কাশ্মীর: ধর্ম-নিরপেক্ষ সংবিধান ধ্বংসে বিজেপি

গৌতম রায়
Published : 7 August 2019, 02:05 PM
Updated : 7 August 2019, 02:05 PM

বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে বিজেপি ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের খোলনলচেবদলে দেওয়ার যে চক্রান্ত এতদিন ধরে করছিল, তা অবশেষে বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেকাশ্মীরকে প্রদত্ত সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারার এবং ৩৫-এ ধারার অবলুপ্ত করল।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে কাশ্মীর যে ধরনের সুযোগ পেয়ে এসেছে বা পরবর্তীকালেস্বাধীন ভারতবর্ষে যে ধরনের সুযোগ পেয়েছে, যেমন সুযোগের দৃষ্টান্ত ফরাসি সাম্রাজ্যেআলজেরিয়ার ক্ষেত্রে আছে- সেখান থেকে সম্পূর্ণ সরে এসেছে দ্বিতীয় দফার নরেন্দ্র মোদিসরকার।

কাশ্মীর সম্পর্কে মোদি সরকার যে সিদ্ধান্ত নিলো তা একদিকে যেমন কাশ্মীরের সাধারণমানুষকে ভারতবর্ষের মূলস্রোত থেকে বিভাজিত করার ক্ষেত্রে প্ররোচিত করবে,  তেমনি গোটা দেশের মুসলমান সমাজের ভেতরেও একটা গভীরপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।

গোটা প্রক্রিয়াটাই আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি যে বিভাজনের রাজনীতিকরতে চায়,  সেই বিভাজনের রাজনীতিকেই আরো সুযোগকরে দেবে।  চরম রাজনৈতিক হিন্দু সাম্প্রদায়িক,মৌলবাদী ভাবনার উপর ভর করে আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি আজ দুই তৃতীয়াংশেরও বেশিসংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক ধারারসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর এবং ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্করয়েছে।

ভারতের একমাত্র মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য হিসেবে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যটিকে রাজনৈতিক  হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি বরাবরই তাদের ফ্রন্টলাইনহিসেবে দেখে এসেছে। কাশ্মীর নিয়ে যেকোনও আলোচনাতেই তারা শরৎচন্দ্রের গরুর রচনার  মতো ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলালের রাজনৈতিকঅদূরদর্শিতা এবং তার দল জাতীয় কংগ্রেসের মুসলিম তোষণের রাজনীতির কথা বলে থাকে। কংগ্রেসেরপাশাপাশি একইভাবে মুসলিম তোষণের তথাকথিত অভিযোগে তারা ভারতবর্ষের বামপন্থী রাজনীতিরলোকেদের,  বিশেষ করে কমিউনিস্টদের- অভিযুক্তকরে থাকে।

সংঘ পরিবার দাবি করে যে, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক তথা তাদেরপ্রথম যুগের রাজনৈতিক সংগঠন জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি নাকি এই ৩৭০ধারা বিলোপের দাবিতেই কাশ্মীরের জেল হেফাজতে প্রাণ দিয়েছিলেন!‍

গত ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি যখন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে,তখন থেকেই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকরা, আরএসএস, তথা গোটা হিন্দুত্ববাদী শিবিরের একান্তনিজস্ব কর্মসূচি সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ও ৩৫-এ ধারা অবলুপ্তির দাবিকে উগ্রতা দিতে শুরুকরে।

২০১৪ সালে হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা প্রভাবিত একটি তথাকথিত সমাজসেবী সংগঠন 'উই দ্যসিটিজেন্স' সংবিধানের ৩৫-এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি জনস্বার্থে মামলাদায়ের করে দেশের সুপ্রিম কোর্টে। সেই সময় জম্মু-কাশ্মীরে ক্ষমতাসীন পিডিপি সরকার,তাদের জোটসঙ্গী বিজেপির আপত্তি অগ্রাহ্য করে ও সেই মামলার তীব্র বিরোধিতা করেছিল।

২০১৭ সালের জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে আইনজীবী কে কে বেনুগোপাল সংশ্লিষ্টবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট অভিমত জানাতে অস্বীকার করেন ।তিনি বৃহত্তর বিতর্কেরপ্রয়োজনীয়তার কথা সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন। বেনু গোপালের সুপারিশ অনুযায়ীমামলাটি সেই সময় প্রধান বিচারপতি জে এস খে হার এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়েরএজলাস থেকে স্থানান্তরিত হয়েছিল তিন সদস্যের বেঞ্চে কাছে ।

এই শুনানিটিও এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি প্রভাবিত জম্মু কেন্দ্রিক'ওয়েস্ট পাকিস্তান রিফিউজিস অ্যাকশন কমিটি' সংবিধানের ৩৫ এ ধারাটি রোধের দাবি জানিয়েছিল।২০১৭  সালে আইনজীবী চারু ওয়ালি খান্না ৩৫-এআইনে কাশ্মীরের মহিলাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে এবং সেটি ভারতীয় সংবিধানের১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী বলে আর একটি পৃথক আবেদন করেন।

এই সময়ে একই দাবি নিয়ে আরো দুটি আবেদন করেছিলেন কালি দাস ও রাধিকা গিল। মূল আবেদনেরবিরোধিতা করে ন্যাশনাল কনফারেন্স, সিপিআই (এম) এবং পিডিপি আদালতে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেতাদের অভিমত জমা দিয়েছিলেন। চলতি বছরে সবকটি আবেদনের শুনানি শুরু করার কথা ঘোষণা করেছিলেনপ্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাকেনিয়ে গঠিত তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ।

এরপর পুলওয়ামা কাণ্ড, লোকসভা নির্বাচন ইত্যাদির কারণে এই শুনানি হওয়া সম্ভব নাহলেও খুব শিগগিরই যে এই শুনানি শুরু হবে সেই সম্ভাবনা স্পষ্ট ছিল। এইরকম একটি প্রেক্ষিতে,কার্যত জরুরি অবস্থার সময়কালে যেভাবে ইন্দিরা গান্ধী মধ্যরাত্রে তৎকালীন রাষ্ট্রপতিভি ভি গিরি কে দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন, সেই রকমই সংসদ চলাকালীন, কার্যত সংসদকেএড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করিয়ে, পরে সেটিকে লোকসভায় ঘোষণা করলেনস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়কালে কাশ্মীরের হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সাধারণ মানুষেরসম্মিলিত দাবির প্রেক্ষিতে কাশ্মীরের হিন্দু রাজা হরি সিংয়ের যাবতীয় কুচক্রী ভাবনাকেহেলায় অস্বীকার করে সে রাজ্যটির মানুষদের ঐকান্তিক চেষ্টাতে ভারতভুক্তির ভেতর দিয়েযে সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ রচিত হয়েছিল, সেই পরিবেশটিকে নষ্ট করবার ক্ষেত্রে নরেন্দ্রমোদি সরকারের সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-এ  ধারা অবলুপ্তিকরার সিদ্ধান্ত একটি বড় ভূমিকা পালন করবে ।

ক্ষমতা হস্তান্তরের কালে দেশের অন্যান্য দেশীয় রাজ্যগুলির প্রশাসনিক বন্দোবস্তবিষয়ক যে আইন ছিল তার ২৩৮ নং ধারা থেকে জম্মু কাশ্মীর কে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।ফলে জম্মু-কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান তৈরির ক্ষেত্রে কোনও বাধা ছিল না। জম্মু কাশ্মীরেভারতীয় সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হলেও ভারতভুক্তি দলিলে উল্লেখিত বিষয়গুলিছিল ।

জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সংসদের আইন প্রয়োগের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করা হয়। ভারতভুক্তিদলিলে উল্লেখিত যে সমস্ত বিষয়গুলি ছিল তার ভেতরে দেশের রাষ্ট্রপতি একটি সাংবিধানিকনির্দেশের  মধ্যে দিয়ে এই বিষয়ে যাবতীয় আইনজম্মু-কাশ্মীরে জারি করতে পারবেন রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে- এই কথা স্পষ্টভাবেবলা হয়েছিল।

তবে অন্যান্য বিষয়ে আইনের  ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিরসাংবিধানিক নির্দেশ ছাড়াও লাগবে জম্মু-কাশ্মীরের সরকারের সম্মতি। তাছাড়াও জম্মু কাশ্মীরেরভারতভুক্তি সংক্রান্ত চুক্তি ১ ডি  উপধারাতেবলা হয়েছিল- সংবিধানের কোনও কোনও অংশ জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে,অথবা কিছুটা অদল বদলের আকারে প্রযোজ্য হতে পারে। তবে সেটা রাষ্ট্রপতিকে একটি সাংবিধানিকনির্দেশের মাধ্যমে ঘোষণা করতে হবে সে কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল।

এখানে খুব পরিষ্কারভাবে বলা দরকার যে, ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরে ৩৭০ নম্বর ধারায়যে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল সেটি যখন প্রস্তাবিত হয় এবং গৃহীত হয়, তখন ভারতেরকেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন সর্দার প্যাটেলের মতোই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

মজার কথা হল শ্যামাপ্রসাদ কিন্তু একটি বারের জন্যও এই ৩৭০ নম্বর ধারার প্রস্তাবএবং সেটি গৃহীত হওয়ার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের কথা কল্পনাকরেন নি। বরঞ্চ ৩৭০ নম্বর ধারা নিয়ে শ্যামাপ্রসাদের অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেজম্মু-কাশ্মীর গণপরিষদের এক ভাষণে শেখ আব্দুল্লাহ যখন বক্তব্য দেন, হিন্দুত্ববাদিদেরপক্ষ থেকে তার বিরোধিতা করে একটি শব্দ উচ্চারিত হয়নি।

নেহরু – শেখ আব্দুল্লাহ চুক্তির যে বিষয়গুলিকে ঘিরে হিন্দুত্ববাদিরা এই দুই জাতীয়নেতার সমালোচনা করে ৩৭০ নম্বর ধারা ও ৩৫-এ ধারার অবলুপ্তির দাবি জানিয়ে আসছিল এবংঅবশেষে আজকে তার অবলুপ্তি ঘটালো, তারা কিন্তু একটিবারও এ কথা বলেননি যে, ওই চুক্তিতেঅত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে সুরক্ষা বিদেশনীতি ও যোগাযোগব্যবস্থা এই তিনটি বিষয় ছাড়া অন্যান্যসব বিষয়ে কাশ্মীরের আইনসভার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি সেই চুক্তিতে আছে।

সেই চুক্তিতে পরিষ্কারভাবে বলা ছিল যে, ভবিষ্যতে কাশ্মীরের আইনসভা কোন কোন বিষয়েআইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা ভারতীয় সংসদের হাতে তুলে দিতে পারে। তাছাড়া ভারতীয় সংবিধানেরকেন্দ্র রাজ্য ও সংযুক্ত তালিকায় উল্লেখিত বিষয়গুলির বাইরে নতুন বিষয়ে আইন তৈরিকরার ক্ষমতা কাশ্মীরের আইনসভাকে দেওয়া হয়েছিল।

ওই চুক্তিতে জম্মু-কাশ্মীরের ডোগরা বংশানুক্রমিক শাসন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করারকথা ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার ক্ষেত্রে এই ডোগরা শাসকদের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদিদেরএকটি বিশেষ রকমের আদর্শগত এবং শ্রেণিগত সখ্যতা আছে ।

সংশ্লিষ্ট চুক্তিতে পরিষ্কার বলা হয়েছিল সদর-ই-রিয়াসাত নির্বাচন করবেন কাশ্মীরেরআইনসভা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এবং তিনি ভারতীয় রাষ্ট্রপতি দ্বারা স্বীকৃত হবেন।

ওই চুক্তিতে খুব পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা ভারতবর্ষেরনাগরিক হিসেবে স্বীকৃত হবেন। আর জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার হাতে রাজ্যে স্থায়ী বাসিন্দাদেরবিশেষ অধিকার ও সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত আইন পাশ করবার ক্ষমতা থাকবে। ভারতবর্ষের সংবিধানেরস্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলি কাশ্মীরের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে বলবৎ থাকবে। তবে সম্পত্তিরঅধিকার সংক্রান্ত মৌলিক অধিকার ভূমি সংস্কারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না একথানেহেরু-আব্দুল্লাহ চুক্তিতে খুব পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছিল ।

ভারতের রাষ্ট্রপতির আপদকালীন পরিস্থিতি ঘোষণা করার ক্ষমতা কাশ্মীরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যহবে, কিন্তু আভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য আপদকালীন পরিস্থিতি ঘোষণা করতে হলে জম্মু কাশ্মীররাজ্য সরকারের সম্মতি লাগবে- এ কথা খুব পরিষ্কার করে সেই চুক্তিতে বলা হয়েছিল।

দেশের অন্যান্য অংশের সাথে জম্মু-কাশ্মীরের মামলা-মোকদ্দমা চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকরার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে সে কথা চুক্তিতে বলা হয়েছিল। কাশ্মীরের ক্ষেত্রেমৌলিক অধিকার বিষয়ক মামলাগুলির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের এই অধিকারের স্বীকৃতি সেখানেদেওয়া হয়েছিল।

কাশ্মীরের অর্থনৈতিক সম্পর্কের খুঁটিনাটি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও আলাপ-আলোচনার সংস্থানসেই চুক্তিতে রাখা হয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের আইন সভার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল রাজ্যেস্থায়ী বাসিন্দা কারা হবেন তা নির্ধারণের ক্ষমতা। সরকারি চাকরি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি বিষয়ে স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ অধিকার এবং সুযোগ সুবিধারবিষয়টিও সেই রাজ্যের আইনসভার হাতেই ন্যস্ত ছিল।

 ৩৭০ নম্বর ধারার ১-ডি উপধারাতে জম্মু-কাশ্মীরেভারতবর্ষের সংবিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে সমস্ত সম্ভাবনা এবং আধুনিকতার কথা বলা হয়েছে,৩৫-এ ধারাতেঠিক তা-ই ছিল- সেটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। 

আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে কাশ্মীরের রাজনীতিতেবেশকিছু অদল বদল ঘটে। ১৯৫৩  সালে শ্রীনগরে একাধিকসভায় শের-ই-কাশ্মীর শেখ আব্দুল্লাহ দিল্লি চুক্তি নিয়ে তার অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন।সেই বছরের অগাস্ট মাসে শেখ আব্দুল্লাহকে বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার কোনো রকম সুযোগনা দিয়েই সে রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন তৎকালীন কাশ্মীরের  তৎকালীন সদর-ই-রিয়াসত করন সিং, যিনি ছিলেন কংগ্রেসেরএকদম পকেটের লোক।

রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কুখ্যাত কাশ্মীর ষড়যন্ত্র মামলায় ১৮ বছরতিনি কারারুদ্ধ অবস্থায় থাকেন। এই গোটা ঘটনাটি ঘটানোর পেছনে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন তৎকালীনকংগ্রেস দল একটি বড় রকম ভূমিকা পালন করেছিল।

এই ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে কংগ্রেস দল সেই সময় শেখ আব্দুল্লাহের  সহযোগী বকশি গোলাম মোহাম্মদ-কে কার্যত নিজেদের এজেন্টহিসেবে ব্যবহার করে কাশ্মীরের সংগ্রামী মানুষদের আবেগ, গোটা ভারতবর্ষের প্রতি তাদেরভালোবাসা , ভারতবর্ষের জাতীয় সংগ্রামে তাদের ঐতিহাসিক অবদানকে নিছক দলীয় স্বার্থেঅস্বীকার করে কাশ্মীরের গোটা পরিস্থিতিকে জটিল থেকে জটিলতর হতে দিতে সাহায্য করেছিল।