Published : 28 May 2013, 01:48 AM
বাংলাদেশে নারীসমাজের প্রাপ্য ন্যায্য জন্মগত অধিকার, নারী-পুরুষের সমঅধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীনির্যাতন প্রতিরোধ প্রভৃতি বিষয়গুলো বহুল আলোচিত। নারীসমাজ নানা সংগঠনে বিভক্ত থাকলেও পৃথক পৃথকভাবে, কখনও কখনও ঐক্যবদ্ধভাবে ওই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামাল প্রমুখ পূজনীয় নারীনেত্রীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে একাত্তরে আত্মদানকারী খ্যাতনামা মহিলাদের এবং তাদের রেখে যাওয়া সুমহান সংগ্রামগুলো পরিচালনা করে আসছেন এবং সে আন্দোলনসমূহ আজও অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল, আরও কতিপয় নারী সংগঠন, কিছুসংখ্যক এনজিও এ আন্দোলনগুলো পরিচালনা করছেন।
এসব আন্দোলন বৃথা যায়নি। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় যখন দেখি, যখন অতীতের সুখ-দুঃখময় নানান স্মৃতি রোমন্থন করি- তখন দেখি আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে আমাদের নারীসমাজ কী অবস্থায় ছিলেন এবং আজ ৫০ বছর পর তারা কী অবস্থায় পৌঁছেছেন- তা হলেই স্পষ্ট উপলব্ধি করা যাবে নারীআন্দোলনের অগ্রগতির মাত্রা কতটা।
আমি পঞ্চাশের দশকে যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে তখন ইন্টারমিডিয়েট আর্টসে মাত্র পেয়েছিলাম ছয়জন মহিলা সহপাঠীকে। শিক্ষকরা সঙ্গে করে আনতেন আবার ক্লাসশেষে সঙ্গে করেই তাদের নিয়ে যেতেন মহিলাদের কমনরুমে। ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের বা মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের কথা বলা অলিখিতভাবে হলেও নিষিদ্ধ ছিল। শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে খুব অল্পসময় কোনো নির্দিষ্ট ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলা যেত।
ডিগ্রি ক্লাসে উঠে আরও কম ছাত্রী সহপাঠী পেলাম। গোটা এডওয়ার্ড কলেজে তখন আইএ, আইএসসি, আইকম, বিএ, বিএসসি ও বিকম প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ মিলে সাকুল্যে ৫০ জন স্টুডেন্টও ছিল না। অথচ সমগ্র পাবনা জেলায় কলেজ ছিল তখন ওই একটিই।
আজ সেখানে অনেকগুলো কলেজ শহরে। নতুন নতুন সরকারি-বেসরকারি কলেজ হয়েছে। উপজেলা শহরগুলোতও একাধিক কলেজ, মহিলা কলেজ হয়েছে। হয়েছে অনেক বড় বড় গ্রামেও।
কিন্তু কী আশ্চর্য। ছাত্রীর অভাব কোথাও নেই। অনেক কলেজেই অর্ধেকের বেশিসংখ্যক ছাত্রী লেখাপড়া করছে বলে শুনি। শুনি আর অভিভূত হই। আর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে এখন প্রায় ১৫-১৬ হাজার ছাত্রছাত্রী- যার মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেকই ছাত্রী। এক বিপুল জাগরণ নিঃসন্দেহে।
তবে অন্য একটি বিষয়ও লক্ষ্য করার মতো। তখন শতকরা পাঁচজন ছাত্রীকেও বোরকা পরতে দেখিনি যখন আমরা লেখাপড়া করেছি কলেজে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে। ইসলামী জঙ্গী বজায় ছিল সমাজে পুরোমাত্রায়। কিন্তু সমাজে তার প্রতিফলন তেমন একটা ছিল না।
বস্তুত এডওয়ার্ড কলেজে তখন, আমার ছাত্রত্বের মেয়াদকালে কোনো মেয়েকেই বোরকা পরে কলেজে আসতে দেখিনি। অথচ ছাত্রীরা প্রায় সবাই মুসলিম। না শিক্ষকেরা, না তাদের অভিভাবকেরা, মেয়েদের বোরকা পরতে উৎসাহিত করতেন। আর আজ? আজ কলেজে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ছাত্রীকে দেখি বোরকা পরতে- যদিও পাকিস্তান নেই- তৎকালীন সেই ইসলামী জঙ্গীও নেই।
আবার এ-ও দেখি বিকেলে কলেজ মাঠে বোরকা পরে আসা অনেক মেয়ে বোরকাটি খুলে রেখে দিব্যি ছেলেবন্ধুদের সঙ্গে গল্পসল্প, হাসিতামাশা করছে অনেক নিবিড়ভাবে বসে।
যাহোক, বিষয়টি ভাববার। কেন এমন হচ্ছে, আমরা এ একবিংশ শতাব্দীতে এসে, দিনে দিনে লেখাপড়া যেমন বেশি বেশি করে করছি, তেমনই আবার আধুনিক না হয়ে কি সেকেলে পশ্চাৎপদ সমাজের অভিযাত্রী হচ্ছি ভাববার ক্ষেত্রে তা আদৌ উপেক্ষনীয় কোনো বিষয় নয়।
সমাজটাকেও অবশ্য এ বিষয়ে আরও কিছুটা তলিয়ে দেখতে হবে বিষয়টি যথার্থভাবে তুলে ধরতে হলে। আজ যখন আমরা শিক্ষার প্রসারের কথা বলছি তখন হয়তো অনেকেই একটা আত্মতৃপ্তিতেও ভুগছি। কিন্তু ভেবে দেখছি কি শিক্ষার প্রসার হচ্ছে, কেমন মানের শিক্ষা ছেলেমেয়েরা পাচ্ছে এবং সে শিক্ষা যুগ ও সমাজের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা।
যদি সেদিনকার সমাজের সঙ্গে আমরা আমাদের বর্তমান বাংলার সমাজটাকে মিলিয়ে দেখি তবে দেখব, যে পরিমাণ ইসলাম জঙ্গী সমাজটাকে তখন আলোড়িত করেছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই তার অনেকটাই ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসতে থাকে। তার প্রতিফলন দেখি সেকালের ছাত্রীদের পোশাকে। পোশাক অত্যন্ত মার্জিত কিন্তু সম্পূর্ণ বোরকাবিহীন। তখন কাঠমোল্লাদের এমন প্রভাব ছিল না- এত মসজিদ ছিল না- এত বিপুলসংখ্যক মাদ্রাসাও ছিল না।
এগুলো সবই মূলত সামরিক শাসনামল অর্থাৎ আইয়ূবী আমলে শুরু হয়ে স্বাধীনতাত্তোর যুগে ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটে। কিন্তু কেন তা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
আমি আগেই শিক্ষার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছি। তখন মাদ্রাসাশিক্ষায় যেমন এত ব্যাপক প্রসার ঘটেনি বা কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ক্যাডেট কলেজ প্রভৃতির মাধ্যমে বিত্তশালীদের সন্তানদের ইংরেজির মাধ্যমে শিক্ষারও প্রচলন ঘটেনি। গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই ছিল সাধারণ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়নির্ভর। বলা যায় যে এককেন্দ্রিক বৈষম্যহীন শিক্ষার প্রচলনের দাবি এখন আমরা তুলছি, তখন তা সমাজে প্রচলিত ছিল।
ফলে ধর্মের নামে কোমলমতি ছেলেমেয়েদের বিভ্রান্ত করার লোক সমাজে কমই ছিল, অনাসৃষ্টিও ছিল সে কারণে কম। ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল যেমন মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী প্রভৃতি ক্রমশই প্রভাব হারিয়ে ফেলছিল ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে। নতুন করে কোনো ধর্মাশ্রয়ী দল বা সংগঠন গড়ে ওঠাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ওই একই কারণে। আরবি-ঊর্দুতে সংবাদপত্রের নাম রাখাও বন্ধ হয়ে যায় ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে। নানা প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি- আরবি-ঊর্দুতে লেখা সাইনবোর্ডগুলোও বদলে যায় এবং তার জায়গা দখন করে নেয় বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠান ও দোকানের নাম ও তাদের সাইনবোর্ড।
শিক্ষার মান? আমরা আজ বিস্মিত হই যখন দেখি যেমন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মক্তব-মাদ্রাসার সংখ্যা ও ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা যেমন বিপুলভাবে বেড়েছে, তেমনই আবার পাসের হারও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। সংবাদপত্রগুলো এবার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে গিয়ে শিরোনাম করেছে, 'পাসের হারে রেকর্ড করেছে শিক্ষার্থীরা'।
শিরোনামটি যেমন পাসের হারের প্রকৃত চিত্রই ফুটিয়ে তোলে, তেমনি আবার এমন শিরোনামও তো হতে পারত, 'ফেলের হারের বিস্ময়কর অবনতি'। দিনে দিনে ফেল করাটা অতীতের ব্যাপারে পরিণত হচ্ছে। তাই এ শিরোনামও সত্যের পরিচয়ই বহন করত। এত বেশি পাস অনেক আনন্দের ব্যাপারই তো হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে কি শিক্ষা আজ মানসম্মত?
আমাদের সময়কালে এসএসসি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ ভাগ, এইচএসসি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ এবং ডিগ্রিতেও ২৪ থেকে ৩০ ভাগের বেশি কোনো বছরেই পাশ করতে পারত না। কিন্তু শিক্ষার মান ছিল আজকের তুলনায় অনেক উঁচুতে। প্রথম বিভাগে পাশ করত এতই কম যে কোনো স্কুল থেকে ৮০ জনের মধ্যে যদি ৫ জন প্রথম বিভাগে পাশ করত সে স্কুল উন্নতমানের বলে পরিচিত পেত। দ্বিতীয় বিভাগ পেত তার চেয়ে কিছু বেশি। তৃতীয় বিভাগে সর্বাধিক।
সে ক্ষেত্রে আজ? ফেল তো করাই যায় না- লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে জিপিএ-৫, গোল্ডেন জিপিএ প্রভৃতি অর্জন করছে। কিন্তু ভালো কলেজে ভর্তিপরীক্ষা দিতে গিয়ে পাস করতে তারাও ব্যাপক হারে ব্যর্থ হয়। এর কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সরকার ও সংশ্লিষ্টরা দ্রুত অনুসন্ধান করুন। কোচিং স্কুল, কোচিং সেন্টার প্রভৃতির নামই তো আমরা সেকালে শুনিনি। তবু নিঃসন্দেহে দাবি করতে পারি তখনকার শিক্ষার মান ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক উঁচু। তবে কি আমরা সংখ্যার পেছনে ছুটে তৃপ্তি অর্জন করতে চাচ্ছি মান উপক্ষো করে?
একালে অত্যাধিক ভালো ছাত্রছাত্রীরা পড়ছে কিন্ডাগার্টেনে বা ক্যাডেট স্কুল-কলেজগুলোতে। এদের মোট সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু এরা বিত্তশালীদের সন্তান- তাই উচ্চহারে শিক্ষার ব্যয়ভার তারা বইতে পারেন। এ ছেলেমেয়েরা পাশ করেই উচ্চমানের সরকারি-বেসরকারি চাকরি পেয়ে যাচ্ছে, দ্রুত বিদেশেও পাড়ি জমাচ্ছে। মধ্যম আয়ের অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের পড়ান সাধারণ বাংলা স্কুল বা কলেজগুলোতে।
আর সর্বাধিক দরিদ্ররা যাদের সংখ্যা সর্বোচ্চ তাদের সন্তানদের পাঠায় মাদ্রাসাগুলোতে যেখানে লেখাপড়ার পাঠ্যসূচীতে বিজ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা বা কোনো আধুনিক বিষয় স্থান পায় না। ধর্মের নামে ওই লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে জঙ্গীবাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরাই বড় হয়ে মেয়েদের ঘরে আটকে রাখে, বোরকায় আবৃত করে তাদের যা নারীর শিক্ষাদীক্ষা, আধুনিক জীবনযাপনে ভয়াবহ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
ওই মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকরাও তাই মসজিদে মসজিদে এমামতি, মিলাদ পড়ানো, জানাযা পড়ানোসহ সমাজে আলেম বলে পরিচয় দিয়ে ফতোয়াবাজি করতে পারঙ্গম হন- ফতোয়া দেন মেয়েদের বিরুদ্ধে- তাদের দোররা মারা- মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বা বিপুল অংকের জরিমানা জোর করে আদায় করে অন্য মাতবরদের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারা করে খাওয়ার ব্যাপারে প্রচণ্ড উৎসাহী।
এদের পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াতে ইসলামী নামক ধর্মব্যবসায়ী দেশদ্রোহী দল, হেফাজতে ইসলাম নামক জঙ্গীবাদী সংগঠন গড়ে উঠে নারীসমাজকে কোণঠাসা করে ফেলতে উদ্যত ফনা তুলেছে। ওরা একটা সমাজের জন্য সাপ-বাঘের চেয়েও ভয়াবহ, এরা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে বিশ্বাস প্রতিবন্ধকে পরিণত হয়েছে। বড় দলগুলো তাদের দুধকলা দিয়ে পুষতে থাকায় তারা একসময় এভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
এমন একটা প্রবলভাবে বৈরী সামাজিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নারীর অগ্রগতি আর কত বেশিই-বা হওয়া সম্ভব? অর্থনীতির ক্ষেত্রেও তাদের আমরা পুরুষেরা চেয়ে বহুল পরিমাণে পশ্চাৎপদ করে রেখেছি। পিতা বা স্বামীর মৃত্যুর পর তাদের সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নেই, থাকলেও তা নামকাওয়াস্তে। চাকরি-বাকরিতে সরকার নির্ধারিত কোটাও সরকারই করে চলেছে। যৌতুক প্রথা বেআইনি করেও তাকে ভিন্নপথে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ক্রীড়াঙ্গনে পারদর্শিতা দেখানো সত্ত্বেও নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণে দৃশ্য-অদৃশ্য নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। নাচে-গানে-অভিনয়ে সর্বত্র যেন তাদের দরজা বন্ধ।
নিরাপদ শুধু একটি ক্ষেত্র, আর তা হল ব্যাপকহারে সন্তান উৎপাদন ও ক্ষীণ স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া- ব্যাপকভাবে অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভোগা।
রাষ্ট্রত্ত নারী সমাজের প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠ নয়। আমাদের সংবিধানে নারী পুরুষের সমঅধিকার স্বীকৃত, লিঙ্গজনিত কারণে কারও প্রতি সামান্য বৈষম্যও সংবিধানবিরোধী বলে ঘোষিত। কিন্তু এ সংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে অস্বীকার করে আমাদের রাষ্ট্রনায়কেরা সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ তে উন্নীত করছেন না- সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার নারীসমাজের যৌক্তিক দাবিও অস্বীকৃত।
সকল আন্তর্জাতিক ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অস্বীকার করে নারীর উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত আইন আজও সংশোধিত হচ্ছে না।
এতগুলো প্রতিবন্ধকতার পর্বতসম বাধা অতিক্রম করে তবুও আমাদের নারীসমাজ যথেষ্ট এগিয়েছে- নারীঅধিকার বেশ কিছুটা আদায় করে নিতে পেরেছেন। নারীআন্দোলনকে অবশ্যই সে কৃতিত্ব দিতে হবে। এগুলো কারও দয়ার দান নয়। আজ হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, নিম্ন আদালতসমূহে বেশ কিছুসংখ্যক নারী। শিক্ষা বিভাগ তাদের সবর উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। অপরাপর কর্মস্থলেও তারা ক্রমাম্বয়ে স্থান দখল করে নিচ্ছেন। আমাদের পোশাকশিল্প তো সামগ্রিক অর্থে নারীর উপর নির্ভরশীল। কৃষিতে তাদের বিচরণ আজও অপ্রধান্য। অর্থাৎ আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদান রীতিমতো উল্লেখযোগ্য।
প্রধানমন্ত্রীর পদ, স্পিকার, কৃষিমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী ইত্যাদি পদ দখলে, বিরোধী দলীয় নেতার গৌবরজনক পদাঙ্গ আজ আড়াই বা তিন দশক যাবত তারা অধিকার করে আছেন। এগুলো তাৎপর্যমণ্ডিত ও গৌরবদীপ্ত ঘটনা। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে একথাও সত্য নারীঅধিকারের যে অংশ আজও অস্বীকৃতে তা-ও আবার তাদের তরফ থেকেই প্রধানত পরিলিক্ষিত হচ্ছে। বাধাগুলো অপসারণে তারা যে সচেষ্ট নন তা-ও বলে দেওয়া যায়। তদুপরি নারীর 'জানি দুশমন' জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামকে তারাই তো জেনেশুনে দুধকলা দিয়ে পুষছেন।
এতদসত্ত্বেও নারীসমাজ অধিকার প্রতিষ্ঠার ঐক্যবদ্ধ। তাদের পরিপূর্ণ বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।
রণেশ মৈত্র : লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।