদেশ" এর প্রবর্তক আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি।

আমার মতো অনেক মাকেই তাদের সন্তানকে বাসায় রেখে কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়। আমাদের দেশে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রচলন গড়ে ওঠেনি। যদিও এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। আমার মনে হয় এটার যথেষ্ট ভালো দিক আছে। পেশাজীবী মায়েদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র  বিশেষভাবে প্রয়োজন কারণ মাঝে মধ্যে নিরুপায় হয়ে যখন তাদের সন্তানকে সাথে আনতে হয় এবং সন্তান যদি একটা নির্ভরযোগ্য নিরাপদ পরিবেশ পায় এতে করে তাদের মানসিক চাপ অনেকাংশেই কমে যায় এবং কাজের প্রতি একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশ করতে পারে। যেমন কালকে আমার মেয়েকে কারো কাছে রেখে যাব এমন নির্ভরযোগ্য কেউ নাই। আমার মেয়েটা একটু অস্থির প্রকৃতির সবাই রাখতে পারে না।

তাই বলে শারীরিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে না গেলে যে আমার কাজ থেমে থাকবে তা কিন্তু নয় । কালকে আমি ২-৩ জন শিক্ষার্থীর সাথে একটা বিষয়ে কাউন্সিলিং করবো, একটা প্রজেক্ট গ্রুপের ফিডব্যাক নিবো সেটা হতে পারে স্কাইপে, হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপে, হতে পারে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে। আবার আমার একটা ইমেইল পাঠাতে হবে সেটাও কিন্তু শারীরিকভাবে না গেলেও করা যাবে। অন্যদিকে, আমাদের কালকে একটা মিটিং আছে কোন জরুরী পরিবেশে কেউ চাইলে কিন্তু ভার্চুয়ালীও মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে আবার অন্যদিকে ব্যবহারিক পরীক্ষা চলছে এখানেও কিন্তু ভার্চুয়ালি ভাইভা নেয়া সম্ভব।

যা হোক, এগুলো সবই বলছি কোন জরুরী বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ কিভাবে ওভারকাম করা যায় সে বিষয়ে। আমরা কেন সবসময় গতানুগতিক ধারায় চিন্তা করবো? তাই বলে আমি অবশ্য অনলাইন লার্নিংকে পুরোপুরি সমর্থন করি না।

এখন যদি প্রশাসন থেকে কেউ কোনো শিক্ষকের খোঁজ করে এবং না পায় তাহলে যদি কর্তৃপক্ষ ধরে নেয় যে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বা বিভাগের কার্যক্রম থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে তাহলে মনে হয় ভাবনাটা ভুল হবে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের শারীরিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকেই কাজ করেন  বা কাজ করতে হবে তা কিন্তু নয়। 

একজন শিক্ষককে গবেষণা করতে হয়, গবেষণা অদীক্ষা করতে হয়, ছাত্রছাত্রীদের খাতা মূল্যায়ন করতে হয়, ফলাফল তৈরি করতে হয়, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম এর জন্য যেতে হয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোলাবোরেটিভ গবেষণা থাকলে সেখানে যেতে হয়, জার্নাল নিবন্ধ লিখতে হয়, ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ে কাউন্সিলিং করতে হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদেরকে  বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে বিভাগের ভালো যোগাযোগ বা ব্রিজ তৈরি করার জন্য অনেক সময় অনেক জায়গায় যেতেও হয়।

তাহলে যদি একজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে তার বিভাগে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয় তাহলে এটা আসলে কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে সেটা মনে হয় সেটা আরো ভাববার প্রয়োজন রয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান উন্নয়নশীল ডিজিটাল দেশে।

কিছুদিন আগে আমি যুক্তরাজ্যের একজন অধ্যাপককে একটা বিষয়ে লিখেছিলাম। উনি অল্প দিনের মধ্যেই রিপ্লাই করেছিলেন। উনি লিখেছিলেন "I'm like working nomads now and will be unavailable for 15 days at workstation."

তার মানে আমরা কী ভাববো? উনি এই দিনগুলো উনার ব্যক্তিগত জীবন উপভোগ করবেন না পেশার কাজে ব্যস্ত থাকবেন? কী মনে হয়? হয়তো প্রথমটা ভাবছেন। ভাবাটাই স্বাভাবিক। ঘটনা কিন্তু তা নয়।  উনি উনার একটা গবেষণার কাজে ১৫ দিন কর্মক্ষেত্র থেকে বাইরে থাকবেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাজের প্রকৃতি এমনই হওয়া উচিত, তাই না? 

সে তো গবেষণার কাজে বাইরে থাকতে পারে, সে কোনো কোম্পানি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভাগীয় কোনো বিষয়ে সম্পর্ক উন্নয়ন করার জন্য বা অন্য কোন অর্গানাইজেশনের সাথে বিভাগের কোলাবোরেশনর ব্যাপারে কোথাও যেতে পারে। অনেক কিছুই হতে পারে। তাই আসলে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সবাইকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আটকে রেখে তাদের তাদের চিন্তাশক্তি, কর্মস্পৃহা নষ্ট করে দেয়া নাকি তাদেরকে একটু স্বাধীনতা দিয়ে, সুযোগ দিয়ে, তাদের দায়িত্ব বোধ বাড়ানোটা বুদ্ধিদীপ্ত কাজ হবে?

কলেজ জীবনের একটা গল্প  মনে পড়ে গেল। আমাদের এক বান্ধবীর অতি শিক্ষিত বাবা-মা তাদের মেয়েকে বাড়াবাড়ি রকমের নজরদারির মধ্যে রাখতো। সেটা অনেকটা একটা খাঁচার ভিতর পাখি রেখে সেই খাঁচা নিয়ে বেড়ানোর মতো। খাঁচার মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া। খাঁচার মধ্যে ঘোরাফেরা। খাঁচার মধ্যেই সবকিছু। এ যেন এক "খাঁচা জীবন"। 

যাই হোক, তারা হয়তো ভালো মনে করেই করেছিল যেন তাদের মেয়ে কোনোরকম কোন দিকে বিচ্যুত না হয়ে যায়, কোনো খারাপ কিছু যেন তাকে প্রভাবিত না করে, যেন বেশি প্রোডাক্টিভ হয় কিন্তু বেশি আটতে গেলে আসলে তা ঢিলা হয়ে যায় সেটা কিন্তু দৃশ্যমান, সবারই জানা। যাইহোক, পরিণতিতে যা হবার তাই হয়েছিল। খাঁচার পাখি ঠিকই খাঁচা ছেড়ে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে উড়ে গিয়েছিল বিস্তীর্ণ আকাশে। অন্যদিকে, যাদের খাঁচা বিহীন জীবন ছিল, মাথার উপর বিশাল আকাশ ছিল তারা কিন্তু নেতিবাচক কিছু করে নাই। দায়িত্ববোধটা তাদের মধ্যে জাগ্রত ছিল।

চারিদিকে আসলে বিশ্বাস, আস্থার বড্ড অভাব! কোনো পেশাকে, কোনো পেশার মানুষকে আমরা আদর্শ ভাবতে পারছি না। অন্যদিকে আদর্শ মানুষ বা আদর্শ পেশা গড়ে তোলার প্রকৃত সু্যোগও দিচ্ছি না বা পরিবেশও হচ্ছে না। আমাদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখা শিখতে হবে এবং সেই বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়াও শেখা প্রয়োজন। আস্থা, বিশ্বাসহীন জীবন ও কর্মক্ষেত্র উভয়ই দুর্বিষহ!

তাই পাখি খাঁচায় বন্দী করে নয় বরং উন্মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিয়ে তার পথ কিভাবে মসৃণ করা যায়, তার গতি কিভাবে বাড়ানো যায়, তার চিন্তাশক্তি  কিভাবে প্রসারিত করা যায়, বিকশিত করা যায়, তার পরিধি কিভাবে বাড়ানো যায়, তার সৌন্দর্য কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করা যায় এসব দিকে নিবিড় মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। 

পৃথিবীতে যখন work-life balance সমুন্নত রাখার জন্য বিকল্প খোঁজা হচ্ছে, কর্মদিবস কমিয়ে আনার কথা চিন্তা করা হচ্ছে সেখানে কিনা work-life balance ইমব্যালেন্স করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। পৃথিবীতে এমনও প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কোন দৃশ্যমান অফিস নাই। যে যার মতো যার যার অবস্থানে থেকে তাদের দৈনন্দিন অফিসের কার্যাবলী দক্ষতার সাথে সময়মত সম্পাদন করছে। আধুনিক উন্নত সময়ে শারীরিকভাবে সব জায়গায় কেন সব সময় উপস্থিত থাকতে হবে?  

বেশ কয়েক বছর যাবৎ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আইকিউএসি (ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল) তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি সকল বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও বেশ সুসংগঠিত হচ্ছে। এটি একটি দারুন নেটওয়ার্ক। অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিটি সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক একজন অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করছে। বিভাগের সাথে তাদের স্ব স্ব কর্ম প্রতিষ্ঠানের ব্রিজ তৈরি করছে যাতে করে বিভাগের অনুজেরা সহজে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। অ্যালামনাই দ্য বিউটি, দ্যা পাওয়ার। আসলেই তাই। 

নীতিমালা প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষের আসলে যে বিষয়টা বেশি করে ভাবার দরকার তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য আসলে কী কী করণীয়, কী কী দুর্বলতা আছে সেগুলো অনুসন্ধান করা।  বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রাজুয়েশন শেষে কিভাবে কর্মক্ষেত্রে তাদেরকে ভালো অবস্থানে আসীন করা সম্ভব এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা তা নিয়ে সূদূর প্রসারী পরিকল্পনা থাকা দরকার। এবং কর্মবাজারে কর্মসংস্থানের চাহিদা অনুযায়ী বিভাগগুলো ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত মান এবং সৌন্দর্য নির্ভর করে তাদের গ্রাজুয়েটদের অবস্থানের উপর। 

খসড়া নীতিমালায় যদি ব্যতিক্রম উদ্ভাবনী কিছু থাকতো তাহলে ভালো লাগতো। যেমন, অধ্যাপকদের ব্যক্তিগত গবেষণাগারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশীয় গবেষণা শিক্ষাবৃত্তি মোটাদাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকরণ, গবেষণা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণা অধীক্ষায় ব্যয়, এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অন্য বিশ্ববিদ্যালয় পাঠদানের সুযোগ, ইত্যাদি। 

আর একটি বিষয় একটু ভাবা দরকার। হয়তো বিষয়টি এই লেখার সাথে সংশ্লিষ্ট না তবুও একটু বলে রাখতে চাই। আমার মনে হয় সোশ্যাল ইম্প্যাক্টফুল গবেষণার ফলাফল শুধু জার্নালে তালাবদ্ধ না রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে নিয়মিতভাবে লে সামারি (লে সামারি হচ্ছে গবেষণালব্ধ ফলাফল সহজ সাবলীলভাবে সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশ করে যাতে তা সবার বোধগম্য হয়) আকারে প্রকাশিত হওয়া উচিত। পাশাপাশি এগুলো বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আলোচিত হওয়া প্রয়োজন যাতে করে সাধারণ মানুষ বিষয়গুলো জানতে পারে, বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী তাদের করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই ধরনের ভাবনা উপেক্ষা করে সবাই কেন যেন গোড়াতে ঘুরপাক খাচ্ছে। বড় মাথাব্যথার কারণ মনে হচ্ছে এসএসসি, এইচএসসির ফলাফল যা কিনা বিবেচনায় না নিলেও খুব একটা তারতম্য হবে না। এসএসসি এইচএসসির (যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন মিডিয়াম বিদ্যমান) ফলাফল যদি বাদ দেয়া যায় তাহলে কি শিক্ষকদের গুণগত মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কোন ঘাটতি থাকবে?

বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইও যেন বিষয়ভিত্তিকই হয় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, এবং অংক যেন বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নকে হালকা করে না দেয়। তবে যদি কারো আইইএলটিএস, টোফেল, জিআরই ইত্যাদি থাকে সেটাকে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। পাশাপাশি অন্য কোন একাডেমিক বা সংশ্লিষ্ট নন-একাডেমিক স্বীকৃতি বা পুরস্কারও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে, আমার মনে হয় বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক নিয়োগের পরিবর্তে যদি কেউ বাইরের কোনো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করে দেশে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায় তাহলে প্রয়োজনে শর্ত শিথিল করে হলেও তাকে স্বাগত জানানো বুদ্ধিদীপ্ত কাজ হবে। তাহলে এটি একটি টেকসই সমাধান হবে। উন্নয়নের জন্য টেকসই সমাধানের কোনো বিকল্প নাই। আরেকটি বিষয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়!!

যাইহোক, অনেক বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় একটু বেশিই আজব লাগছে! একদিকে স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা নিবন্ধের কথা বলা হচ্ছে আবার অন্যদিকে গবেষণাকে নিদারুণভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে! বিষয়টা মনে হচ্ছে "মস্তিষ্ক ছাড়া" বুদ্ধি বের করার মতো! নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করো নইলেই দণ্ড!

পৃথিবীর সব দেশের ভাষা যদি এক হয় তাহলে কেমন হবে? বৈচিত্র, ঐতিহ্য বা সৌন্দর্য সবই কি মলিন হবে না? বা সবাই যদি বলে সব ফলমূলের মধ্যে আমাদের সবারই আম পছন্দ বা সব সবজির মধ্যে আমাদের সবারই বাঁধাকপি পছন্দ তাহলে কেমন হবে? আহ ! প্রিয় প্রকৃতি! এমন যেন না হয় কখনো!

স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আসলে চলার পথকে সুসংহত করে, চলার পথের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং তার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য, সৌন্দর্য থাকে কিন্তু সেটাকে যদি ভেঙ্গেচুরে একই সাথে একই রং দিয়ে, একই গতিতে, একই দিকে, একইভাবে চালানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে দেখা যাবে মাঝপথে সবাই একসাথে হুড়োহুড়ি করে গতি শ্লথ করে দিবে, কাঙ্খিত লক্ষ্যে  সময় মত পৌঁছাতে পারবে না।

কিন্তু বিপরীতভাবে যদি পথ অনেক থাকে, একেকজনের গতি যদি একেকরকম হয়, একেকজনের লক্ষ্য যদি একেকরকম হয়, একেকজনের যানবাহন যদি একেকরকম হয়, তাহলে দেখা যাবে প্রত্যেকে যার যার যানবাহনের সৌন্দর্য বজায় রেখে, কৌশল বজায় রেখে, গতি বজায় রেখে, কোন রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই তাদের মতো করে আনন্দচিত্তে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে। সাদা রং এর একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে কিন্তু সেটা শুধুমাত্র আরো অন্যান্য অনেক রং আছে তাই। এভাবেই পৃথিবী চলছে। 

কিন্তু যদি প্রাথমিক  মাধ্যমিক, বা মহাবিদ্যালয়ের মত বিশ্ববিদ্যালয়কে একই ধরনের ফ্রেমে আবদ্ধ করে দেয়া হয় তাহলে উচ্চতর শিক্ষার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়কে আর "বিশ্ববিদ্যালয়" বলা যাবে না ! বিষয়টা কি এমন হতে যাচ্ছে? প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং উচ্চতর মহাবিদ্যালয়। ঊহ!! কী ভয়ংকর! কী অশুভ!

পরিশেষে, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। সুস্থ, সৃজনশীল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্বীয় মহিমায় উৎকর্ষিত হোক দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়।